কলকাতায় দেহ-ব্যবসা কি অন্য শহরের চাইতে বেশি খোলামেলা?

অনেক বহিরাগতই কলকাতায় এসে একটা বিশেষ প্রশ্ন করে থাকেন। এই শহরে দেহব্যবসা কেন একেবারই ওপেন? কলকাতা ‘সিন সিটি’ নয়, আমস্টারডামের ধারেকাছেও আসে না। তবু একটা বিশেষ শব্দ— ‘সোনাগাছি’ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। কেন?

বিষয়টা নিয়ে সম্প্রতি তর্কে মাতলেন ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের তরুণরা। এক ই-ফোরামে মন খুলে লিখলেন তাঁদের ভাবনা। এঁদের মধ্যে কেউই কলকাতার বাসিন্দা নন। তবে কোনও না-কোনও সময়ে এই শহরে এসেছেন, থেকেছেন। বইরে থেকে যে আইডিয়া নিয়ে তাঁরা কলকাতায় পৌঁছেছিলেন, তার অনেকখানিই বদলে যায় এই শহরে বাস করার পরে। বহু ইতিবাচক যেন নেতিবাচক হয়ে যায়, তেমনই বহু নেতিকেই ইতিবাচকে বদলে দেয় তাঁদের কলকাতাবাস। তবে একটা কথা সকলেই বলেছেন, এই শহরে দেহোপজীবিকা নাকি বড় বেশি চোখে পড়ার মতো। দিল্লি বা মুম্বইয়ের জিবি রোড, কামাথিপুরার সঙ্গে কলকাতার তুলনা তাঁদের অনেকেই এড়িয়ে গিয়েছেন। আবার অনেকই সেই তুলনা টেনে বলেছেন, কলকাতার লাল আলোর এলাকা তেমন কিছু নয়।

সত্যিই কি কলকাতায় দেহ-জীবিকা এক অস্বস্তিকর দৃশ্য? ভাবতে বসলে দেখা যায়, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের রেড লাইট এলাকার সঙ্গে কলকাতা বা ভারতের পুরনো শহরগুলির নিষিদ্ধপল্লির একটা ভিত্তিগত পার্থক্য রয়েছে। সিন সিটি বা আমস্টারডামের সতো শহরে, ব্যাঙ্কক বা ফিলিপিন্স-এ যৌনব্যবসা যেভাবে গ্লোবাল চরিত্র অর্জন করেছে, কলকাতা, দিল্লি বা মুম্বই তা করেনি। এর একটা বড় কারণ অবশ্যই এ দেশে দেহব্যবসার আইনি অননুমোদন। ভারত আর যা-ই হোক, যৌন-পর্যটনক্ষেত্র নয়। সে কারণে, এ দেশের আদিম পেশার সঙ্গে ‘গ্ল্যামার’ যুক্ত হয়নি। পাল্টে যাওয়া বাতাবরণ, সিটিস্কেপ, নাগরিক ছন্দ ইত্যাদির মাঝখানে উৎকট প্রসাধনে বিশেষ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকা সোনাগাছির মেয়েদের বেখাপ্পা লাগে। আর এই ‘বেখাপ্পা’ ব্যাপারটাই ‘ওপেন’ বলে প্রতিভাত হয়।

রেড লাইট এরিয়া ক্রমেই তার মহিমা হারিয়েছে। এখানে ‘প্লেজার’ ব্যাপারটা বহুদিনই সোনার হরিণ। আজকের নিষিদ্ধপল্লি একাবারেই একটা এক্সপ্লয়টেশন জোন। আর শোষণ ব্যাপারটা বরাবরই নগ্ন। তাই কি বড় বেশি ‘খোলা’ বলে মনে হয় সোনাগাছি, হাড়কাটাকে? রেড লাইট এলাকার বাইরে কি আদিম পেশা নেই? এসকর্ট সার্ভিস, ম্যাসাজ পার্লারের আবডাল, সংবাদপত্রের শ্রেণিবদ্ধ বিজ্ঞাপনে খুল্লমখুল্লা আহ্বানকে চোখে লাগে না। কারণ তাদের প্রসাধনে লেগে নেই ঔপনিবেশিকতার হ্যাংওভার। সময়ের সঙ্গেই তারা চেহারা বদলায়।

কলকাতা, জিবি রোড, কামথিপুরা কি তা হলে এক একটা টাইম জোন? সময় থমকে রয়েছে এই সব এলাকায়? বিকিবিকনির হাট এখানে খোলা খাতার মতো। আসঙ্গকামনা নিয়ে কারও কোনও ব্রীড়া নেই। দেহকে নিয়েও কোনও সংশয় নেই কারোর। এই পুরনো ব্রথেলগুলো কি ক্রমবর্ধমান সামাজিক ভণ্ডামি আর লকোচুরির সামনে জ্বলন্ত প্রশ্নচিহ্ন? একে এড়িয়ে যাওয়া যায় না বলেই কি এদার বড় বেশ করে চোখে পড়ে?

অনলাইন ডেস্ক (সূত্র :এবেলা)



মন্তব্য চালু নেই