কাঠগোলাপের জন্য পাত্র চাই

কাঠগোলাপের জন্য পাত্র চাই

:: ইছমত হানিফা চৌধুরী ::

nusrat
ইছমত হানিফা চৌধুরী

সূর্য পূর্বদিকে ওঠে। পানি নিচের দিকে গড়ায়। এই কথাগুলো দর্শনের মত সত্য। এই কথাগুলোর মত বাংলাদেশ ফুলের দেশ এটা চিরসত্য, যেখানে সবুজ প্রান্তরে যেমন ফুটে নানা বর্ণের, নানা রংঙের বিচিত্র ফুল জলে ফুটে হরেক রকমের পদ্ম, আরও নানা রকমের ফুল। একেক সময় মনে হয় বর্ষা যেন ফুলের ঋতু পানিভরা জলাশয়ে যখন লাল পদ্ম কিংবা সাদা শাপলায় ভরে যায়, তখন পুরো জায়গাটা স্বপ্নপুরির মত দেখায় এই স্বপ্নপুরি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে, যার জন্য প্রধানত দায়ী অনুক‚ল জলবায়ু অবস্থা। আর এই জলবায়ু কোন আলৌকিক ÿমতায় পরিবর্তীত হচ্ছেনা। মানুষের অমানুষিক চাপ সহ্য করতে না পেরে নিজেই নিজেকে বিলিয়ে দিতে অনেকটা আত্মহনন করছে তাইতো আজ সবই বদলে গেছে, তাই সবুজ নীল শুধু রংধনুর রং। আকাশের রং নীল, এ দেশের বনে, মাঠে ঘন সবুজের মেলা, গাছপালা বিচিত্র রঙের ফুল ফোটায়, এই ফুলের মধ্যে আছে শাপলা, জবা, কৃষ্ণ চূড়া, গাঁদা, গোলাপ, রজনী গন্ধা, শিমুল, কদম আর দোলন চাঁপা, শাপলা আমাদের জাতীয় ফুল, গোলপকে বলা হয় ফুলের রানী, নানা রংয়ের গোলাপ হয় লাল, সাদা, গোলাপি। এই গোলাপ পরিবারের সদস্য না হয়েও কাঠ গোলাপ সবার প্রিয় ফুল। কাঠ গোলাপ মৌসুমি ফুল নয় বলতে গেলে ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে প্রায় সারা বছর এই ফুলের দেখা পাওয়া যায় আম গাছ, কিংবা দেশী পেয়ারা গাছের মত বেশ বড় হয় এই গাছ। লম্বা পাতা এবং হলুদে আভায় সাদা রং এর ফুল ফোটে, ÿেত্র বিশেষে লাল আভায় সাদা রং এর এ ফুল দেখা যায় বনসাইর মত বেশ বয়স্ক ফুলের গাছে মগডাল পর্যন্ত শিকড় গজায় যা ফুলের গাছের সৌন্দর্য্য অনেকগুন বাড়িয়ে দেয়। এই গাছে কোন ফল হয়না, ফুলই একমাত্র সুন্দর। ডাল থেকেই চারা গজায় যেহেতু বুড়ো গাছের মগডাল পর্যন্ত শিকড় থাকে সেই শিকড় থেকেও চারা গজায়।

