কলঙ্কিত স্থানীয় নির্বাচন, ১৯৬% পর্যন্ত ভোট কাস্টিং

এই প্রথম দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন করলো রকিব উদ্দীন আহমদের নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এবং এটাই বাংলাদেশের স্থানীয় নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কজনক নির্বাচন হয়ে থাকলো। গত ২৩ এপ্রিল তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বেশিরভাগ ইউপিতে অস্বাভাবিক ভোট পড়েছে। এমনকি কোনো কোনো ইউপিতে একশ শতাংশেরও বেশি ভোট পড়েছে। এমন চিত্র দেখা গেছে খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙা উপজেলার বেলছড়ি ইউপিতে। এখানে ১৯৬ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে। অথচ এ নিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) নির্বিকার।

মাঠ পর্যায় থেকে নির্বাচন কমিশনে রিটার্নিং অফিসারদের পাঠানো প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষণ করে ভোটের এই হারের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

ইসির হিসাব অনুযায়ী, ওই ইউপিতে মোট ভোটার ৩ হাজার ১২৮। কিন্তু ভোট পড়েছে দেখানো হয়েছে ৬ হাজার ১৩৫টি। যা মোট ভোটারের ১৯৬ ভাগ।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা কীভাবে হলো? আমারও বিশ্বাস হচ্ছে না। বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখতে হবে। তাছাড়া কোনো ইউনিয়নে দ্বিগুণ ব্যালট পেপার যাওয়ার তো কোনো সুযোগ নেই।

জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের রিটার্নিং অফিসার শাহ আলম বলেন, ওই ইউনিয়নে কতজন ভোটার আছে তা এই মুহূর্তে আমার মনে নেই। কত ভাগ ভোট পড়েছে সেটাও সঠিকভাবে বলতে পারছি না। দেখে বলতে হবে।

এদিকে ইসিতে পাঠানো ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার চন্দননগর ইউপির ভোটার সংখ্যা ১৯ হাজার ৩১০। এই ইউনিয়নে মোট ভোট পড়েছে ২০ হাজার ৬৯৪টি। যা মোট ভোটারের ১০৭ শতাংশ।

খাগড়াছড়ি মাটিরাঙার গোমতী ইউনিয়নে ভোট পড়েছে ৯৮ দশমিক ৫৭ ভাগ। চাপাই নবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নে ৯০ ভাগ এবং নীলফামারী ডিমলার পশ্চিমছাতনাই ইউনিয়নে ৯২ ভাগ ভোট পড়েছে। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার নুনখাওয়া ইউনিয়নে ভোট পড়েছে ৯৩ ভাগ।

এছাড়া রাজশাহীর জেলার তানোড় উপজেলার চান্দুড়িয়া ও সরনজাই, এই দুটি ইউনিয়নেই ভোট পড়েছে ৯০ ভাগ। একই উপজেলার তালন্দ ইউনিয়নে ভোট পড়েছে ৯১ ভাগ।

ইসি সূত্রে জানা যায়, তৃতীয় ধাপে ৮৫ ভাগ থেকে ৯০ ভাগের মধ্যে ভোট পড়েছে ৯৬টি ইউনিয়নে। ৮০ থেকে ৮৫ ভাগের মধ্যে ভোট পড়েছে ১৭৫টি ইউনিয়নে।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচন কমিশন নামেমাত্র ইউপি নির্বাচনের আয়োজন করেছে। মাঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় না করে পুরো দায়িত্ব তাদের হাতে দিয়েছে। এতে করে ইউপিতে ব্যাপক অনিয়ম কারচুপির ঘটনা ঘটছে। এ কারণে ফলাফলে এমন অস্বাভাবিক চিত্র দেখা গেছে।

এই ধাপের ধাপের চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা যায়, ৬১৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মোট ৩৯৫টি ইউনিয়নে জয় লাভ করেছেন। এর মধ্যে ৩৬৬টিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ও ২৯টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন তারা। বিএনপি জিতেছে ৬০টি ইউপিতে। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন ১৩৯টি ইউনিয়নে। জাতীয় পার্টি ১৪টি, জাসদ ১টি ও জমিয়ত উলামায়ে ইসলাম ১টি ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন।



মন্তব্য চালু নেই