কেন্দ্র দখল, ভোট বর্জন

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে সকাল ৮টা থেকে। দেশের দুই প্রধান নগরীর তিন সিটি করপোরেশনের ভোট উৎসবের শুরুর ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই ঘটেছে অপ্রীতিকর ঘটনা। কোথাও কেন্দ্র দখলের অভিযোগ ওঠে। কোথাও অনিয়মের অভিযোগ তুলে কোনো কোনো প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছেন।

চট্টগ্রাম সিটির বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এম মনজুর আলম বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। সিবিএস কোলোনি স্কুল কেন্দ্রে বাইরে তালা মেরে দেয়া ও কয়েকটি কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদের ঢুকতে না দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আ জ ম নাছিরের সমর্থকরা এসব কর্মকাণ্ড করছে বলে অভিযোগ করেছেন মনজুর আলমের মিডিয়া টিমের প্রধান সাইফুল ইসলাম শিল্পী।

অভিযোগ করা কেন্দ্রগুলো হচ্ছে- পাহাড়তলী থানার ঝাউতলা রেলওয়ে হাসপাতাল স্কুল কেন্দ্র, লালখান বাজার আরোগ্য দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্রে, ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদের দায়য়াপাড়া সৈয়দ মৌলভী স্কুল কেন্দ্র, গোসাইল ডাঙ্গা মকবুলিয়া ভোটকেন্দ্র, কেডি দুভাস কেন্দ্র, তারেক মিয়া স্কুল কেন্দ্র।

অন্যদিকে, নাসিরাবাদ এলাকার পলিটেকনিক এলাকার ৪টি ভোটকেন্দ্রে কাউকে ঢুকতে দেয়নি আ জ ম নাসিরের সমর্থকরা। এ কেন্দ্রের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মনজুর আলমের সব পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে।

সকাল ৯টার দিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৩৭ নং ওয়ার্ডের পোগোজ স্কুলকেন্দ্রে দু’প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট ও সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এরপরেই ওই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। সংঘর্ষে আহত হন আওয়ামী লীগের এক বিদ্রোহী প্রার্থীর ২ পোলিং এজেন্ট।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ভোট শুরুর পর সকাল সাড়ে ৯টা দিকে হঠাৎ বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এম এম পারভেজ রেজার (ট্রাক্টর) পোলিং এজেন্ট ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রহমান মিয়াজীর (ঘড়ি) পোলিং এজেন্টদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এ খবর কেন্দ্রের বাইরে ছড়িয়ে পড়লে দু’পক্ষের অন্তত দুই শতাধিক সমর্থক কেন্দ্রে ঢুকে পড়ে। শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। ওই সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করলেও হয়ে যায়। কেন্দ্রের আশাপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।

অপরদিকে, ভোটগ্রহণ শুরুর আধাঘণ্টা পরই দক্ষিণ সিটির ৪০টি ভোটকেন্দ্র দখলের অভিযোগ করেন মেয়রপ্রার্থী মির্জা আব্বাসের নির্বাচনী প্রেসউইংয়ের কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কমপক্ষে ৪০টি ভোটকেন্দ্র দখন করেছে। সেখানে তাদের পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে- ফকিরাপুল প্রাথমিক বিদ্যালয়, নটরডেম কলেজ, পূর্ব গোরান মদিনাতুল উলুম মাদরাসা, উত্তর গোরান স্কুল, প্যারিস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, হাবিবুল্লাহ বাহার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, কমলাপুর স্কুল, যাত্রাবাড়ী স্কুল, সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সেন্ট্রাল কলেজ, শান্তিপুর উচ্চ বিদ্যালয়সহ ৪০টি কেন্দ্র।

এদিকে, ঢাকা উত্তর সিটির ৭ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী (লাটিম প্রতীক) আব্দুস সোবহান ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নির্বাচন বর্জন করেছেন। সকালে ভোটগ্রহণ শুরুর পর এটিই প্রথম কোনো ভোট বর্জনের ঘটনা।

ঢাকা উত্তরে ভোট গ্রহণ শুরু হতে না হতেই ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বংশাল থানার ২৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার প্রিজাইডিং অফিসাররা। বিশেষ করে এ অভিযোগ এসেছে সুরিতলা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র থেকে। সকাল পৌনে ৯টার দিকে ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে বলে ঘোষণা দেন প্রিজাইডিং অফিসার শওকত আলী। তিনি বলেন, ‘এ ভোটকেন্দ্রে ভোট আর হবে না।’ এরপর ভোটাররা রাস্তায় অবস্থান করে বিক্ষোভ শুরু করেন। অনেকেরই অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের কর্মীরা ভোট বাক্স নিয়ে গেছেন।

দক্ষিণ সিটির ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের সায়েদাবাদ এলাকায় শহিদ জিয়া উচ্চ বিদ্যালয় এবং আর কে চৌধুরী স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বিভিন্ন কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। একই সঙ্গে ক্যাম্প ভেঙে দেয়ার অভিযোগ উঠছে। বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থী আতিকুল্লাহ জানান, তার ঘড়ি প্রতীকের পোলিং এজেন্টকে ঢুকতে দিচ্ছেন না আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের লোকজন। এছাড়া আমাদের ভোট ক্যাম্পের টেবিল ভেঙে ফেলা হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই