কিশোরগঞ্জে একমাত্র বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ প্রায়

সরকারের সকল সুযোগ সুবিধায় পরিচালিত নীলফামারীর একমাত্র বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ প্রায়। কিশোরগঞ্জ উপজেলার পুটিমারী ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামে এই বিদ্যালয়টিতে ১২ জন শিক্ষক দিয়ে নাম মাত্র পরিচালনা করে সরকারের সমুদয় অনুদান হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়টি দুপুর সাড়ে ২টা পর্যন্ত খোলা থাকার কথা থাকলেও বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার মধ্যে তা বন্ধ করে চলে যায় প্রধান শিক্ষক।

অভিযোগে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, প্রস্তুতিমূলক,প্রাক-প্রাথমিক,প্রাথমিক,বৃত্তিমূলক ও গৃহভিত্তিক ৫টি শ্রেণী বিন্যাসে বিদ্যালয়টি চালু করা হয়। যা চারদলীয় জোট সরকারের সময় ২০০১ সালের শেষের দিকে নীলফামারী ৩ আসনের জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য (বর্তমানে প্রয়াত) মিজানুর রহমান চৌধুরী জামায়াত শিবির অধুষ্যিত কালিকাপুর গ্রামে বিদ্যালয়টি স্থাপন করেন।

পাশাপাশি এমপিও ভুক্তের মাধ্যমে সরকারী সকল সুযোগ সুবিধায় আওতায় নিয়ে আসেন। এলাকার সচেতনমহল অভিযোগ করেন আর এ জন্য শিক্ষক নিয়োগে প্রাধান্য দেয়া হয় দলীয় কর্মীদের। বর্তমানে ওই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক সহ ১১ জন শিক্ষক জামায়াত সমর্থক ও একজন শিক্ষক বিএনপির সমর্থক। বর্তমানে খাতাপত্রে বিদ্যালয়ে ৫টি শ্রেণী বিন্যাসে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ৭২ জন ছাত্র ও ৪৪ জন ছাত্রী সহ মোট ১১৬ জন শিক্ষার্থী দেখানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ওই বিদ্যালয়ে কোন শিক্ষার্থীকে খুঁজে পাওয়া যায়না।

এলাকাবাসী জানায় সাপ্তাহিক ছুটি বাদে প্রতিদিন বিদ্যালয়টি সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত ক্লাশ হবার কথা থাকলেও শিক্ষার্থী না থাকায় শিক্ষকরাও নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসেন না। বাইসাইকেলে কিছু শিক্ষক মাঝে মধ্যে এসে রুমের ভেতর গল্প গুজব করে চলে যায়। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় স্কুল বন্ধ করে শিক্ষকরা বাড়ির পথে চলে যায় বলে এলাকাবাসী জানায়।

এলাকার রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যাক্তি জানান,বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টিতে কাগজে কলমে ১১৬ জন ছাত্র-ছাত্রী থাকলেও বাস্তবে কোন ছাত্র-ছাত্রী চোখে পড়ে না এখানে। প্রতিমাস ১২জন শিক্ষক নিয়মিত বিদ্যালয়ে না এসেও সরকারের সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে। মাঝে মাঝে তাদের রাজনীতির মাঠেও দেখা যায়। অপর দিকে এক কলেজ ছাত্র সাইফুল ইসলাম বলেন,কিশোরগঞ্জের মধ্যে একমাত্র বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি নামে আছে কিন্তু কোন কাজে নেই। বাস্তবতায় বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের চেয়ে শিক্ষকের সংখ্যাই বেশী মনে হয়। তাছাড়া এলাকার অনেক প্রতিবন্ধী ছেলে ও মেয়েদের এই বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে দেখা যায়না।

তার অভিযোগ মতে বিদ্যায়লটির জন্য সরকারের দেয়া লাখ লাখ টাকার অনুদান জামায়াত বিএনপি সমর্থিত শিক্ষকরা লুটেপুটে খাচ্ছে। অভিযোগ মতে পুটিমারী ইউনিয়নের জামায়াতের আমির মওলানা মহির উদ্দিনের জামাতা ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনিও জামায়াত করেন। এ ছাড়া বিদ্যালয়ে একই পরিবারের জামায়াত সমর্থিত চার সদস্য শিক্ষকের চাকুরী করছেন। বলতে গেলে বিদ্যালয়টি জামায়াতের নিয়ন্ত্রনে বলে অভিযোগ তোলা হয়।

এদিকে সাংবাদিকরা সেখানে গিয়ে ফিরে আসার পর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ১৪/১৫ জন শিক্ষার্থীকে এখন প্রতিদিন বিদ্যালয়ে ধরে ধরে নিয়ে আসেন। যা এর আগে কোন দিন দেখতে পাওয়া যায়নি।

গত ৩ দিন আগে সরেজমিনে দুপুর ১২টা ৬ মিনিট ওই বিদ্যালয়ে গেলে সে সময় ৫ জন শিক্ষক কে অফিস রুমে বসে গল্প করতে দেখা যায়। শিক্ষার্থী নেই কেন জানতে চাইলে খাতায় ১৭ জন উপস্থিতি দেখানো হলেও বিদ্যালয়ে কোন শিক্ষার্থী খুঁজে পাওয়া যাযনি।

এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুকুল হোসেন বলেন,বিদ্যালয়ে প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে। কিন্তু অবরোধ আর হরতালে শিক্ষার্থী আসতে পারেনি। এখানকার সকল শিক্ষক জামায়াত ও বিএনপি সমর্থক জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন এখানে যারা চাকুরী করছেন তারা কোন দলের সাথে জড়িত নয় এবং কোন রাজনীতি করেন না।



মন্তব্য চালু নেই