কালীগঞ্জ বাফার গুদামের ১১০০ মেট্রিক টন সার লোপাট

এসএম হাবিব, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি: ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ বিসিআইসির বাফার গুদাম থেকে সার লোপাটের চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাসঁ হলেও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এই সার লোপাটের সাথে বাফার গুদামের তৎকালীন ইনচার্জসহ কতিপয় কর্মচারী ও পরিবহন ঠিকাদার জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে আসলে কত কোটি টাকার সার লোপাট হয়েছে তা নিয়ে নানা সন্দেহ দানা বেধে উঠেছে।

সরকারী হিসেবে ৫৪৭ মেট্রিক টন সারের হিসেব না মেলার কথা বলা হলেও লোপাটের পরিমান আরো বাড়তে পারে বলে আশংকা করেছেন বাফার গুদামের ইনচার্জ মাসুদ রানা। তিনি আশংকা প্রকাশ করে বলেছেন, বস্তা গুনলে আরো ৪/৫’শ মেট্রিক টন সার কমতে পারে। তার এই হিসেবে সঠিক হলে সর্বমোট ১১০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার লোপাটের ঘটনা ঘটতে পারে। যার মুল্য প্রায় ৩ কোটি ৭৪ লাখ (সরকারী মুল্যে) টাকার বেশী।

একটি সংঘবদ্ধ চক্র কৌশলে সার বিক্রি করে বিপুল অংকের এ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে ১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা মুল্যের ৫৪৭ মেট্রিক টন সার আত্মসাতের সত্যতা মিলেছে। গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানান, গত ১৮ মে বিসিআইসির অতিরিক্ত প্রধান ব্যবস্থাপক (বিপনন) মঞ্জুর রেজার নেতৃত্বে ৪ সদস্যর একটি তদন্ত দল ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ বাফার গুদামে মওজুত ইউরিয়া সার বস্তা গননা ও ওজন করেন। এ সময় ৫৪৭ দশমিক ৪৯ মেট্রিক টন সারের ঘাটতি ধরা পড়ে।

যার সরকারী মুল্য প্রায় ১কোটি ৭৬ লাখ টাকা। সুত্র মতে বর্তমান মওজুত (১৮ সেপ্টম্বর পর্যন্ত) ৫৩২৭ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ৪৫হাজার ৫৬০ বস্তায় (২২৭৮ মেট্রিক টন) ব্যবহার অনুপযোগী কম ওজনের সার রয়েছে। বর্তমান গুদাম ইনচার্জ বলেছেন, সঠিক ভাবে ওজন করা হলে অন্তত আরো ৪ থেকে ৫”শ মেট্রিক টন সারের ঘাটতি ধরা পড়বে। এর আগে ২০০৯ সালের দিকে ২১৩ মেট্রিক টন সার আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। সব মিলিয়ে প্রায় ১১০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার খাতা কলমে থাকলেও গুদামে নেই মর্মে সংশ্লিষ্ট সুত্র নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে অনুসন্ধ্যানে বেরিয়ে আসে আরো লোমহর্ষক খবর। প্রাপ্ত তথ্য মতে ২০০৯ সাল থেকে গুদাম থেকে পরিকল্পিত ভাবে সার গায়েব হতে থাকে। সে সময় সার কেলেংকারী সংক্রান্ত খবর বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশ হয়। ২১৩ মেট্রিক টন গায়েব করার খবর সে সময় ফাস হয়ে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১০ সাল থেকে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের জুন মাস পর্যন্ত আত্মসাৎ করা হয় আরো ৫৪৭ দশমিক ৪৯ মেট্রিক টন সার। প্রাপ্ত তথ্য মতে গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে ওই সময়ে আবুল কালাম আজাদ (বর্তমানে ঘোড়াশাল সার কারখানায় কর্মরত), ফজর আলী (বর্তমানে ঘোড়াশাল সার কারখানায় হিসাব বিভাগে কর্মরত), জালাল উদ্দিন ও একাউন্টস বিভাগের জিয়াউর রহমান অত্র স্টেশনে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে লোমহর্ষক সার কেলেংকারীর এ ঘটনা ঘটে। জানা যায় বিসিআইসি’র উর্দ্ধতন কতৃপক্ষ বিষয়টি টের পেয়ে ২০১৫ সালের ৯ নভেম্বর সারা দেশের ২৪ টি বাফার গুদামে সংরক্ষিত ইউরিয়া সার বস্তা গননার জন্য প্রতি জেলায় একজন করে নিবার্হী ম্যাজিজষ্ট্রেট কে প্রধান করে ৪ সদস্যর কমিটি গঠন করা হয়। অজ্ঞাত কারনে ওই কমিটি তাদের কার্যক্রম করতে পারেনি।

এতে সংঘবদ্ধ চক্রটি আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে এবং পরিকল্পতি ভাবে সার আত্মসাতের ঘটনা ঘটে থাকে।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায় চলতি বছরের ১৮ মে বিসিআইসি কর্তৃপক্ষ ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ বাফার গুদামের মজুদ নিরীক্ষন করেন। এ সময় ফাঁস হয়ে পড়ে প্রকৃত আত্মসাতের খবর। অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় বাফার গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ কতিপয় পরিবহণ ঠিকারদার প্রতিষ্ঠান ও চিহ্নিত কয়েক জন অসৎ সার ডিলার চক্রটির সাথে জড়িত। ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলায় নিয়োগ করা ২১৫ জন তালিকাভুক্ত সার ডিলার রয়েছেন। এরা অত্র গুদাম থেকে সার সরবরাহ নিয়ে থাকেন।

ডিলারদের অভিযোগ ঘুষ না দিলে নিন্মমানের জমাট বাধা সার দেয়া হয় তাদের। সেই সাথে সারের বস্তায় ওজন কম দেয়া হয়।

সুত্র মতে ডিলাদের কাছে প্রতি বস্তা ইউরিয়া সারের দাম নেয়া হয় মাত্র ৭০০ টাকা। তৃণমুলে সেই সার সর্বচ্চো ৮০০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। আর্ন্তজাতিক বাজারে প্রতি টন ইউরিয়ার মুল্য কমপক্ষে ৩৪ হাজার টাকা। সেই হিসেবে প্রতি টন সারে সরকার কুড়ি হাজার টাকার বেশী করে ভুর্তুকি দিয়ে থাকে।

এই রিপোর্ট লেখার সময় ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক ও জেলা সার বরাদ্দ কমিটির সভাপতি মোঃ মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি শক্ত কমিটি গঠন করার প্রস্তুতি চলছে। ইতিমধ্যে কালীগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার শাহনাজ পারভিন গুদাম পরিদর্শন করেছেন বলে জেলা প্রশাসক জানান।



মন্তব্য চালু নেই