কাউন্সিলের মাধ্যমে কি দল চাঙ্গা করতে পারবে বিএনপি

বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, অন্যতম একটি প্রধান দল বিএনপি সাংগঠনিক দিক থেকে তাদের প্রতিষ্ঠার ৩৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ বা দুর্বল একটা পরিস্থিতিতে রয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে দলটি আগামীকাল ঢাকায় তাদের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল করছে।বিএনপির নেতারা বলেছেন,এই কাউন্সিলের মাধ্যমে তাদের দলকে পুনরুজ্জীবীত করা সম্ভব হবে।

আদৌ কি তা সম্ভব হবে, এ নিয়ে বিশ্লেষকদের অনেকে সন্দেহ রয়েছে।

বিএনপি ২০১৪ সালে ৫ই জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন প্রতিহত করতে ব্যর্থ হওয়ায় দলটির নেতা-কর্মিদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছিল। পরের বছরের প্রথম তিন মাস বিএনপির লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি সহিংসতায় রূপ নিয়েছিল। সেই আন্দোলনও ব্যর্থ হলে সারাদেশে দলটির সাংগঠনিক কর্মকান্ড স্থবির হয়ে পড়েছিল।সেই পরিস্থিতি থেকে বিএনপি এখনও বেরিয়ে আসতে পারেনি।

বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, সাধারণ মানুষের সামনে বিএনপি কোন নতুন কোন বার্তা দিতে পারেনি।সে কারণে দফায় দফায় দলটির আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে।
বিএনপির রাজনীতি নিয়ে সম্প্রতি একটি বই লিখেছেন লেখক মহিউদ্দিন আহমেদ। তার মতে, বিএনপি এখনও তাদের কাউন্সিলকে কেন্দ্র করেও কোন ভিশন আলোচনায় আনতে পারেনি।

তিনি বলছিলেন, “বিএনপির কাউন্সিল সামনে রেখে কমিটির বিষয়ই শুধু আলোচনায় আসছে।এখন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি সাড়ে তিনশ সদস্যের।সেই আকার বাড়িয়ে চারশ সদস্যের করার কথা আসছে।কিন্তু জনসমর্থন পাওয়ার জন্য ভিশন বা দর্শন অনুপস্থিত।ফলে এই কাউন্সিল হবে অনেকটা রিচুয়ালিস্টিক।”
তবে বিএনপি অভিযোগ করে আসছে, সরকারের মামলা এবং দমন নির্যাতনের কারণে সারাদেশে তাদের নেতা-কর্মিদের অনেকে কারাগারে বা আত্নগোপনে ছিল।এর জের এখনও রয়েছে।এমন চ্যালেঞ্জের মুখে কাউন্সিল করার কথা বিএনপি বলছে।

দলটির নেতারা বলছেন, সরকারের দমন নির্যাতনের স্বীকার নেতা কর্মিদের মূল্যায়ন এবং নতুনদের জায়গা দেয়ার দাবি এবার সামনে এসেছে। এগুলো বিবেচনায় নিয়েই দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটি এবং কেন্দ্রীয় কমিটির আকার বাড়ানো হচ্ছে।
বিএনপি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তাদের দল গোছানোই এই কাউন্সিলের মুল টার্গেট। সেটা সম্ভব হবে বলে তারা মনে করছেন।
তবে বিএনপি মানুষকে কি স্বপ্ন দেখাতে চায়, তারা এগুতে চায় কি ভাবে, এর অনুপস্থিতির কথা বিশ্লেষকরা বলছেন।দলটির ভিতরেও তা নিয়ে আলোচনা রয়েছে।বিএনপি সমর্থিত পেশাজীবীদের একটি ফোরাম শত নাগরিক কমিটির প্রধান অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বিএনপি সমঝোতার রাজনীতির নতুন বার্তা দেবে এই কাউন্সিল থেকে।

“আগে কর্মসূচি যে সহিংস হয়েছিল।সেটা মানুষ পছন্দ করেনি।পছন্দ আমাদেরও হয়নি।এখন বিএনপি সহনশীল এবং সমঝোতার রাজনীতির বার্তা দেবে।”
বিএনপি যদিও এবার চেয়ারপারসন এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনের কথা বলেছিল।কিন্তু এই দু’টি পদে খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দলটির অন্য কেউ প্রার্থী না হওয়ায় তারাই নির্বাচিত হয়েছেন।অন্য পদগুলোতে কাউন্সিলে সরাসরি ভোটের কথা এখনও বলা হয়নি।অন্যদিকে দলটির সিনিয়র নেতাদের অনেকের নিস্ক্রিয়তার বিষয় নিয়ে দলে আলোচনা রয়েছে। মহিউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, দলটিতে এখন শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে সব পর্যায়ে বিকল্প লোক তৈরি করা প্রয়োজন।

তিনি আরও বলছিলেন, “যেহেতু বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ।তিনি নিয়মিত অফিসও করতে পারেননা।আর দ্বিতীয় প্রধানও দেশে নেই।সে জন্য বিকল্প কিছু চিন্তা করা দরকার।”

বিএনপি সাংগঠনিকভাবে এবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টার কথা বলছে।এমাজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বিকল্প নেতৃত্ব তৈরির বিষয় তাদের আলোচনায় রয়েছে।
“খালেদা জিয়া অসুস্থতার কারণে যদি কাজ করতে না পারেন,তাহলে তার পর কে নেতা হবেন। এসব নিয়ে এখন আলোচনা করা যায় না।তবে আমাদের মধ্যে আলোচনা রয়েছে।যেমন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে কোন সময় জেলে যেতে পারেন। সেজন্য তার বিকল্প এবার রাখা হচ্ছে।”
তবে এখনই বিএনপির নেতা কর্মিরা শীর্ষ নেতৃত্বের বিকল্প কিছু ভাবতে রাজি নন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আমগীর বলেছেন, খালেদা জিয়ার সক্রিয়ভাবেই তাদের নেতৃত্ব দেবেন বলে তারা মনে করেন।

তিন বছর পর পর কাউন্সিল করার কথা থাকলেও বিএনপি এবার কাউন্সিল করছে ছয় বছর পর।-বিবিসি



মন্তব্য চালু নেই