কেমন হবে মেসি বিহীন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ একাদশ

মেসি এখন অতীত। আর্জেন্টিনার জার্সিতে আর দেখা যাবে না তাকে। স্বয়ং মেসিই নিজের অবসরের ঘোষণা জানিয়েছেন কোপা আমেরিকার ফাইনালে হারের পর। কিন্তু মেসির এমন চলে যাওয়া পৃথিবীর কেউই মেনে নিতে পারছে না। সবারই একটি প্রত্যাশা মেসি ফিরে আসুক।

মেসির দেখাদেখি অ্যাগুয়েরো, ডি মারিয়াসহ ৫-৬ জন ফুটবলারের জাতীয় দল থেকে অবসরের গুঞ্জন রয়েছে। যদি শেষ পর্যন্ত তারা সবাই অবসর নেয় তাহলে কেমন হবে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ একাদশ? অনেকের মনে এখন থেকে সেটিই ঘুরপাক খাচ্ছে। আদৌ কি আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাবে? সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।

টুর্নামেন্টে অসাধারণ খেলার সুবাদে বর্তমান সময়ে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক সার্জিও রোমেরো। জাতীয় দলের ফর্ম বিবেচনায় পরবর্তী বিশ্বকাপে তার বয়স হবে ৩১ বছর। স্বভাবতই আর্জেন্টিনার গোলবারের সামনে তার থাকা অনেকটা নিশ্চিত। রোমেরো না থাকলেও চিন্তার কিছু নেই আর্জেন্টিনার। সোসিয়াদাদে খেলা রুল্লি রয়েছেন।

রাইট ব্যাকে গ্যাব্রিয়েল মার্কাদোর বর্তমান বয়স ২৯ এর কোটায়। দুই বছর মার্কাদোর বয়স হবে ৩১। একজন ডিফেন্ডারের জন্য সেটি অনেক। সেক্ষেত্রে রাইট ব্যাক পজিশনে দেখা যেতে পারে রিভারপ্লেটের খেলোয়াড় গিনু পিরুজ্জিকে। ইতোমধ্যে ইতালিয়ান লিগের রানার্সআপ নাপোলি তাকে কেনার আগ্রহ দেখিয়েছে। জাতীয় দলের হয়ে পাঁচটি ম্যাচও খেলে ফেলেছেন। তবে মার্কাদো যদি ফর্ম ধরে রাখতে পারে সেক্ষেত্রে দলে তার খেলার সুযোগ বেশি থাকছে।

জাতীয় দলের হয়ে ৩৮টি ম্যাচ খেলা নিকোলাস ওটামেন্ডি নিশ্চিতভাবেই আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ দলে থাকছেন। বিশ্বকাপের সময়েও তার বয়স হবে ৩০। বর্তমানে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন পাশাপাশি কোপা আমেরিকাতেও আর্জেন্টিনা দলের রক্ষণভাগ শক্ত হস্তে সামাল দিয়েছেন।

ওটামেন্ডির সঙ্গে রামিরো ফিউনেস মুরির জুটি বেশ আলো ছড়িয়েছে কোপা আমেরিকাতে। এভারটনের হয়ে ইংলিশ লিগে খেলা এই ফুটবলার ইতোমধ্যে মন জয় করে নিয়েছেন অনেকের। ২০১৮ বিশ্বকাপে তার বয়স হবে ২৮। যা একজন ফুটবলারের জন্য আদর্শই বলা চলে তাই ফর্ম ধরে রাখতে পারলে বিশ্বকাপে তার একাদশে থাকাটা অনেকটাই নিশ্চিত।

শতবর্ষী কোপার ফাইনালে লাল কার্ড দেখে আর্জেন্টাইনদের চোখের বিষে পরিণত হয়েছেন লেফট ব্যাক মার্কস রোহো। ফর্মটা ভালো হলে বিশ্বকাপ একাদশে তাকে দেখা যেতে পারে কিন্তু যদি না থাকেন সেক্ষেত্রে তার জায়গায় দেখা যেতে পারে বোকা জুনিয়র্সের জোনাথন সিলভাকে। জাতীয় দলের হয়ে দুইটি ম্যাচও খেলেছেন ইতোমধ্যে। ২০১৮ সালে তার বয়সটাও হবে মানানসই, ২৩।

