কামারুজ্জামানের ফাঁসি নিয়ে ধোঁয়াশা

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মাদ কামারুজ্জামানের আপিলের চূড়ান্ত রায় ফাঁসির আদেশ কার্যকর করা নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। কেউ মনে করছেন আজ-কালের মধ্যেই ফাঁসি, আবার কেউ বলছেন, ফাঁসি কার্যকর করতে বাদ রয়েছে অনেক আইনী প্রক্রিয়া।

অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে ফাঁসি কার্যকরের বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা না হলেও কারা কর্তৃপক্ষকে যাবতীয় প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

বুধবার সন্ধ্যায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘রায় কার্যকর করার আগে আসামির কাছে রায়ের সংবাদ পৌঁছতে হবে। তারপর তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে নিজের ভুল স্বীকার করে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারেন। এ অধিকার তার আছে।’

তবে আসামি কামারুজ্জামানের কাছে রায়ের সংবাদ পৌঁছেছে কিনা তা জানাতে পারেননি আইনমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘আসামি রায় শোনার পর এক সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এ অধিকার তার রয়েছে।’

তবে তিনি জানান, ফাঁসি কার্যকর করার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে যাবতীয় প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। এর আগে তিনি কারা মহাপরিচালক (ডিআইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

কামারুজ্জামান আপিলের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন (রিভিউ পিটিশন) করার সুবিধা পাবেন কি না, তা নিয়েও চলছে তর্ক-বিতর্ক। যুক্তি তুলে ধরছেন রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।

একদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলছেন, কামারুজ্জামান রিভিউ করতে পারবেন না। অন্যদিকে আসামি পক্ষ বলছে, সংবিধানের (১০৫) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কামারুজ্জামান রিভিউয়ের সুযোগ পাবেন।

তবে কামারুজ্জামান তার রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করার সুযোগ না পেলেও রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সুযোগ পাবেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

এদিকে কামারুজ্জামানের আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা।

রায়ের কপি আসামির হাতে কবে পৌঁছাবে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেছেন, ‘এটা আদালতের বিষয়। রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি নাকি সার সংক্ষেপ দেয়া হবে তাও আদালতের বিষয়।’

কারাবিধি অনুসারে রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি বা সার সংক্ষেপ আপিল বিভাগ থেকে রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালে যাবে। এরপর ট্রাইব্যুনাল মৃত্যু পরোয়ানা জারি করবেন। পরোয়ানার কপি কারা কর্তৃপক্ষ ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যাবে। এরপর ফাঁসি কার্যকরের সম্ভাব্য তারিখ ও সময় উল্লেখ করে কারা কর্তৃপক্ষ স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে একটি আবেদন পাঠাবে। আবেদনটি হবে রাষ্ট্রপতি ও সরকার বরাবর। এর এক সপ্তাহের মধ্যে আবেদনের কোনো জবাব না পেলে কারা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। এরপর সরকার ইচ্ছাধীন সময়ে রায় কার্যকরের সময় ঘোষণা করবে। তবে সরকার কতদিনের মধ্যে রায় কার্যকর করবে এ বিষয়ে আইনে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই।



মন্তব্য চালু নেই