কৈলাসে ফিরে গেলেন দুর্গা, আজ বিসর্জন

আজ বিজয়া দশমীর বিসর্জন, অশ্রুসজল নয়নে ভক্তবৃন্দ বিসর্জন দেবেন দুর্গতিনাশিনী মহাশক্তি দেবীর প্রতীমা। গতকাল শুক্রবার শারদীয় দুর্গোৎসবের মহানবমী ও দশমী পূজা সম্পন্ন হয়েছে।
শুক্রবার থেকেই পূজামণ্ডপে ছিল কেবলই বিষাদের ছায়া। তাই ঢাক-ঢোল, কাঁসর-ঘণ্টাসহ বিভিন্ন বাদ্যে, আলোকিত করা ধূপ আরতি ও দেবীর পূজা-অর্চনায় কেবলই মায়ের বিদায়ের আয়োজন।
এদিন মাকে বিদায়ের আয়োজনে বিষণ্ণ মন নিয়েই উৎসবে মেতেছিলেন ভক্তরা। দিনভর চলেছে চণ্ডিপাঠ আর ভক্তদের কীর্তনবন্দনা। অনুষ্ঠিত হয় দেবীর মহানবমী ও দশমীর বিহিত পূজা।
শাস্ত্রে আছে, নবমী তিথীতে রাবন বধের পর শ্রীরামচন্দ্র এই পূজা করেছিলেন। নীলকণ্ঠ ফুল, যজ্ঞের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয় নবমী বিহিত পূজা। নবমী পূজার মাধ্যমে মানবকুলে সম্পদলাভ হয়। শাস্ত্র অনুযায়ী, শাপলা, শালুক ও বলিদানের মাধ্যমে শুক্রবার দশভূজা দেবীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পূজা শুরুর পর ভক্তরা প্রার্থনা করতে থাকেন দেবীর উদ্দেশে। নীল অপরাজিতা ফুল নবমী পূজার বিশেষ অনুষঙ্গ। নবমী পূজার দিন যজ্ঞের মাধ্যমে দেবী দুর্গার কাছে আহুতি দেয়া হয়। ১০৮টি বেল পাতা, আম কাঠ, ঘি দিয়ে এই যজ্ঞ করা হয়। পূজা শেষে যথারীতি অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় ভোগ আরতি। নবমীর প্রধান আকর্ষণ ছিল মণ্ডপে মণ্ডপে আরতি প্রতিযোগিতা। ঢাকের বাদ্যের তালে তালে নানা ঢঙে সন্ধ্যা আরতি ভক্তদের প্রাণে নতুন আকুলতা দোলা দেয়।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গন কেন্দ্রীয় পূজা মণ্ডপে গতকাল ৬টা ৫৪ মিনিটের মধ্যে দেবীর মহানবমী কল্পারম্ভ ও মহানবমী বিহিত পূজা সম্পন্ন হয়েছে। সকাল ৮টা ২৩ মিনিটের মধ্যে দেবীর দশমী বিহিত পূজা সমাপণ করে দর্পণ বিসর্জন দেয়া হয়।
রাজধানীর তাঁতীবাজার, শাঁখারীবাজার, স্বামীবাগসহ বিভিন্ন মণ্ডপেও দেয়া হয় দর্পণ ঘট বিসর্জন। শুক্রবার শেষবারের মতো দেবীর আশীর্বাদ কামনায় নারী, পুরুষ, শিশু-কিশোর সব বয়সের ভক্ত নিবিষ্ট মনে প্রার্থনা করেন। কীর্তন-শ্যামা সঙ্গীতের মধুর সুর আর ভক্তদের অর্চনায় বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে ছড়িয়ে পড়ে উৎসবের রঙ। সধবা নারীদের দেখা যায় সিঁদুর দিয়ে দেবীর পা রাঙিয়ে সেখান থেকে একফোঁটা নিজের কপালে লাগাতে।
সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, দুর্গতিনাশিনী দেবী মর্ত্যলোক ছেড়ে হিমালয়ের কৈলাস সরোবরে স্বামীর বাড়িতে ফিরে গেলেন। দুর্গা যে ক’দিন পিতৃগৃহে (ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী) ছিলেন, ঢোলের বাদ্য সে ক’দিন ভক্তদের মনে ভক্তি আর আনন্দ মূর্ছনা দুই-ই জাগিয়েছে। বিজয়া দশমীতে দুর্গার বিদায় বেলায়ও চলেছে ঢাক আর শঙ্খধ্বনি, টানা মন্ত্র পাঠ, উলুধ্বনি, অঞ্জলি, ঢাকের বাজনার সঙ্গে ধুনচি নৃত্য, সিঁদুর খেলা। ধান, দূর্বা, মিষ্টি আর আবির দিয়ে দেবীকে বিদায় জানিয়েছেন ভক্তরা।
তবে বিশুদ্ধ পঞ্জিকা অনুসরণ করে রামকৃষ্ণ মিশনে শুক্রবার মহানবমী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে পূজা আরম্ভ হয়। শনিবার সকাল ৭টায় দশমী পূজা আরম্ভ হবে। ৯টা ৫৮ মিনিটের মধ্যে সম্পন্ন হবে পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন। পরে প্রতীমা বিসর্জন এবং ভক্তরা শান্তিজল গ্রহণ করবেন।
শুক্রবার ঢাকার পূজামণ্ডপগুলোতে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের ছিল উপচে পড়া ভিড়। বিশেষ করে নগরীর পুরান ঢাকার সূত্রাপুর, শাখাঁরী বাজার, তাঁতীবাজার এলাকায় ভিড় ছিল অনেক। নতুন জামা-কাপড় পরে দল বেঁধে ঘুরে বেড়িয়েছেন নানা বয়সী মানুষ। মানুষের ভিড়ে মণ্ডপগুলো যেন পরিণত হয়েছিল মিলনমেলায়। প্রতিটি মণ্ডপেই কয়েক দফা করে পুষ্পাঞ্জলি দেয়া হয়। সন্ধ্যায় মণ্ডপে মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
শনিবার ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গন কেন্দ্রীয় পূজা মণ্ডপ থেকে বিকেল ৪টায় বিজয়া শোভাযাত্রা বের হবে।



মন্তব্য চালু নেই