কিয়ামতের মাঠে আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করবেন যেসব বান্দারা

মহান আল্লাহ তা’য়ালা মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে তাঁর ইবাদত করার জন্যে। এ বিষয়ে তিনি মানুষকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বহু আদেশ, উপদেশ ও জ্ঞান দান করেছেন এবং সেগুলি মেনে চলার কঠোর আদেশ দিয়েছেন। কোন কারণবশতঃ মানুষ ভুল করে ফেললে, তওবার মাধ্যমে নিজেকে সংশোধন করে সঠিক পথে ফিরে আসার সুযোগ রয়েছে। এরপরেও কেউ আল্লাহর আদেশ অমান্য করলে সে শাস্তিযোগ্য অপরাধী হিসাবে গণ্য হবে।

আল্লাহর নিকট প্রত্যাবর্তন বা সমবেত হওয়ার জন্য একটি সময় নির্ধারিত আছে। কোন মানুষ বা ফেরেশতা কূলের কেউ তা জানে না। নির্ধারিত সেই সময়েই কিয়ামত সংঘটিত হবে এবং মানুষের অজান্তেই হঠাৎ তা এসে যাবে। কিয়ামত দিবসের ভয়াবহতা অবর্ণনীয়। আল্লাহর নিকট মানুষের সমবেত হওয়াও সেদিনের জন্য একটি কঠিন কাজ।

এক প্রত্যাদেশে আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর প্রিয় হাবীব (ছাঃ)-কে প্রত্যাদেশ করেন, فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَكُن مِّنَ السَّاجِدِيْنَ، وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّى يَأْتِيَكَ الْيَقِيْنُ- ‘অতএব তুমি তোমার প্রতিপালকের প্রশংসা বর্ণনা কর এবং সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। আর তুমি তোমার প্রতিপালকের ইবাদত কর, যতক্ষণ না মৃত্যু তোমার নিকট উপস্থিত হয়’ (হিজর ১৫/৯৮, ৯৯)।

মহান আল্লাহ আরও বলেন, إِنَّ اللهَ سَمِيْعٌ بَصِيْرٌ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু শোনেন, সবকিছু দেখেন’ (লোকমান ৩১/২৮; হজ্জ ২২/৭৫)। তাঁর শক্তির বর্ণনায় তিনি বলেন, وَالْأَرْضُ جَمِيْعاً قَبْضَتُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَالسَّماوَاتُ مَطْوِيَّاتٌ بِيَمِيْنِهِ ‘কিয়ামতের দিন গোটা পৃথিবী থাকবে তাঁর হাতের মুঠোয় এবং আসমান সমূহ ভাঁজ করা অবস্থায় থাকবে তাঁর ডান হাতে’ (যুমার ৩৯/৬৭)।

আল্লাহ তা‘আলা হ’লেন সর্বোত্তম সুন্দর সত্তা। উপরের আয়াত কয়টি তাঁর সুন্দরতম আকৃতির নমুনা স্বরূপ পবিত্র কুরআনে লিপিবদ্ধ হয়েছে। তিনি সর্বশক্তির আধার। এসব আল্লাহর ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ।

মহিমাময় আল্লাহর পক্ষ হতে আরও একটি মহাসুসংবাদ রয়েছে। তিনি বলেছেন, কিয়ামতে বিচারের দিনে কোন একক (সুনির্দিষ্ট) সময়ে তিনি প্রতিটি বান্দার বা ব্যক্তির সাথে পৃথক বা একাকী সাক্ষাৎ করবেন। তাঁর এই অমূল্য বাণীর অন্তরালে যে অসীম তাৎপর্য লুক্কায়িত আছে, তা একমাত্র তিনিই জানেন। আমরা শুধু তাঁর প্রচারিত ও ঘোষিত উপদেশ ভান্ডার হ’তে প্রাপ্ত জ্ঞানের আলোচনা করব।

