কৌশল পাল্টালেও বন্ধ হয়নি মিঠাপুকুরে যমুনেশ্বরী নদী’র বালু উত্তোলন

মো: শামীম আখতার, উপজেলা প্রতিনিধি, মিঠাপুকুর (রংপুর) : মিঠাপুকুরে যমুনেশ্বরী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মুল হোতা হিসেবে ২০০৮ সালে সংবাদের শিরোনাম হয়েছিলেন তরফসাদী গ্রামের আব্দুস সালাম। এরপরেও কয়েকবার পত্রিকায় পাতায় নাম উঠেছিল তাঁর। প্রশাসন কয়েকদফা পদক্ষেপ গ্রহন করলেও, এখনও বন্ধ হয়নি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। শুধু আব্দুস সালামই নয়, মিঠাপুকুরে ৭টি পয়েন্টে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে করছেন ১৫ জন ব্যক্তি। এরমধ্যে, মুল হোতা হিসেবে মুনাফা লুটছে আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি সদস্য। অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে নদী পাড়ের হাজার একর জমিতে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এছাড়াও, ভারসাম্য হারাচ্ছে নদীর মুল গতিপথ।

সরেজমিনে অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, যমুনেশ্বরী নদীর বড়বালা ইউনিয়নের আটপুনিয়া উত্তরপাড়া বাগানবাড়ি পয়েন্টে ৬ মাস ধরে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে পৃথকভাবে বালু উত্তোলন করছেন আব্দুল মান্নানের ছেলে নুরু ইসলাম ও একই গ্রামের আজিজার রহমানের ছেলে হুইয়াল ইসলাম। ওই গ্রামের নামাপাড়া পয়েন্টে বছরখানেক ধরে গনি মিয়ার ছেলে সাজু মিয়া’র নেতৃত্বে বালু উত্তোলন করছেন কাওছার ইসলাম ও জাহাঙ্গীর আলম। মিলনপুর ইউনিয়নের তরফসাদী পয়েন্টের ১ যুগ ধরে মোজাব উদ্দিনের ছেলে আব্দুস সালাম, তাঁর ভাই আব্দুল কালাম ও আব্দুল জলিল বালু উত্তোলন করছেন। ২ বছর ধরে মুকিমপুর ভিটারচর এলাকায় জলাইডাঙ্গা গ্রামের শাহ্ আলম ও ৬ মাস আগ থেকে গোপালপুর পায়রাদহ পয়েন্টে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এছাড়াও, বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের চাঁনটারি এলাকায় হাফিজুর রহমান পচাঁ মিয়া ও বালুয়া আটপুনিয়ায় আমজাদ মেম্বারের বালুর পয়েন্ট কিছুদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। তারা বালু উত্তোলন পুনরায় চালু করার জন্য দেন দরবার করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে।

৭ টি পয়েন্টের মধ্যে আটপুনিয়া উত্তরপাড়া বাগানবাড়ীতে ড্রেজারের মাধ্যমে প্রায় ৫ লাখ টাকা মূল্যের বালু উত্তোলন করে স্তুপ আকারে রাখা হয়েছে। ওই গ্রামের নামাপাড়া পয়েন্টে এখনও চালু রয়েছে ড্রেজার মেশিন। ওই এলাকায় বালু উত্তোলনকারী নুরু ইসলাম, হুইয়াল ইসলাম ও সাজু মিয়া গ্রামের মসজিদ নির্মাণ কাজে বালুর অজুহাত দেখিয়ে বলেন, মসজিদে বালু লাগছে, তাই উত্তোলন করছি। মিলনপুর ইউনিয়নের তরফসাদী পয়েন্টে ট্রাক্টরের মাধ্যমে রাতের বেলায় বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আব্দুস সালাম ও আব্দুস কালাম বলেন, মিলনপুর ইউনিয়ন পরিষদ সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নুরুন্নাহার বেগম আমাদের ভাতিজি। তাকে বলেই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ইউপি সদস্য নুরুন্নাহার বেগম বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করছি। মুকিমপুর ভিটারচর পয়েন্টে ও গোপালপুর পায়রাদহ পয়েন্টে ট্রাক্টরের মাধ্যমে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। মিলনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক মোস্তাফিজার রহমানের মোবাইল ফোনে কল করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

মিলনপুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা আখিরুজ্জামান বলেন, মুকিমপুর ভিটারচর ও গোপালপুর পায়রাদহ পয়েন্টে এখনও বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আমি বিষয়টি এসিল্যান্ড স্যারকে অবগত করেছি। মিলনপুর ইউনিয় পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম চৌধুরী বলেন, ইএনও এবং এসি ল্যান্ড স্যারের নির্দেশে কয়েকটি বালুর পয়েন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিঠাপুকুরে প্রায় ১শ কিলোমিটার পাকা রাস্তার সংস্কার ও নির্মাণ এবং পীরগঞ্জ উপজেলার ৫০ কিলোমিটার আঞ্চলিক সড়কের কাজে প্রচুর পরিমাণ বালু দরকার হচ্ছে। এরই সুযোগে ঠিকাদারদের সাথে যোগসাজস করে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা যমুনেশ্বরী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুমা আরেফিন বলেন, নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। উপজেলা নির্বাহি অফিসার মামুন-অর-রশীদ বলেন, ইতোমধ্যে বালু উত্তোলনের কয়েকটি অবৈধ পয়েন্টে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল। প্রয়োজনে আবারও কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।



মন্তব্য চালু নেই