কিডনি ও চোখের ক্ষতি করে ডায়াবেটিস

টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা প্রথম দিকে তেমন কোনো সমস্যায় পড়ে না। তবে ধীরে ধীরে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে প্রভাব ফেলতে শুরু করে ডায়াবেটিস। হৃদপিণ্ড, রক্তনালী, স্নায়ু, চোখ এবং কিডনিতে সবেচেয়ে বেশি আক্রমণ করে টাইপ-২ ডায়াবেটিস। তাই প্রথম থেকেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ না করলে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনবেন। ডায়াবেটিসের কারণে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক জটিলতার কথা বলেছেন কলকাতা এসকেকেএম হাসপাতালের এনডোকিনিকলোজি বিভাগের প্রধান ডা. শুভঙ্কর চৌধুরী।

হৃদপিণ্ড এবং রক্তনালী: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পারলে যে সমস্যাটি অধিকাংশ ব্যক্তির হয় তা হচ্ছে, হৃদরোগ এবং রক্তনালীর সমস্যা। তাছাড়া, হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি দ্বিগুণ বেড়ে যায়।

লক্ষণ: হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকে আক্রান্ত না হলে আপনি হয়তো আগে থেকে এর সতর্কবার্তা নাও পেতে পারেন। এমনকি ডায়াবেটিস রোগীদের হার্ট অ্যাটাকের সময় ব্যথা নাও হতে পারে। পায়ের বৃহৎ রক্তনালীতে সমস্যা হলে পায়ের শিরায় বা পেশিতে টান পড়তে পারে, ত্বকের রঙ পরিবর্তিত হতে পারে। এমনকি গ্যাংগ্রিন হতে পারে।

চোখের ক্ষতি: ডায়াবেটিস রেটিনার রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। যা পরবর্তী সময়ে অন্ধত্বের কারণ হতে পারে। ডায়াবেটিস দৃষ্টিশক্তির গুরুতর সমস্যাও তৈরি করতে পারে যেমন, চোখে ছানি পড়া, গ্লুকোমা ইত্যাদি।

কিডনি সমস্যা: কিডনি মানবদেহের ছাঁকনি হিসেবে পরিচিত। আমাদের রক্ত থাকা বর্জ্য অপসারণ করে কিডনি। তার জন্য কিডনিতে রয়েছে লাখ লাখ ক্ষুদ্র রক্তনালী গুচ্ছ। ডায়াবেটিস সূক্ষ্ম ছাঁকনি পদ্ধতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। গুরুতর ক্ষতি কিডনি ফেইলর এবং অপরিবর্তনীয় কিডনি রোগের কারণ হতে পারে। যার কারণেই কিডনি ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে।

স্নায়ুর ক্ষতি: অতিরিক্ত চিনি স্নায়ুর ক্ষুদ্র রক্তনালীর(ক্যাপিলারি- যা স্নায়ুর পুষ্টি জোগায়) দেয়ালগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। বিশেষ করে পায়ের তীব্র যন্ত্রণা, অসাড়তা, জ্বলা ইত্যাদি। এই সমস্যাগুলো মূলত পায়ের পাতা বা আঙ্গুল থেকে শুরু হয়। ধীরে ধীরে ব্যথা উপরের দিকে সংক্রমিত হতে থাকে। যাকে ‘পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি’ বলা হয়। রক্তে শর্করার পরিমাণ সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হলে ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সব চেতনা বা অনুভূতি ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

পায়ের ক্ষতি: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে পায়ের পাতার স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং রক্তপ্রবাহ কমিয়ে দিতে পারে। পায়ের পাতায় বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। পায়ের কোথাও কেটে গেলে, ফোসকা পড়লে, ক্ষত স্থানের চিকিৎসা না করালে মারাত্মক সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। যাতে পা, পায়ের পাতা, আঙ্গুলের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতি হতে পারে। সংক্রমণের মাত্রা অত্যাধিক হলে অনেক সময় এসব অঙ্গ কেটে ফেলে দিতে হয়।



মন্তব্য চালু নেই