‘কুকর্ম করতেই ওবামার দিল্লি আসা’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দিল্লি সফরকে ‘ঐতিহাসিক’ বলা হয়েছিল। সস্ত্রীক ওবামার আগমন উপলক্ষে তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাতে প্রটোকল ভেঙে দিল্লির ইন্দ্রিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হাজির হন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

ওবামার তিন দিনের ভারত সফরের পুরো সময়টা তার সঙ্গে যেভাবে ঘনিষ্ঠপূর্ণ দৃশ্যে হাজির হন মোদি, তাতে দুই দেশের মধ্যেকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে একটি নতুন মাত্রা পেয়েছে বলে মনে করা হচ্ছিল।

কিন্তু সেই ধারণা কিছুক্ষণের মধ্যে বদলে দিয়েছে মঙ্গলবার নয়াদিল্লির সিটি ফোর্ট মিলনায়তনে তরুণদের উদ্দেশে দেওয়া ওবামার এক ভাষণ। বক্তব্যে একটি শক্তিশালী দেশ হিসেবে বিশ্বদরবারে ভারতকে হাজির করতে হলে সর্ব প্রথম সব ধর্মের মানুষের সমধিকার ও সহবস্থান নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন ওবামা। ধর্ম-মত নির্বিশেষে সবাইকে সমান গুরুত্ব দেওয়া, যা এখনও দেশটি পিছিয়ে রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

দেশটিতে জোর করে মুসলিম ও খ্রিষ্টানদের সম্প্রতি ধর্মান্তরিত করার বিষয়টি উদ্বেগের সঙ্গে ওবামার বক্তব্যে উঠে এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

ওবামার বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছে বিরোধী দল কংগ্রেস। দলটি বলছে, মোদি সরকারের কাছে দেশ নিরাপদ নয়। এ কারণেই ভারতে সব ধর্মের মানুষের বসবাসের পথ দিন দিন সংকুচিত হয়ে আসছে বলে এক বিবৃতিতে জানায় দলটি।

কিন্তু মোদির দল ক্ষমতাসীন বিজেপি ও বেশকিছু হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ওবামা ও কংগ্রেসের বক্তব্য মানতে নারাজ । তারা ওই সব বক্তব্য প্রত্যাখ্যানও করেছে। হিন্দুত্ববাদী সংগঠগুলো ওবামার বক্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।

বিজেপির এক মুখপাত্র জানান, সাধারণ প্রবৃত্তি থেকে ওবামা এ বক্তব্য দিয়েছেন। এটা রাজনৈতিক কোনো বক্তব্যও নয়। বিজেপিকে এটাতে জড়ানো উচিতও হবে না। বরং ওবামার ঐতিহাসিক সফরে বিদেশি নীতিতে সফলতা অর্জনের ওপরই গুরুত্বারোপ করেছে বিজেপি। এটাই আলোচনায় তুলে আনা উচিত।

তিনি আরো জানান, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন মূল্যবোধ শেয়ার করেছে। আমাদের উভয়ের এ মূল্যবোধ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের জন্য। বিরোধীরা যদি সরকারের বহুমাত্রিক সফলতাকে হীন দৃষ্টিতে দেখে, তাহলে তারা চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেবে। ওবামার ওই বক্তব্য কংগ্রেসকে সফলতা এনে দেবে- এমনটা মনে করাও হবে চরম ভুল।’

এদিকে ওবামার ওই বক্তব্যকে কড়া ভাষায় সমালোচনা করে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় সয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) নেতা রাকেশ সিনহা এক টিভি চ্যানেলকে বলেন, ‘ওবামা এক জন খিষ্ট্রান ধর্মপ্রাচরক (তাদের ভাষায় কুকর্মকারী) হিসেবে ভারতে এসেছিলেন।’

আরএসএসের ওই বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছে হিন্দুত্ববাদী আরেক সংগঠন সংঘ পরিবার। খ্রিষ্টান মিশনারির পৃষ্ঠপোষক ও তাদের অবস্থান সুসংহত করতেই ওবামা ভারত সফরে এসেছিলেন বলে অভিযোগ করে সংগঠনটি।

এতকিছুর পরও ওবামার ওই সফরের মাধ্যমে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন স্তরে পৌঁছেছে বলে মঙ্গলবার টুইটারে মন্তব্য করেছেন নরেন্দ্র মোদি। একই দিনে হোয়াইট হাউস থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে ‘ঐতিহাসিক’ ওই সফরের জন্য মোদি ও ভারতবাসীকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।

তথ্যসূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া।



মন্তব্য চালু নেই