কাউন্সিলের আগে সরগরম বিএনপি কার্যালয়

বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল ও আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নেতা-কর্মীদের আগমনে সরগরম হয়ে উঠেছে দলটির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়।

ইউপি নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত ও কাউন্সিল ঘোষণার পর সারা দেশ থেকে তারা সেখানে যেতে শুরু করেন। কাউন্সিলের ভেন্যু নির্ধারিত হওয়ার পর থেকে তাদের উপস্থিতি কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

আগামী ১৯ মার্চ রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। বুধবার (২ মার্চ) রাতে ইনস্টিটিউশন কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে বিএনপিকে অনুমতির কথা জানায়।

বৃহ্স্পতিবার (৩ মার্চ) সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ এ কথা জানান।

কাউন্সিলের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে রিজভী আহমেদ বলেছেন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে কাউন্সিলের অনুমতি পাওয়ায় এখন এই স্থানকে ঘিরে আমাদের কাউন্সিলের প্রস্তুতি শুরু হবে। এ লক্ষ্যে কাউন্সিলের জন্য গঠিত উপ-কমিটিগুলো (১২টি উপ-কমিটি) শুক্রবার (৪ মার্চ) সকালে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন ও প্রাঙ্গণ পরিদর্শন করবে।

কাউন্সিলের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার বিকেলে নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে শৃঙ্খলা ও সেবা উপ-কমিটি এবং আপ্যায়ন উপ-কমিটির প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় কাউন্সিলের শৃঙ্খলা রক্ষায় ৪০০ স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বিএনপির পঞ্চম কাউন্সিলের শৃঙ্খলায় ৬০০ স্বেচ্ছাসেবক কাজ করেছিল। কাউন্সিলের ভেন্যু ছোট হওয়ায় এবার স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা কমানো হয়েছে।

সভায় সারা দেশ থেকে কাউন্সিলে আগত কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের আপ্যায়নের জন্য কমিটির সদস্যদের বিভাগভিত্তিক দায়িত্ব অর্পণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে আপ্যায়ন উপ-কমিটির সদস্য সংখ্যাও বাড়ানো হচ্ছে। কাউন্সিলে বিদেশি ডেলিগেটদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে বিএনপি।

কাউন্সিল ও আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা দলে দলে বিএনপি কার্যালয়ে আসছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা ও মহানগর থেকে তারা কার্যালয়ে ভিড় করছেন। তারা একদিকে যেমন দলে পদ-পদবির জন্য লবিং করছেন, অন্যদিকে তেমনি ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীর মনোনয়ন পাওয়ার জন্য চালাচ্ছেন লবিং।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিলের দিকে নেতা-কর্মীরা তাকিয়ে আছেন। তাদের প্রত্যাশা, এই কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ‍ভূমিকা পালনকারী ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতারা মূল্যায়িত হবেন, নেতৃত্বে আসবেন।

গত কয়েকদিন ধরে বিএনপির কার্যালয়ে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু ও রুহুল কবির রিজভী আহমেদ ছাড়া সিনিয়র কোনো নেতা আসেননি। মাঝে-মধ্যে এসেছেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ও নজরুল ইসলাম খানকে কার্যালয়ে আসতে দেখা গেছে।

নির্বাচন পরিচালনার জন্য জমির উদ্দিন সরকারকে দলীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নজরুল ইসলামকে রিটার্নিং কর্মকর্তা করা হয়। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ওই দুই পদে নির্বাচনের জন্য বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পক্ষে বুধবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়। তবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় শেষ হলেও দলের অন্য কেউ ওই দুই পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি।

এর ফলে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগামী তিন বছরের জন্য যথাক্রমে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। ১৯ মার্চ কাউন্সিলে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের নাম ঘোষণা করবে দলীয় নির্বাচন কমিশন।

নয়াপল্টনের বিএনপি কার্যালয় উৎসবমুখর হলেও চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের চিত্র ভিন্ন। সেখানে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের তেমন দেখা যায়নি।

বিএনপির কাউন্সিলের দুইদিন পর অর্থাৎ আগামী ২২ মার্চ প্রথম ধাপে দেশের ৭৩৯টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ছয় ধাপে অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে প্রথম ধাপের পর আগামী ৩১ মার্চ ৭১০টি, ২৩ এপ্রিল ৭১১টি, ৭ মে ৭২৮টি, ২৮ মে ৭১৪টি ও ৪ জুন ৬৬০টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হবে।



মন্তব্য চালু নেই