একটা সময় ছিল, সিলেট শহরের অনেক জায়গা চলার পথে কাঠ গোলাপের দেখা পাওয়া যেত, কাঠ গোলাপের ফুলের অতি মিষ্টি ঘ্রান যে কোন ক্লান্ত পথিককে শান্ত করে শিহরন জাগাত, সিলেট সরকারি মহিলা কলেজে প্রকান্ড এক কাঠ গোলাপে গাছ ছিল নব্বইর দশকে, এখন আর নেই, আরেকটা বিশাল কাঠ গোলাপের গাছ ছিল, গৌড় গবিন্দের টিলার নিচে, (জজের বাংলায় ঢুকতে হাতের বামে) এত সুন্দর বড় এই গাছের নীচে পড়ে থাকতো সবুজ ঘাসের বুজে অজস্র কাঠ গোলাপ ফুল মনে হত সুগদ্ধি এক স্বপ্নের গালিচা, যাব উপর দিয়ে হেটে যেত ইচ্ছে হত না শুধু অপলক দৃষ্টিতে চেঁয়ে থাকতে ভাল লাগতো। এটা আশির দশকে, এখন এই জায়গা দেখলে মনে হয়না এখানে কোন সুন্দর কাঠ গোলাপের গাছ অতি সুন্দর হয়ে কোন এক সময় হাতছানি দিতে ডাকতো, তবে এখন হাউজিংএষ্টেট এলাকায়, তত বিশাল না হলেও মোটামুটি বিশাল, আবার আম্বারখানার জ্যেতি মঞ্জিলে আছে একটা বিশাল কাঠ গোলাপ।

আমরা মানুষ মাত্রই নষ্টালজিক, আর নষ্টালজিক হয়ে কৈশোরে থেকে ইচ্ছে করে সবার কৈশোরের দেখা সবকিছু কাছাকাছি আগের মত পেতে ইচ্ছা করে। সন্তান বড়ই মধুর, কিন্তু সেই সন্তানকে আপন করে ছোঁয়া যায় যখন স্মৃতির সাথে কালের সাÿি হয়ে স্মৃতিময় জায়গায় একভাবে দাঁড়িয়ে থাকে স্মৃতির উপকরণ। কিন্তু স্মৃতির সাথে স্মৃতিময় জায়গা গাছ পালা, হারিয়ে গেলে স্মৃতি হয় বড় কষ্টের বেদনার মনে হয় যেন আজ শৈশব কৈশোর অনেক দূরে কোন কোন সময় লাগে নিজে বড় অচেনা, তখন সেই আপন করা ভাললাগা পাগলের মত খুজে ফিরে প্রিয় গাছ গোলাপে, তেমনি অনেক দিন থেকে খুব তৃষ্ণার্থ ছিলাম একট কাঠ গোলাপ গাছের জন্য। আমার শৈশব কৈশোরের এমন বন্ধুটির জন্য প্রাণ ছটফট করে, দুই হাজার নয় সালে হাউজিং এষ্টেট থেকে একটা কাঠ গোলাপের ডাল এনে লাগাই, কাঠ গোলাপের প্রেমে এতই ডুবে গিয়েছিলাম এবারও চিন্তা করিনি ছোট হয়ে আসা এই পৃথিবীতে এই কাঠ গোলাপ অনেক কষ্ঠে কৃত্রিম তবে বেঁচে থাকবে বেলকুনিতে. কিন্তু কাঠ গোলাপ আমার ভালবেসে বেলকনিতে থেকে ধীরে ধীরে বড় হয়ে গেছে এক এই তিন সৎসরে ফুটিয়েছে অজস্ত্র ফুল মৌ মৌ গন্ধে ভরেছে, আমার চারপাশ। কিন্তু এখন এই কাঠ গোলাপ টবে রাখা অমানবিক, আর আমার যান্ত্রিক জীবনে আশে পাশে কোন মাটির দেখা নাই, তাই এখন কোনভাবেই সম্ভব হচ্ছেনা এই কাঠ গোলাপের চাহিদা মেটানো। আবার আমার এত ভালবাসার ধনকে আমি কোথায় রাখবো, তাই চিন্তা করে দেখলাম, যে একফুট বাই একফুট জায়গা দিতে পারবে তার কাছে বিয়ে দিয়ে দেব। তাহলে কাঠ গোলাপ ভাল থাকবে, ফুটাবে অজস্ত্র ফুল। আর বিয়ে দিলে ওর উপর আমার থাকবে পূর্ণ দাবী, যখন খুশি তখন ওকে দেখতে যেতে পারবো, ইচ্ছে করলে কাছে এনে রাখতে পারবো।



মন্তব্য চালু নেই