কেটে গেল কাগুজে বাঘের দশ মাস জীবন

গত ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। কিন্তু তা খাতাকলমেই রয়ে গেছে। বৈদেশিক সম্পর্ক উন্নয়নে কোনো দায়িত্বই তিনি পাননি। এ পর্যন্ত চীন ও ভারত সফর করলেও তা রাষ্ট্রীয় এ দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ছিল না। অনেকটা দপ্তরবিহীন মন্ত্রীর মতো কাগুজে বাঘের জীবন কাটছে তার।

তৃতীয়বারের মতো রোববার আবারও দেশ ছাড়ছেন এরশাদ। এটিও কোনো রাষ্ট্রীয় সফর নয়। মালয়েশিয়ার ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের আমন্ত্রণে দেশটিতে যাচ্ছেন তিনি। ২৮ নভেম্বর তার ফেরার কথা রয়েছে।

দায়িত্ব পাওয়ার পরে এরশাদের প্রথম সফর ছিল চীনে। দেশটির ক্ষমতাসীন দলের আমন্ত্রণে ২০ জুলাই তিনি সেখানে যান। দুই মাস পরে ২০ সেপ্টেম্বর যান ভারতে। ছয়দিনের ওই সফরটি এরশাদের ব্যক্তিগত সফর বলে জানা যায়। ছেলে এরিখকে স্কুলে ভর্তি ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ই সে সফরের উদ্দেশ্য।

রাষ্ট্রীয় কোনো অ্যাসাইনমেন্ট না পেলেও পূর্ণ মন্ত্রীর পদমর্যাদা সম্পন্ন বিশেষ দূতের দায়িত্ব পাওয়ার পরে বেশ কিছু সুবিধা ঠিকই পেয়েছেন এরশাদ। তার গাড়িতে উড়ে জাতীয় পতাকা, সংসদে তার জন্য দেয়া হয়েছে অফিস। সেখানে বসানো হয়েছে নামফলক। একজন একান্ত সচিব, একজন সহকারী একান্ত সচিব ও দু’জন স্টাফও রয়েছে তার অফিসে।

তবে এভাবে দায়িত্ববঞ্চিত থাকার ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি নন এরশাদ। কেন তাকে কোনো দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে না এমন প্রশ্নে শনিবার রাতে এরশাদ  বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কমেন্ট করতে চাইছি না। মাত্র তো সরকার গঠন হলো। দেখা যাক, কী হয়।’

এরশাদের ঘনিষ্টজনদের কাছ থেকে জানা যায়, এরশাদকে খুশি করতেই এমন দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। মূলত তাকে দিয়ে কোনো কাজ করাতে রাজি নন প্রধানমন্ত্রী।

জাতীয় পার্টির একাধিক নেতা জানান, রওশন এরশাদ বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার পরে এরশাদকে দেয়ার মতো সম্মানজনক আর কোনো পদ অবশিষ্ট ছিল না। তাই প্রধানমন্ত্রী এরশাদকে বাগে রাখতে এই কৌশলটি নিয়েছেন।

তবে এরশাদ তার প্রয়োজনে বিশেষ দূতের দায়িত্ব পালন করছেন বলে দাবি করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, ‘তিনি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ হয়ে বিদেশ সফর করবেন। সেটা তার প্রয়োজন অনুযায়ী। তবে তিনি চাইলে যে কোনো সময়ে বিদেশ সফর করতে পারেন।’

এ পর্যন্ত এরশাদ বিশেষ দূতের কী কী দায়িত্ব পালন করেছেন, এ প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি তার মতো করে কাজ করছেন। তার দপ্তরের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। তিনি যখন যেটা চাইছেন, সেটা দেয়া হচ্ছে।’

একটি সূত্র থেকে জানা যায়, বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পরে এরশাদ কয়েকটি দেশের ভিসার জন্য আবেদন করলেও সেগুলো নাকচ করে দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চীন সফরের কথা থাকলেও পরবর্তীতে তাকে সে সফরে নেয়া হয়নি। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর মধ্যপ্রাচ্য সফরে রাখা হয়নি এরশাদকে। গত ২৭ অক্টোবর মধ্যপ্রাচ্যের আরব আমিরাতে সফর করেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারের একাধিক এমপি ও মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এসব সফরে থাকলেও এ তালিকায় এরশাদের নাম পাওয়া যায়নি। এজন্য এরশাদ খানিকটা ক্ষুব্ধ বলেও তার ঘনিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা জানায়, এরশাদের সঙ্গে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে। এরশাদ নিজেও এসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কোন্নয়ন করতে আগ্রহী। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো গ্রিন সিগন্যাল পাওয়া যায়নি। দায়িত্ব পালনের সুযোগ এরশাদ কখন পাবেন এ বিষয়ে কিছুদিন আগেও তার দলীয় লোকজন আশা প্রকাশ করেছে। তবে এখন তারা কোনো কথা বলতে আর রাজি নন।



মন্তব্য চালু নেই