‘ক্রিকেটকে ধ্বংস করছে আইপিএল’

ভারতের টিভি চ্যানেলগুলোতে কয়েক মুহূর্ত চোখ রাখলেই ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) বিজ্ঞাপন চোখে পড়াটা একরকম নিশ্চিত। ‘ভারতের উৎসব’ বলে আইপিএলকে চালিয়ে দিতে চলছে ধুন্ধুমার প্রচারণা। ঝাঁ চকচকে সব বিজ্ঞাপন, মাঠে এবং মাঠের বাইরে রুপালি পর্দার তারকাদের ঝলমলে উপস্থিতি। আইপিএলে ক্রিকেট আর গ্ল্যামার যেন মিলেমিশে একাকার। এর সঙ্গে আছে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার ঝনঝনানি-বৈধ এবং অবৈধ পথেও!

তবে অনেক ক্রিকেট শুভাকাঙ্ক্ষীর কাছে আইপিএল চোখের বিষ। আইপিএল যতটা না ক্রিকেটের উন্নতি করছে, তার চেয়ে ঢের বেশি ক্ষতি করছে। সম্প্রতি কলকাতার পত্রিকা আনন্দবাজারের আইপিএলকে সমালোচনার চাবুকে রীতিমতো ধুয়ে দিয়েছেন কীর্তি আজাদ। ভারতের ১৯৮৩ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য যা বলেছেন, তার সারমর্ম আইপিএল ক্রিকেটকে ধ্বংস করছে।

অকপটে তিনি স্বীকার করেছেন যে ক্রিকেটের এই সংক্ষিপ্ত সংস্করণটি তিনি খুব ভালো মতো বোঝেন না। বোঝেন না বলতে, আইপিএল নিয়ে দারুণ বিভ্রান্ত তিনি। বলেছেন, ‘জীবনে যাদের মদ ছুঁতে দেখিনি, তাঁরাও পান করেন এখানে। চিয়ার গার্লরা ক্রমাগত নেচে যায়। ব্যাটসম্যানরা তাদের সুপার ব্যাটের শাসনে বলকে বেদম পেটায়। আর কাঁধ ঝুঁকে পড়া বোলার ক্লান্ত শরীরটাকে কষ্ট করে টেনে বোলিং লাইন আপে নিয়ে যান পরের ডেলিভারিতে আরও মার খাওয়ার প্রস্তুতিতে।’

বলেছেন ‘আইপিএলের কোচ আর ক্যাপ্টেনরা আপাতদৃষ্টিতে উদ্ভাবনী শক্তি খরচ করে সেই সব অসাধারণ স্ট্র্যাটেজি তৈরি করেন যা দিয়ে ম্যাচ হারা যায়। কারণ এই টুর্নামেন্টে জয়ের চেয়েও হারটা বেশি মূল্যবান!’

কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে খেলোয়াড়দের কেনা-বেচার প্রক্রিয়াটাকেও তিনি বললেন ‘অযৌক্তিক’। উদাহরণ টানলেন দীনেশ কার্তিকের। কী জাদু আছে এই খেলোয়াড়ের যে পর পর দুটো আসরে দশ কোটিরও বেশি রুপির বিনিময়ে দলবদল করলেন ? আইপিএলে ১০৬ ম্যাচে ফিফটি মোটে ৯টি, রান ২০৬৬, গড় ২৪। টি-টোয়েন্টির ফরম্যাটে ২৪-গড়ের একজন ব্যাটসম্যান কেন এরকম ‘হটকেক’ হয়ে উঠলেন তা বোধগম্য হয়নি অনেকেরই। ২০১৪-র নিলামে কার্তিককে সাড়ে বারো কোটিতে কিনেছিল দিল্লি। এবার বেঙ্গালুরু সাড়ে দশ কোটি খরচ করেছে।

আজাদের কলমে উঠে এসেছে ‘ফিক্সিং’ প্রসঙ্গ। ম্যাচ গড়াপেটায় সবচেয়ে বেশি জড়িত ছিল রাজস্থান। সেই দলে রাহুল দ্রাবিড়ের মতো ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা একজন ব্যাটসম্যান থাকার পরও এত কিছু ঘটে গেল, অথচ দ্রাবিড় নাকি কিছুই টের পাননি। কীর্তি ব্যঙ্গ করে বলেছেন, ‘এর চেয়ে তো দেখি মনমোহন সিংহও চারপাশে কী চলছে সে ব্যাপারে বেশি ওয়াকিবহাল ছিলেন!’ ফিক্সিংটাকে টুর্নামেন্ট কর্তাদের প্রশ্রয়েই ঘটতে দেওয়া হচ্ছে বলে ঘোর সন্দেহ তাঁর। সম্প্রতিই রাজস্থানের এক খেলোয়াড়কে ‘স্পট ফিক্সিং’ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন এক রঞ্জি-সতীর্থ। খেলোয়াড়েরা যে এভাবে নিজ গরজে ম্যাচ গড়াপেটা করতে সতীর্থদের প্রস্তাব দিচ্ছে, এটাকে ক্রিকেটের চরম দুর্দিনের পূর্বাভাস বলেই মনে করেন আজাদ।

ক্রিকেটের ক-ও বোঝে না, এমন লোকদের দ্বারা আইপিএল পরিচালিত হচ্ছে। কখনোই প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট না খেলেও আইপিএল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করা রাজীব শুক্লার ‘ক্রিকেট ক্যারিয়ারে’র দিকে ইঙ্গিত করে আজাদ বলেছেন, এমন মহান ক্রিকেটার দায়িত্বে থাকায় এবারের আইপিএল আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়ে আরও জমে উঠবে।

কীর্তির অভিযোগ আইপিএলওয়ালারা পরিকল্পনা করে ক্রিকেটটাকে ‘সোপ অপেরা’ করে তুলতে চায়। আজাদ মনে করেন, গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট এমনিতেই যথেষ্ট নাটকীয়। বেশি মসলা দিয়ে রান্না করা ভালো রাঁধুনির লক্ষণ নয়। সেই খাবার এক-দুদিন ভালো লাগে, কিন্তু বেশি দিন মুখে রোচে না!



মন্তব্য চালু নেই