কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ সার্ভারের ডাটা উধাও!

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ সার্ভারের ইউজার ডাটা ( ব্যবহারকারীর তথ্য) খুঁজে পায়নি মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি। গতকাল বুধবার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সিআইডির এডিশনাল ডিআইজি (অর্গানাইজড ক্রাইম) শাহ আলমের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের টিম বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছেন যে ব্যাংকের অভ্যন্তরে একটি চক্রের পরিকল্পনায় এই বিপুল পরিমাণ রিজার্ভ হ্যাক করে লোপাট করা হয়েছে। তারা ব্যাংকের কর্মকর্তাদের কথাবার্তায় নানা অসঙ্গতি পেয়েছেন।

রিজার্ভ সার্ভার ব্যবহারকারীদের কোন ডাটাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি কেন্দ্রীয় রিজার্ভ সার্ভারের কক্ষের সিসি ক্যামেরার ফুটেজও দিতে পারেন নি ব্যাংক কর্মকর্তারা। এ ব্যাপারে ব্যাংক কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সিআইডি টিম কোন সদুত্তরও পায়নি। এজন্য সন্দেহভাজন অনেক কর্মকর্তার ব্যক্তিগত ফাইল জব্দ করেছে সিআইডি। তাদের ব্যক্তিগত ফাইল ও পাসপোর্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাদের কে কখন বিদেশ সফর করেছেন-সে বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।

নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০১ মিলিয়ন ডলার লোপাটের ঘটনায় মতিঝিল থানায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত হয়েছেন সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হানুল ইসলাম। এছাড়া এই টিমে সদস্য হিসাবে রয়েছেন বিশেষ পুলিশ সুপার (অর্গানাইজড ক্রাইম) মির্জা আব্দুল্লাহ হেল বাকীসহ ৫ জন।

গতকাল মালিবাগে সিআইডির সদর দফতরে মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে মির্জা আব্দুল্লাহ হেল বাকী সাংবাদিকদের বলেন, তদন্ত কাজের প্রাথমিক পর্যায়ে তারা গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাদের কাছ থেকে মামলা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আলামত চেয়েছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে তথ্য নেয়ার জন্য সিআইডি’র পৃথক টিমও গঠন করা হয়েছে। এসব টিম ব্যাংক থেকে তথ্য নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জমা দিবে। রিজার্ভ লোপাটের ঘটনায় ব্যাংকের কেউ জড়িত কিনা- এ বিষয়টিও তদন্ত করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

সিআইডির তদন্ত টিম বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ শাখা, একাউন্টস এন্ড বাজেট বিভাগ ও পেমেন্ট শাখার অন্তত ১০ জন কর্মকর্তার সঙ্গে গতকাল কথা বলেন। তারা কে কিভাবে দায়িত্ব পালন করেন সে বিষয়টি তদন্ত কর্মকর্তারা লিপিবদ্ধ করেছেন। রিজার্ভ সার্ভার হ্যাকড হয়েছিল ৫ ফেব্রুয়ারি। ঐ সময়ের পূর্বের কয়েকদিন এবং পরবর্তী সময়ে কে কোথায় কিভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন- সে বিষয়ে সিআইডির কর্মকর্তারা তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিআইডির একজন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ ও পেমেন্ট সিস্টেম শাখার অনেক কর্মকর্তাই তাদের কাজ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ নয়। ফরেক্স রিজার্ভ শাখার একজন কর্মকর্তার বিষয়ে সিআইডির ঐ কর্মকর্তা বলেন, ফরেক্স রিজার্ভ শাখার বিশেষজ্ঞ না হয়েও বছরের পর বছর ধরে তিনি সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন। এমন অযোগ্য কর্মকর্তার ছড়াছড়ি সেখানে। এমন কয়েকজন আইটি বিশেষজ্ঞ পাওয়া গেছে যারা বিতর্কিত রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারী হয়েও অত্যন্ত স্পর্শকাতর স্থানে দায়িত্ব পালন করছেন।

সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম শাখা মুদ্রা পাচার আইন সংক্রান্ত দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ বিষয়ে প্রশিক্ষণও নিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ শাখার তিন জন কর্মকর্তাকে এ সংক্রান্ত প্রশ্ন করা হলে-তারা বলেন, আগে অন্য শাখায় কর্মরত ছিলেন। এ শাখা সম্পর্কে তাদের কোন ধারণাই নেই। এছাড়া সরকার দলীয় লেবাসধারী কিছু কর্মকর্তা ফরেক্স রিজার্ভ শাখা, একাউন্টস এন্ড বাজেট শাখা ও পেমেন্ট সিস্টেম শাখায় দাপটের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের যোগাসাজশে দেশি-বিদেশি চক্রের সহায়তায় এই রিজার্ভ লোপাটের ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সিআইডি’র অরগানাইজড ক্রাইম শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, সন্দেহভাজন কর্মকর্তাদের মোবাইল ফোনের কললিস্ট যাচাই করা হচ্ছে। তাদের মোবাইল ফোনের কল রেকর্ডও বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। হ্যাকারদের সঙ্গে তাদের কোন সংশ্লিষ্টতা আছে কি না- তা কল রেকর্ড থেকে জানা যাবে। সূত্র: ইত্তেফাক



মন্তব্য চালু নেই