কলেজ হোস্টেল নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে নির্মলেন্দু গুণের চিঠি

বাংলা একাডেমি পুরস্কার, স্বাধীনতা পদক কিংবা একুশে পদক পাওয়া কবি তিনি। অবশ্য পরিচয়ের জন্য তাঁর কবিতাই যথেষ্ট। তিনি নির্মলেন্দু গুণ।

১৯৬৪ সালে ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন নির্মলেন্দু। এর আগে ১৯৬২ সালে ভর্তি হন কলেজটিতে। পরবর্তী দুই বছর এই কলেজের হোস্টেলে থেকেই লেখাপড়া করেন কবি। যে হোস্টেলটিতে কবি থাকতেন, সেটির নাম ছিল হিন্দু হোস্টেল। দীর্ঘ ৫৫ বছরেও সংস্কার হয়নি হোস্টেলটির। সেই একই রকমভাবে অবহেলিত পরিবেশ রয়ে গেছে সেটির।

এদিকে, এখনো হোস্টেলটির কোনো সংস্কার সাধন না হওয়ায় বেশ বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন কবি। এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসও দিয়েছেন তিনি। হোস্টেলটির সংস্কারের দাবিতে বর্তমান ছাত্রদের অনশন করার ডাক দিয়েছেন তিনি। এমনকি নিজেও সেই অনশনে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

আজ বুধবার কবি নির্মলেন্দু গুণ তাঁর স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘আজ থেকে ৫৫ বছর আগে, ১৯৬২ সালে ম্যাট্রিক (বর্তমানে এসএসসি) পাস করে আমি ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজে আইএসসিতে ভর্তি হই। ভালো ফল করায় আমি ছিলাম Residential scholarship holder। সেই সুবাদে আমার থাকার ব্যবস্থা হয় আনন্দ মোহন কলেজের হিন্দু হোস্টেলে।

এই যে ছবিটি দেখছেন, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, এটি ঢাকার কোনো বস্তিতে তোলা অবৈধ কোনো স্থাপনা নয়, ব্রিটিশ আমলে অস্থায়ী নিবাস হিসেবে ব্রিটিশ সৈন্যবাদের জন্য নির্মিত আজিমপুরের পলামী ব্যারাকও নয়।

এটি হচ্ছে আনন্দ মোহন কলেজের সেই হিন্দু হোস্টেল, ৫৫ বছর আগে আমি যার আবাসিক ছাত্র ছিলাম। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই হিন্দু হোস্টেলের নতুন নাম রাখা হয়েছে সুকান্ত হোস্টেল। শুনে ভালো লাগল। কবির নামে নাম। ভালো না? ভালো। এটাও পরিবর্তনই বটে।

গত ৫৫ বছরে স্বাধীন বাংলাদেশের অনেক উন্নতি হয়েছে, সেইসব পরিবর্তনের স্পর্শ লেগেছে দেশের প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত। দেখে এবং জেনে খুশি হলাম, আমার হোস্টেলটিকে ইউনেস্কো নাকি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে সংরক্ষণ করার জন্য আনন্দ মোহন কলেজ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, এই হোস্টেলটির ঐতিহাসিক মর্যাদা রক্ষা করতে যেন কোনো ত্রুটি না হয়।

৫৫ বছর পর আমার পুরোনো প্রিয় হোস্টলটি এখনো একই রকম রয়েছে, দেখে আমি আনন্দে মোহন হয়ে গেলাম। বুঝলাম, আমি যে হোস্টেলে ছিলাম, তার কোনোরূপ সংস্কার সাধন না করে আনন্দ মোহন কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাকেই সম্মানিত করে চলেছেন। আমি যেন চিনতে ভুল না করি। যেন উপেনের মতো বলতে না পারি, ছিলে দেবী হলে দাসী।

সুকান্ত হোস্টেলের ছাত্রদের প্রতি আমার আহ্বান : আপনারা একটা অনশন ধর্মঘটের আয়োজন করুন। আমাকে ডাকুন। আমি সেই অনশনে অংশ নেব।’



মন্তব্য চালু নেই