কীভাবে যৌনমিলন করলে আপনি পুত্রসন্তান লাভ করবেন, ভারতীয় সংবাদপত্র জানাল ‘আশ্চর্য’ কৌশল

কন্যাভ্রূণ হত্যা রুখতে দেশে ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ পরীক্ষা আইনত নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণ ও নারীসম্মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশজুড়ে চলছে প্রচার। কিন্তু তার পরেও দেশের জনগণের একটা বড় অংশ যে কন্যাসন্তানের তুলনায় পুত্রসন্তানই বেশি কামনা করে, সম্প্রতি পরোক্ষে তা প্রমাণিত হল একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন মারফত। একটি মালয়ালাম সংবাদপত্রে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনের শিরোনাম— ‘কীভাবে পুত্রসন্তান গর্ভে ধারণ করবেন? রইল কয়েকটি উপায়’।

‘মঙ্গলম’ নামের মালয়ালাম দৈনিকে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু যে কী, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রতিবেদনে কিছু অদ্ভুত কৌশলের কথা বলা হয়েছে, এবং দাবি করা হয়েছে, এই সমস্ত কৌশল অবলম্বন করলে পুত্রসন্তান লাভের সম্ভাবনা বাড়বে। কী ধরনের কৌশলের কথা বলছে এই প্রতিবেদন? রইল কয়েকটি নমুনা—

১. বলা হচ্ছে, সপ্তাহের প্রথম, তৃতীয়, পঞ্চম ও সপ্তম দিনে অবশ্যই স্বামী-স্ত্রীর মিলিত হওয়া উচিত, কারণ এই দিনগুলোতেই নাকি পুরুষের বীর্য পুত্রসন্তানের জন্ম দেওয়ার উপযোগী হয়ে ওঠে।

২. স্বামী এবং স্ত্রী— দু’জনেই যেন প্রাতরাশ বা ব্রেকফাস্ট খেতে না ভোলেন।

৩. স্ত্রী যেন প্রচুর পরিমাণে খাসির মাংস, শুকনো আঙুর এবং নোনতা খাবার খান।

৪. স্বামী যেন অম্ল বা অ্যাসিড-যুক্ত খাবার বেশি না খান, কারণ তাহলে বীর্যের কার্যক্ষমতা হ্রাস পাবে, এবং সেই সঙ্গে কমে যাবে পুত্রসন্তান লাভের সম্ভাবনা।

৫. স্ত্রীয়ের বাঁ পাশ ফিরে ঘুমনো উচিৎ, এবং তাঁর মুখ থাকা উচিত পশ্চিম দিকে।

বলা বাহুল্য, এই সমস্ত পরামর্শের কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। কারণ বিজ্ঞান বলে, কোনও দম্পতি পুত্রসন্তান লাভ করবেন, নাকি কন্যাসন্তান— সেটা তাঁদের হাতে নেই।

এরকম উদ্ভট একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পরে যা হওয়ার তা-ই হয়— অর্থাৎ ওয়েব দুনিয়া জুড়ে শুরু হয়ে যায় এই প্রতিবেদন ও সংবাদপত্রটিকে নিয়ে হাসিমস্করা। গোটা বিষয়টিকেই নারীদের পক্ষে অবমাননাকর বলে দাবি করে অনেক নারীবাদী সংগঠন ‘মঙ্গলম’-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদেও সরব হন। শেষ পর্যন্ত সংবাদপত্রটি বাধ্য হয় নিজেদের ওয়েবসাইট থেকে প্রতিবেদনটি সরিয়ে নিতে। কিন্তু তার আগেই সেই প্রতিবেদন নানা ভাষায় অনুদিত হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে ইন্টারনেট জগতের আনাচে-কানাচে।

এখনও এই দেশে ১০০০ পুরুষ প্রতি নারীর সংখ্যা মাত্র ৯৪০। বেআইনিভাবে ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ ও কন্যাভ্রূণ হত্যার ঘটনা এই চিত্রকে আরও চিন্তাজনক করে তুলছে। সেই কারণেই সরকারের তরফে ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও ‘-এর মতো প্রকল্প চালু করা হচ্ছে। কিন্তু তারপরেও দেশের একটা বড় অংশের কাছে কন্যাসন্তান যে অনভিপ্রেত রয়ে গিয়েছে, এই ধরনের প্রতিবেদন তারই প্রমাণ— এমনটাই মনে করছেন সমাজবিজ্ঞানীরা।



মন্তব্য চালু নেই