মহাবিজ্ঞ আল্লাহ তা‘আলা জানিয়েছেন বিচারের দিনে তিনি প্রতিটি বান্দার সাথে পৃথক পৃথকভাবে বা একাকী সাক্ষাৎ করবেন, তার সাথে কথাবার্তা বলে তার দোষগুণ জানতে চাইবেন। প্রকৃত ঈমানদার বান্দা অতীব ভীত ও বিনীত স্বরে আল্লাহর সম্মুখে সত্য কথা বলবে। এমনকি অনেক দোষ ও পাপের কথাও স্বীকার করবে এবং অনেক অপরাধের পরও জান্নাতে স্থান পাবে। কিন্তু যারা মিথ্যাবাদী তারা মিথ্যা কথা দ্বারা নিজেদের অপরাধ ঢাকতে চাইবে, এতে অসন্তুষ্ট হয়ে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে চরম শাস্তি দেয়ার জন্য জাহান্নামে প্রেরণ করবেন।

মহান আল্লাহ বলেন, وَاتَّقُواْ اللهَ وَاعْلَمُواْ أَنَّكُم مُّلاَقُوْهُ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِيْنَ ‘আল্লাহকে ভয় কর। জেনে রেখ তোমাদের সবাইকে তাঁর সম্মুখে হাযির হ’তে হবে। আর তুমি বিশ্বাসীদের সুসংবাদ দাও’ (বাক্বারাহ ২/২২৩)। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন, إِنْ كُلُّ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ إِلَّا آتِي الرَّحْمَنِ عَبْداً، لَقَدْ أَحْصَاهُمْ وَعَدَّهُمْ عَدّاً، وَكُلُّهُمْ آتِيهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَرْداً- ‘নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে এমন কেউ নেই, যে দয়াময়ের নিকটে উপস্থিত হবে না দাস রূপে। তিনি তাদেরকে গণনা করেছেন এবং তাদেরকে ভালভাবে গুনে রেখেছেন। আর কিয়ামত দিবসে তাদের সবাই তাঁর নিকটে আসবে একাকী অবস্থায়’ (মারিয়াম ১৯/৯৩-৯৫)।

এ বিষয়ের প্রতি আরও অধিক দৃষ্টি আকর্ষণের প্রয়াসে সর্বজ্ঞ আল্লাহ বলেন, اللهُ الَّذِيْ رَفَعَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِيْ لأَجَلٍ مُّسَمًّى يُدَبِّرُ الأَمْرَ يُفَصِّلُ الآيَاتِ لَعَلَّكُم بِلِقَاءِ رَبِّكُمْ تُوقِنُوْنَ ‘আল্লাহ তিনি, যিনি ঊর্ধ্বদেশে স্তম্ভ ছাড়াই আকাশ মন্ডলীকে স্থাপন করেছেন যা তোমরা দেখছ। অতঃপর তিনি আরশে সমুন্নীত হন এবং সূর্য ও চন্দ্রকে অনুগামী করেন। প্রতিটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত সন্তরণ করবে। তিনি সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি নিদর্শন সমূহ ব্যাখ্যা করেন যাতে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাতের ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাসী হ’তে পার’ (রা‘দ ১৩/২)।

তিনি আরো বলেন, الم، أَحَسِبَ النَّاسُ أَنْ يُتْرَكُوْا أَنْ يَقُوْلُوْا آمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُوْنَ، وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللهُ الَّذِيْنَ صَدَقُوْا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِيْنَ، أَمْ حَسِبَ الَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ السَّيِّئَاتِ أَن يَسْبِقُوْنَا سَاء مَا يَحْكُمُونَ، مَن كَانَ يَرْجُو لِقَاء اللهِ فَإِنَّ أَجَلَ اللهِ لَآتٍ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ- ‘মানুষ কি মনে করে যে, তারা একথা বলেই অব্যাহতি পেয়ে যাবে যে, আমরা বিশ্বাস করি এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? আমি তাদেরকেও পরীক্ষা করেছি, যারা তাদের পূর্বে ছিল। আল্লাহ অবশ্যই জেনে নিবেন যারা সত্যবাদী এবং নিশ্চয়ই জেনে নিবেন মিথ্যুকদেরকে। যারা মন্দ কাজ করে, তারা কি মনে করে যে, তারা আমার হাত থেকে বেঁচে যাবে? তাদের ফায়ছালা খুবই মন্দ। যে আল্লাহর সাক্ষাৎ কামনা করে, আল্লাহর সেই নির্ধারিতকাল অবশ্যই আসবে। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী’ (আনকাবূত ২৯/১-৫)।



মন্তব্য চালু নেই