ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিও ছুঁয়ে ফেললেন সাকিব

অনেক অর্জনে মনে রাখার মত একটি দিনে ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিও ছুঁয়ে ফেললেন সাকিব আল হাসান। নিউজিল্যান্ডের বোলারদের কাঁদিয়ে মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে দুরন্ত গতিতে ছুঁটছেন তিনি। দুজনে ট্রিপল সেঞ্চুরির জুটি গড়েছেন। দিনের শুরুতেই মুমিনুল হকের বিদায়ে যে বিপদের আভাস চোখ রাঙাচ্ছিল, সেটি এখন সুদূর অতীত! জোড়া সেঞ্চুরিতে সেই আভাস তাসমানিয়া সাগরে কবর দিয়েছেন সাকিব-মুশফিক। দুজনের অবিচ্ছিন্ন ৩৫৬ রানের রেকর্ড জুটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে বড় সংগ্রহ গড়েছে বাংলাদেশ।

ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে শুক্রবার এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১২৫.৪ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ৫১৬ রান তুলেছে বাংলাদেশ। রেকর্ড জুটি গড়ে উইকেটে আছেন সাকিব আল হাসান ২০৩ ও মুশফিকুর রহিম ১৫৯ রানে।

এটি সাকিবের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। তার আগের সর্বোচ্চ টেস্ট ইনিংসটি ছিল ১৪৪ রানের। আর মুশফিক ও তামিম ইকবালের পর তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে দ্বিশতক ছোঁয়ার কীর্তি। অন্যদিকে এটি টেস্টে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ট্রিপল সেঞ্চুরির জুটি। প্রথমটি ৩১২ রানের। খুলনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ইমরুল কায়েস ও তামিম ইকবাল যেকোনো উইকেট জুটিতে বাংলাদেশের আগের সর্বোচ্চ এই রানের জুটিটি গড়েছিলেন। সেটি ছাড়িয়ে সাকিব-মুশফিকের জুটিই এখন বাংলাদেশের সেরা!

প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিনের সকালে ৩ উইকেটে ১৫৪ রানে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। দুই অপরাজিতের একজন মুমিনুল (৬৪) আগের দিনের সংগ্রহের সঙ্গে কোনো রান যোগ না করেই সাজঘরে হাঁটা দেন। টিম সাউদির বলে উইকেটের পেছনে বিজে ওয়েটলিংকে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি।

সেখান থেকে বাকি গল্পটুকু সাকিব আর মুশফিকের। ব্যক্তিগত ৫ রানে থাকা আরেক অপরাজিত সাকিব পাল্টা তোপ দাগেন মুশফিককে নিয়ে। পঞ্চম উইকেটে দুজন দারুণ এক জুটি গড়ে কিউই বোলারদের ঘাম ছুটিয়ে ছেড়েছেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যেকোনো উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড গড়েছেন।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এর আগে সর্বোচ্চ ১৬১ রানের জুটির রেকর্ড ছিল বাংলাদেশের। ২০০৮ সালে ডানেডিনে ওপেনিং জুটিতে এই রান তুলেছিলেন তামিম ইকবাল ও জুনায়েদ সিদ্দিকী। ওয়েলিংটনে টেস্টের দ্বিতীয় দিনে সেটিই ছাপিয়ে গেলেন মুশফিক-সাকিব। সব মিলিয়ে টেস্টে যেকোনো উইকেট জুটিতে বাংলাদেশেরই তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়ে অবিচ্ছিন্ন আছেন তারা।

সোনায় মোড়ানো একদিনে প্রথমে সেঞ্চুরির দেখা পান সাকিব। তার ক্যারিয়ারের চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরি। সেটি এলো প্রায় ২৬ মাস পর! সাকিব সাদা পোশাকে সর্বশেষ সেঞ্চুরিটি করেছিলেন ২০১৪ সালের নভেম্বরে। নেইল ওয়াগনারের করা ৯০তম ওভারের পঞ্চম বলে সিঙ্গেল নিয়ে মাইলফলক পূর্ণ করেন টাইগার অলরাউন্ডার। ১৫০ বলে ১৩টি চারের সাহায্যে শতকে পৌঁছান তিনি।

তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারের দেখা পাওয়ার দিনে রেকর্ড বইয়েও ওলট-পালট করেছেন এই বিশ্বসেরা টাইগার অলরাউন্ডার। ব্যক্তিগত ৭১ রানে পৌঁছার মধ্য দিয়ে তামিম ইকবাল ও হাবিবুল বাশারের পর তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে টেস্টে ৩ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন সাকিব। পরে সাকিবময় দিনে যখন ৯৮ রানে পৌঁছালেন, তখন বাশারকে (৩০২৬) পেছনে ফেলে বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক বনে যান এই বাঁহাতি।

এদিন আরো একটি অসাধারণ অর্জনের পাশে নাম লিখিয়েছেন সাকিব। বসেছেন কিংবদন্তিদের পাশে! সাদা পোশাকের ক্রিকেটে ১৪তম ক্রিকেটার হিসেবে ৩ হাজার রান ও ১৫০ উইকেটের ডাবলসের কীর্তি গড়েছেন টাইগার অলরাউন্ডার। টেস্টে ১৫৯ উইকেট নিয়ে নিউজিল্যান্ড সফরে যান সাকিব। শুক্রবার ওয়েলিংটন টেস্টের দ্বিতীয় দিন মধ্যাহ্ন বিরতির পরপরই তিন হাজার ছুঁয়ে পৌঁছে যান টেস্টের এই অভিজাত ক্লাবে।

কিংবদন্তিদের এই ক্লাবে আগ থেকেই রয়েছেন ১৩জন তারকা। স্যার গ্যারি সোবার্স, ইমরান খান, জ্যাক ক্যালিস, ইয়ান বোথাম, রিচার্ড হ্যাডলি ও কপিল দেবের মতো কিংবদন্তিরা টেস্টে এই ডাবলস অর্জনের পাশে নাম লিখিয়েছেন। তালিকায় আছেন শন পোলক, রবি শাস্ত্রী, চামিন্ডা ভাস, শেন ওয়ার্ন, ড্যানিয়েল ভেট্টরি, ক্রিস কেয়ার্নস ও অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের মতো কিংবদন্তি ক্রিকেটাররাও।

সাকিবময় দিনে ২৮ মাস পর সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন মুশফিক। মিডলঅর্ডারের এই ভরসা রানেই ছিলেন। কেবল ইনিংসগুলোকে সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে পারছিলেন না! ওয়েলিংটনে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করে সেই আক্ষেপই দূর করলেন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক। এর আগে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে কিংসটাউনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষবার সেঞ্চুরির জন্য ব্যাট উঁচিয়ে ধরেছিলেন মুশফিক। পরে কেটে গেছে ১১টি টেস্ট।

উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান টিম সাউদির করা ৯৬তম ওভারের দ্বিতীয় বলে দারুণ চার হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। ১৭৮ বলে ১৭টি চারের সাহয্যে ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরিতে পৌঁছেছেন তিনি।



মন্তব্য চালু নেই