কী করে বুঝবেন আপনার শরীরচর্চা বাড়াতে হবে?

এক্সারসাইজ মানেই আমরা ভাবি ওজন কমানোর উপায়। আসলে কী তাই? বরং বিষণ্ণতা দূর করা থেকে শুরু করে আয়ু বাড়ানো পর্যন্ত অনেক উপকার পাওয়া যায় ব্যায়াম থেকে। আমাদের জীবনযাত্রা এখন খুবই ঘরকুনো ধরণের। সুস্থ থাকার জন্য ন্যুনতম শারীরিক পরিশ্রমটাও অনেকে করেন না। ফলে বিভিন্ন শারীরিক উপসর্গ দেখা যায়। আপনিও যদি এই উপসর্গগুলোর মুখোমুখি হয়ে থাকেন, তাহলে বুঝে নিতে হবে আপনার আরও সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন। চলুন দেখে নিই এই উপসর্গগুলো।

১) আপনি সব সময় ক্লান্ত থাকেন
যথেষ্ট খাওয়া ও ঘুমের পরেও যদি আপনার সবসময় ক্লান্তি লাগতে থাকে তাহলে হয়তো আপনার বিশ্রামের পরিমাণটা বেশিই হচ্ছে। ইউনিভার্সিটি অফ জর্জিয়ার এক গবেষণা অনুযায়ী, সপ্তাহে ৩ দিন ২০ মিনিট মাঝারি ধরণের অ্যারোবিক ব্যায়াম আমাদের এনার্জি কমানোর বদলে বাড়িয়ে দিতে সক্ষম। সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমকে প্রভাবিত করে এই ব্যায়াম আমাদের শরীরকে উদ্দীপ্ত করে।

২) অকারণে ব্যথায় ভুগছেন আপনি
অনেকেই দেখেন ঘুম থেকে ওঠার পর পিঠ, কোমর, হাঁটু অথবা কাঁধ ব্যথা করছে। অনেকে আবার শুয়ে পড়েন। কিন্তু এই ব্যথা কমানোর সবচাইতে ভালো উপায় হলো শরীরচর্চা। পেশিকে সক্রিয় রাখা, অস্থিসন্ধি নড়াচড়া করা এবং সারা শরীরে রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে দেবার মাধ্যমে ব্যায়াম এসব ব্যথা দূর করতে সক্ষম। এমনকি রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো ব্যথাও নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে কমিয়ে আনা সম্ভব।

৩) আপনি স্ট্রেসে ভুগছেন
ব্যস্ত জীবনযাত্রার কারণে ইদানিং আমাদের স্ট্রেসের পরিমাণটাও বেড়ে গেছে। মানসিক এই স্ট্রেস আমাদেরকে শারীরিকভাবেও অসুস্থ করে ফেলতে সক্ষম। কিন্তু ২০-৩০ মিনিটের শরীরচর্চাই পারে স্ট্রেস অনেকাংশে দূর করতে। আর ব্যায়ামের সাথে সঙ্গীত জুড়ে দিলে সেটা আরও কার্যকরী হতে দেখা যায়।

৪) হরমোনের সমস্যা
হরমোন আমাদের শরীর, চিন্তা সবকিছুকেই প্রভাবিত করে। আর হরমোনের যে কোনো অসংগতি দূর করতে ব্যায়াম দারুণ কার্যকর। উদাহরণস্বরূপ, টেস্টোস্টেরন বাড়ানো, মেটাবলিজম বাড়ানো, ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখা, মস্তিষ্ককে কার্যক্ষম রাখা সবই ব্যায়ামের মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব।

৫) হজমের সমস্যা
বদহজম বা অরুচির সমস্যাগুলো হতে পারে ব্যায়ামের অভাবে। ৩০ মিনিট দৌড়ানো বা হাঁটা আপনার রুচি ফিরিয়ে আনবে, পাশাপাশি খাবার হজম হতেও সহায়তা করবে। অ্যারোবিক এক্সারসাইজ আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস এবং হার্ট রেট বৃদ্ধি করে, এর পাশপাশি আন্ত্রিক পেশীর সক্রিয়তাও বাড়ায়। এতে আপনার খাবার দ্রুত হজম হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সম্ভাবনা কমে।

৬) আপনি সময়ের কাজ সময়ে করতে পারেন না
আপনি কাজ সময়মত শেষ করতে হিমশিম খান, সময়ের সদ্ব্যবহার করতে পারেন না। ব্যায়ামের সাথে এর কী সম্পর্ক? বিশেষজ্ঞরা বলেন, ব্যায়াম করলে আমাদের শরীর ও জীবনযাত্রার দিকে আমাদের মনোযোগ বাড়ে, নিজের বদঅভ্যাসগুলো আমরা বুঝতে পারি এবং এড়িয়ে চলতে পারি, সময়ের সদব্যবহারের দিকে আমাদের মনোযোগ বাড়ে।

৭) আজেবাজে খাবার খাওয়া
ব্যায়াম করলে জাঙ্ক ফুড খাওয়ার ইচ্ছেটাকেও দমিয়ে রাখা সম্ভব হয়। শুধু তাই না, অনেকেই ধূমপান বা মদ্যপানে আসক্ত থাকেন, তাদের এই আসক্তি বা ক্রেভিং বা খাবার ইচ্ছে যেটাই হোক না কেন, তা কমিয়ে আনতে পারে ব্যায়াম। ব্যায়ামের মাধ্যমে এসব পুরনো খারাপ অভ্যাসগুলোকে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব। ব্যায়ামের মাধ্যমে আমাদের মস্তিষ্কে যে ভালো অনুভূতি আসে, তা ধূমপানের মাধ্যমে পাওয়া ভালো অনুভূতির মতই আমাদের সন্তুষ্টি দিতে পারে।

৮) ঘুমের সমস্যা
রাতের বেলায় ঘুমাতে সমস্যা হলে বা, ঘুম বারবার ভেঙ্গে গেলে তার কারণ হতে পারেন দিনের বেলায় আপনি যথেষ্ট সক্রিয় নন। অনিদ্রায় ভোগা মধ্যবয়সী মানুষদের মাঝে এক গবেষণায় দেখা যায়, যারা ব্যায়াম করেন, তারা ১.২৫ ঘণ্টা বেশি ঘুমাতে পারেন।

৯) বিষণ্ণতা
যারা সারাদিন বসে বসে কাটান (কর্মক্ষেত্রে বা শিক্ষাক্ষেত্রে) তাদের জন্য দুঃসংবাদ। কারণ এই বসে থাকার সময়ের সাথে বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হবার যোগসূত্র আছে। দিনে ৭ ঘন্টার বেশি বসে থাকার ফলে বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বাড়ে ৪৭ শতাংশ। এই ঝুঁকি দূর করতে পারে ব্যায়াম।



মন্তব্য চালু নেই