কোরানের আয়াত বা আজানকে মোবাইলের রিংটোন হিসেবে ব্যবহার করা যাবে কি?

কোরআনের প্রতি মানুষের মুগ্ধতা ও ভালবাসা চিরকালীন। থাকার ঘরে একটুকরো কাগজে কোরআনের আয়াত লিখে ঝুলিয়ে দেওয়া। ব্যবসার সফলতার জন্য মাথার ওপর সুরা লিখে রাখা। যানবাহনে কোরআনের ক্যালিওগ্রাফি বরাবরই আমাদের চোখে পড়ে। সবই সরলমনা বিশ্বাসী মানুষের আবেগের ছবি। আজকের সমাজে মোবাইলে কোরআনের রিংটোন বাজানোর প্রবণতাও বেশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কোরআনের আয়াত, দরূদ শরিফ, জিকির কিংবা আজানের সুর ভেসে আসছে মোবাইল থেকে। সন্দেহ নেই যারা কাজটি করছেন তারাও দরূদ, আজান বা এই পবিত্র গ্রন্থের সুরলহরির প্রতি মুগ্ধতা ও আলাদা টান থেকেই করে যাচ্ছেন। আবেগী একটি যুক্তিও আছে, মোবাইলে তো কোরআনই রিংটোন করলাম; গান-বাজনা, অশ্লীল বাদ্যতো আর রিংটোন করেনি। কোরআনই রিংটোন করার পরও গোনাহ হবে কেন?

কোরআনের প্রতি মানুষের এই আবেগ ভালাবাসা ও সরল স্বীকারোক্তির প্রতি শ্রদ্ধা রাখা চাই! গান-বাজনা, অশ্লীল বাদ্য থেকে বেঁচে থাকার ইতিবাচক মানসিকতাও প্রশংসার দাবি রাখে। তবে আবেগ ভালবাসার উপযুক্ত প্রয়োগ চায় ইসলাম। ফেকাহর একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো, আল্লাহ তায়ালার নাম, কুরআনের আয়াত বা দরূদ শরিফ, জিকির ইত্যাদি কাউকে ডাকা, সতর্ক করার জন্য ব্যবহার ইসলামে বৈধ নয়। মোবাইল রিংটোন বাজানো হয় সাধারণত কাউকে ডাকা, জাগানো বা সতর্ক করার জন্য। কোরআনের আয়াত, আল্লাহর নাম, দুরুদ ও জিকির ইসলাম মানুষকে ডাকে পাঠানো বা সর্তক করার জন্য নির্ধারণ করেনি। কোরআনের মর্যাদা সম্মান রক্ষা করে তেলাওয়াত, নবিজীর ভালবাসায় কাতর হয়ে দরূদ এবং আল্লাহর প্রেম দরিয়ায় ডুবে গিয়ে জিকিরের সৃষ্টি। ইসলামের এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নিজস্বতা ধ্বংস করে ভিন্ন পথে ব্যবহারের সুযোগ নেই। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর যখন কুরআন পাঠ করা হয়, তখন তা মনোযোগ দিয়ে শোন এবং চুপ থাক, যাতে তোমরা রহমত লাভ কর। সূরা আরাফ : ২০৪

মোবাইলে কোরআনের রিংটোন বেজে উঠলে আমরা কি পারি ‘মনোযোগ দিয়ে শোন এবং চুপ থাকো’- আল্লাহর নির্দেশ পালন করতে? পারি না। তাহলে মোবাইলে কুরআনের রিংটোন বাজিয়ে আমরাই আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করছি! আর একটি বিষয় হলো- কোরআনের পবিত্রতা। নিশ্চয় মোবাইল নিয়ে আমরা টয়লেটেও যাই, তখন যদি বেজে ওঠে কোরআনের আয়াত? কিংবা আজানের সুর? কোথায় পালাবে আমার ভালবাসা আর আবেগ!

-মুফতি হুমায়ুন আইয়ুব



মন্তব্য চালু নেই