হাভিয়ের মাসচেরানোর জায়গা পূরণ করাটা আসলেও অসম্ভব। তার অবসরের পর তার মতোই একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারকে দলে জায়গা দিতে হবে। সেক্ষেত্রে মাত্তিয়াস ক্রানভিয়েত্তরই এই জায়গার জন্য উপযুক্ত। কোপার ফাইনালেও তাকে মাঠে দেখা গেছে। ইতোমধ্যে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে জায়গা করে নিয়েছে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের মতো ক্লাবে।

পুরো কোপা আমেরিকাতেই আর্জেন্টিনার মাঝমাঠের ত্রাণকর্তা হিসেবে ছিলেন এভার বানেগা। ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে কোনো অংশেই অন্যদের থেকে পিছিয়ে ছিলেন না। বিশ্বকাপের সময়ে তার বয়স হবে ২৯। দলের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তাই তার স্থান অনেকটাই কাম্য।

জাতীয় দলের জার্সি এখনো গায়ে ওঠেনি ম্যানুয়েল লানজিনির কিন্তু ইংলিশ লিগে তার অসাধারণ পারফরম্যান্স ভাবিয়ে তুলছে আর্জেন্টিনার নির্বাচকদের। ইতোমধ্যে আর্জেন্টিনার হয়ে অলিম্পিক দলে খেলার ডাক পেয়েছেন তিনি। সেখানকার পারফরম্যান্স বিবেচনাতে রেখেই হয়তো ২০১৮তে ২৫ বছরে পা দেয়া লানজিনিকে দেখা যাবে একাদশে।

শতবর্ষী কোপা আমেরিকাতে নিজের জাত চিনিয়েছেন এরিক লামেলা। টটেনহ্যামের হয়ে দুর্দান্ত মৌসুম পার করার পর কোপাতেও ছিলেন ফর্মে। করেছেন দুই গোলও। খেলেছেন কোপার ফাইনালেও। বিশ্বকাপের সময় তার বয়সটাও হবে ২৬। একজন ফুটবলারের জন্য আদর্শ বলা চলে।

বর্তমান সময়ের অন্যতম আলোচিত আর্জেন্টাইন ফুটবলারের নাম পাওলো দিবালা। জুভেন্টাসের হয়ে অসাধারণ মৌসুম কাটানোর পরেও টাটা মার্টিনোর কোপা দলে জায়গা হয়নি তার। তার বদলে হিগুয়েনকে নিয়েছিলেন টাটা। জুভেন্টাসের হয়ে ২২ বছর বয়সে প্রথম মৌসুমেই করেছেন ১৯ গোল। খেলবেন আর্জেন্টিনার হয়ে অলিম্পিকও। নিশ্চিতভাবেই আর্জেন্টিনার ভবিষ্যৎ নাম্বার ‘টেন’ হতে যাচ্ছেন দিবালা।

দিবালার মতোই ব্রাত্য হয়েছেন আরেক আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার মাউরো ইকার্দি। বারবার ইতালিয়ান লিগে নিজের জাত চেনালেও আর্জেন্টিনার হয়ে মাত্রে একবারই মাঠে নামার সুযোগ হয়েছিল তার। ২৩ বছর বয়সেই ইন্টার মিলানের অধিনায়ক হয়েছে। গোলের পর গোলও করে যাচ্ছেন। তাই বলা যায় আগামী বিশ্বকাপে তাকে স্ট্রাইকারের মূল ভূমিকায় দেখা যাবে।

এরা ছাড়াও জেরোনিমো রুল্লি, মাত্তেও মুসাসিও, এমানুয়েল মামানা, লুকাস রোমেরো, জোয়াকুইন কোরেয়া, লিয়ান্দ্রো পারেদেস, রবার্তো পেরেইরা, অ্যাঞ্জেল কোরেয়া, লুসিয়ানো ভিয়েত্তো, লুকাস ওকাম্পোসও জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।

অ্যাগুয়েরো, মেসি, মাসচেরানো, ডি মারিয়া, হিগুয়েনদের অবসরের ফলেই কেবল এই তরুণ আর্জেন্টাইন দল গঠন করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে কোচেরও সদ ইচ্ছার প্রয়োজন।



মন্তব্য চালু নেই