কলারোয়ায় কুলের কেজি ২টাকা, চাষীদের মাথায় হাত

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় বাউকুলের বাম্পার ফলন হলেও বাগান মালিকদের কুলের দাম পাচ্ছেন না। প্রতি বছর ভাল দাম পাবার আশায় এ জেলার কুল চাষিরা বাউকুলের বাগান করেন। কুল ওঠা শুরু থেকেই দেশের রাজনৈতিক টানাপোড়ন ও হরতাল-অবরোধের কারনে পাইকারী ক্রেতা আসছে না। ফলে কুল বিক্রি না হওয়ায় কুল পেকে মাটিতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যে কারনে চাষিরা এবার কুল বাগান করে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির আশস্কা করছেন।

উপজেলায় চাষিরা এবার বিভিন্ন কুলের বাগান করেছেন প্রায় ১শ’ ৬০হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে বাউকুল-৪০হেক্টর, আপেলকুল-২০হেক্টর, ঢাকা-৯টি কুল- ৬০হেক্টর ও নারিকেল কুল-৪০হেক্টারসহ সর্বমোট ১২শ’বিঘা জমিতের কুল চাষ হয়েছে। কুলের ধরনও এবার খুবই ভাল ছিলো। একজন চাষী ২থেকে ৫-৭ বিঘা জমিতে কুল বাগগান করেছেন আর্থিক লাভের আশায়।

বর্তমানে তারা ক্রেতা না পেয়ে কুলবাগানের কুল ঝরে পড়ে মাটিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এদিকে কলারোয়া উপজেলার কেরালকাতা ইউনিয়নের কাউরিয়া গ্রামের জাহেদ আলী মোল্লার পুত্র মিজানুর রহমান ও সিরাজুল ইসলামের কুল বাগানে গিয়ে দেখা যায়,গাছে প্রচুর পরিমানে কুল রয়েছে। কুল পেকে মাটিতে নষ্ট হচ্ছে মনকে মন কুল। বাগান মালিক মিজানুর রহমান জানান, এবার তিনি নিজের জমিতে ২বিঘা বাওকুলের বাগান করেছেন। এতে কুলগাছ পরিচর্যা ও সার ওষুধ খরচ হয়েছে প্রায় ১লাখ ৩০হাজার টাকা। কিন্ত দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় হরতাল-অবরোধে বাইরে থেকে পাইকারী ক্রেতা না আসায় কুল বিক্রি হচ্ছে না। কিছু কিছু কুল ভেঙে এলাকার বাজারগুলোতে দিলেও দাম পাওয়া যাচ্ছে মাত্র প্রতিকেজি ২টাকা থেকে ৫টাকা।

অল্প কুল বেঙে লেবার খরচ ও গাড়ি ভাড়া দিয়ে বাড়তি কিছুই থাকছে না। তিনি আরো বলেন, এখন কুলের মৌসুম আর কদিন পরই কুল শেষ হয়ে যাবে অথচ এখনো খরজের অর্ধেকও ওঠেনি। কুলের বাগান করে তিনি অস্থিরতার মধ্যে রয়েছেন বলে জানান।

এদিকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রাজিবুর রহমান জানান, এবার ভাল ফলন ও লাভের আশায় উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ১২শ’হেক্টর জমিতে চাষীরা কুল চাষ করেন। তিনি উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার শেখ বিপুল হোসেনকে দায়িত্ব দিয়ে কুল চাষ বৃদ্ধি করনে চাষীদের পরামশ্যসহ পোকা দমনের বিষয়ে উপজেলার প্রতিটি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকতারদের চাষীদের উপর নজর বাড়িয়ে দেওয়ার পরামশ্য প্রদান করেন। সে অনুযায়ী এবার কলারোয়া কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ১২শ’বিঘা জমিতে ব্যাপকহারে কুল হয়েছে।

এদিকে কুল পেকে মাটিতে পড়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ার খবর শুনে উপজেলার কাউরিয়া ব্লকের কুল ক্ষেত পরিদর্শন করেন উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোলাম রসুল। কাউরিয়ার কুল ক্ষেত পরিদর্শন করে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোলাম রসুল সাংবাদিকদের জানান চাষী মনিরুল ইসলাম, ইছাহাক আলী, আবু তাহের, মোখছেদ আরী, পাঞ্জাব, নাসির, আলাউদ্দিনের কুল ক্ষেতের একটি কুলও বিক্রি করতে পারেনি। যে সময় কুল বিক্রি করার কথা ছিলো তখনই হরতা-অবরোধ সৃষ্টি হয়। তার কারনে ক্ষেতে কুল পেকে মাটিতে পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। চাষীরা বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও থেকেও লোন নিয়ে এবার কুল চাষ করে। চাষীরা কুল চাষ করে অনেকে সর্বশান্ত হয়ে গেছে। এর আগে দুই একজন চাষী ঢাকা কুল পাটিয়ে বেশী দামে বিক্রি করে লাভবান হওয়ার আশংকা করেছিলো। কিন্তু সেই মুহুতেই চলে গাড়িয়ে আগুন, হওতাল। শেষ বেশ ২টাকা কেজিতে কুল বিক্রি করে ফিরে আসতে হয় বাড়ীতে। কুল বিক্রি করেও গাড়ী ভাড়া পর্যন্ত দেওয়া যায়নি। ধার নেওয়া টাকার জন্য অনেকে বাড়ীতে এসে টাকা চাইছে বলে কৃষকরা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোলাম রসুলের কাছে এসে হাও মাও করে কাঁদতে থাকে। খবর পেয়ে দলে দলে সাংবাদিকরাও ছুটতে থাকে কুল ক্ষেতের ছবি তুলতে।



মন্তব্য চালু নেই