কারাগারে কেমন আছেন ছাত্রলীগের সাবেক তুখোড় নেতা ও ডাকসু সভাপতি মান্না?

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় এক বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। আওয়ামী লীগের একসময়ের সাংগঠনিক সম্পাদক মান্নার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি সরকার উৎখাতে ষড়যন্ত্র ও সেনাবাহিনীকে বিদ্রোহে উসকানি দেয়ার চেষ্টা করেছেন। এসব অভিযোগে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহসহ দুটি মামলার তদন্ত চলছে।

কারাগারে কেমন আছেন ছাত্রলীগের সাবেক তুখোড় নেতা ও ডাকসু সভাপতি মান্না?

পারিবারিক ও তার আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে, নানা রোগে এই রাজনীতিক এখন বিপর্যস্ত। অন্যসব আসামির মতো মেঝেতেই থাকতে হচ্ছে তাকে।

যদিও মান্নার জীবনে কারাবাস নতুন নয়; তবে রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে তিনি আগে কারাগারে গেছেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময়ও গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যেতে হয়েছে তাকে। কিন্তু এবার জোড়া মামলায় গত এক বছর ধরে তিনি কারাগারে বন্দি।

পরিবার ও মান্নার রাজনৈতিক সহযোগীদের অভিযোগ, তাকে কারাগারে আটকে রেখে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।

পারিবারিক সূত্র জানায়, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলায় চোখে স্প্লিন্টারের আঘাত পান মান্না। এ কারণে নিয়মিত ল্যান্স ব্যবহার করতেন আওয়ামী লীগের একসময়কার এই নেতা। হাঁটুর ব্যথার কারণে থেরাপি নিতেন। কারাগারে মেঝেতে থাকতে দেয়া এবং এক বছর ধরে সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছেন তিনি।

মান্নার স্ত্রী মেহের নিগার জানান, “তার (মান্না) প্রতি এমন অন্যায় আচরণে আমি ক্ষুব্ধ হব, না আতঙ্কিত, বুঝতে পারছি না। এটাও বুঝতে পারছি না দেশের আইনের প্রতি কতটুকু শ্রদ্ধাশীল হব। ক্ষুব্ধ হলে বিচার-প্রক্রিয়া যদি আরো বাধাগ্রস্ত হয়, সে আতঙ্ক তো আছেই।”

এ ব্যাপারে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার নেসার আলম মুকুলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তা তাতে সাড়া দেননি।

গত বছর মান্নাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে নেয়ার কয়েক দিন পর গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (সিসিইউ) ভর্তি করা হয়েছিল। বুকে ব্যথা অনুভব করায় তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয় বলে তখন জানিয়েছিল কারা কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা জানান, মান্না উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার পিঠে ব্যথার সমস্যা আছে।

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের সরকারবিরোধী হরতাল-অবরোধের সময় গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার দুটি ফোনালাপ ফাঁস হয়। তাতে দাবি করা হয়, ফোনালাপের অপর প্রান্তের দুজনের একজন হলেন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা। বিষয়টি তখন গণমাধ্যমেও প্রচারিত হয়। তাতে দাবি করা হয়, সরকারবিরোধী আন্দোলন আরও চাঙ্গা করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘লাশ’ফেলার পরামর্শ দিয়েছেন মান্না।

ফাঁস হওয়া অপর ফোনালাপে মান্না অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী এক ব্যক্তির সঙ্গে দেশে দেশে চলমান পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের বিষয়ে আলোচনা করেন বলে দাবি করা হয়।

ফেনালাপ ফাঁস হওয়ার দুই দিন পর ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর ধানমন্ডির স্টার কাবারের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মান্নাকে। ওই রাতেই গুলশান থানার অপারেশন অফিসার উপপরিদর্শক (এসআই) শেখ সোহেল রানা বাদী হয়ে মান্না ও অজ্ঞাতনামা একজনকে আসামি করে মামলা করেন। দণ্ডবিধির ১৩১ ধারায় মামলা নম্বর ৩২।

মামলার এজাহারে মান্নার বিরুদ্ধে ‘সেনাবাহিনীকে উসকানি দেয়াসহ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের’অভিযোগ আনা হয়।

দিন দশেক পর ৬ মার্চ একই থানায় আরেকটি মামলা করা হয় মান্নার বিরুদ্ধে। দ্বিতীয় মামলায় মান্নার পাশাপাশি সাদেক হোসেন খোকাকেও আসামি করা হয়। এ মামলায় দণ্ডবিধির ১২০-বি/১২১-এ/১২৪-এ ধারায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়।

পুলিশের করা এই দুই মামলার তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মাহফুজুল ইসলাম। তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমান মান্নার বিরুদ্ধে করা দুটি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। এ বিষয়ে আদালতে অগ্রগতির প্রতিবেদনও দেওয়া হয়েছে।

এক বছরে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া প্রসঙ্গে এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, “আমরা দ্রুত সব মামলার তদন্ত শেষ করার চেষ্টা করি। এই মামলাও তার ব্যতিক্রম নয়।”

মান্নার জামিন বিষয়ে জানতে চাইলে তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান বলেন, “পুলিশ মান্নার রিমান্ডের আবেদন করেছিল। ওই আবেদনের বিরুদ্ধে আমরা হাইকোর্টে যাই। হাইকোর্ট তাকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।”

মান্নার আইনজীবী বলেন,“নিয়মানুযায়ী রিমান্ডের আবেদন থাকলে কোনো আসামির হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করা যায় না। তাই আমরা প্রথমে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে তার জামিনের আবেদন করি। ওই আবেদন নাকচ হয়। এরপর আমরা মহানগর দায়রা জজ আদালতে তার জামিনের আবেদন করি। আগামী ২ মার্চ একটি মামলার জামিনের শুনানি রয়েছে।”

আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিলের আগে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন মান্না। গত কাউন্সিলে তিনি আর কোনো পদ পাননি। এরপর দলের সঙ্গে তার দূরত্ব বাড়তে থাকে। তবে তিনি যেমন আনুষ্ঠানিকভাবে দল ছাড়েননি, তেমনি দলও তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অব্যাহতি দেয়নি। আওয়ামী লীগের গত আমলের সময় সমমনা বিশিষ্টজনদের নিয়ে মান্না গড়ে তোলেন নাগরিক ঐক্য নামের একটি সংগঠন। ঢাকাটাইমস



মন্তব্য চালু নেই