কানাডার আদালতে বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলা কতোটা যৌক্তিক?

একজন বাংলাদেশী নাগরিকের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন নাকচ করে দেওয়ার সময় কানাডার ফেডারেল আদালত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করেছেন। বিএনপির সদস্য হওয়ার কারণে ওই বাংলাদেশীর আবেদন নাকচের সময় বিএনপি ও বিএনপির কর্মকাণ্ড সর্ম্পকে নানা নেতিবাচক মন্তব্য করেছে কানাডার আদালত। এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর নানা মহল থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন উঠেছে। কানাডার আদালতে বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলা কতোটা যৌক্তিক?খবর চ্যানেল আই’র।

কানাডার আদালত বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলার কারণ ব্যাখ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, ক্ষমতায় থাকাকালীন দেশের সংবিধান পরিবর্তন করে স্বাধীনতা বিরোধীদের ক্ষমতায় বসিয়েছিলো বিএনপি। দেশের একটি বড় রাজনৈতিক দল হওয়া সত্ত্বেও জামায়াতে ইসলামির সাথে জোট গঠন করে তারা রাজনীতি করে। সুতরাং নৈতিক জায়গা থেকে বিএনপির দুর্বল ভিত্তির উপরে অবস্থান করে। দেশ ও মানুষের স্বার্থে দলটিকে এই ধরনের সংস্কৃতি ত্যাগ করতে হবে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, এবং জ্বালাও-পোড়াওয়ের রাজনীতিতে পৃষ্ঠপোষকতা করে যারা রাজনীতি করে তাদেরকে দেশের প্রেক্ষাপটে যাই বলা হোক না কেন, আন্তর্জাতিক স্টান্ডার্ডে এটিকে সন্ত্রাস বলা হবে।

বিষয়টি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) এম হারুন-অর-রশিদ বলেন, বিদেশি আদালত যে রায় দিয়েছে, সেখানে অবশ্যই তারা এমন কোনো তথ্য প্রমাণ পেয়েছেন যার পরিপ্রেক্ষিতে এই রায় এসেছে। এটি সেই দেশের একান্ত নিজস্ব ব্যাপার।এই রায় তাদের দেশের আইন এবং বিচার ব্যবস্থাকে প্রতিফলিত করে।

কানাডার আদালতের মন্তব্যের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মাহফুজ মারজান বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপির সমর্থকরা চোরাগোপ্তা হামলা এবং আগুন সন্ত্রাসের রাজনীতি করেছে। আর এসব ঘটনায় প্রাণ দিতে হয়েছে অনেক সাধারণ মানুষকে। যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর বক্তব্য থাকা সত্ত্বেও বিষয়টি নিয়ে তখন বিএনপির কোনো নেতাই স্বীকৃতিমূলক বক্তব্য দেয়নি। রাজনৈতিক দল হিসেবে এরকম কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যদি সে প্রেক্ষাপট থেকে কানাডার আদালত এ মন্তব্য করে থাকেন, তাহলে বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলা যথার্থ। তবে সম্প্রতি দেশে আর এ ধরনের ঘটনা ঘটছে না। এক্ষেত্রে আমাদের নিরাপত্তারক্ষাকারী বাহিনীর কৃতিত্ব রয়েছে।

মাহফুজ মারজান আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী জামায়াতে ইসলামির সাথে বিএনপির সখ্যতা নিয়ে বরাবরই বিএনপি নিশ্চুপ থেকেছে। দেশে জামায়াতে ইসলামির যুদ্ধাপরাধী নেতাদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছে। এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন ছিলো। স্বাধীনতা বিরোধী একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে সখ্যতা রাখার প্রেক্ষাপটে বিএনপি সম্পর্কে এমন বক্তব্য অস্বাভাবিক কিছু নয়।

বিএনপির সদস্য হওয়ার কারণে একজন বাংলাদেশী নাগরিকের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন নাকচ করে দেয়ার বিরুদ্ধে করা জুডিশিয়াল রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি করতে গিয়ে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার সিদ্ধান্ত বহালের পাশাপাশি দলটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে মন্তব্য করেন ফেডারেল আদালতের বিচারক। মোহাম্মাদ জুয়েল হোসেন গাজী নামে ঢাকার মিরপুরের স্বেচ্ছাসেবক দলের ওই কর্মীর রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন নাকচ হওয়ার পর তিনি ফেডারেল কোর্টে জুডিশিয়াল রিভিউ আবেদন করেছিলেন। রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন গ্রহণ করে ২৮ এপ্রিল, ২০১৫ তাকে স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে প্রথম পর্যায়ের অনুমোদন দেয়া হলেও ২০১৬ সালের ১৬ মে তাকে কানাডায় প্রবেশের অযোগ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ওই রায়ের বিপক্ষে আপিল করেছিলেন মোহাম্মাদ জুয়েল হোসেন।



মন্তব্য চালু নেই