কর্তব্যে অবহেলা ইসলামে অপছন্দনীয়

মানবজীবনে প্রত্যেকের কিছু না কিছু দায়-দায়িত্ব আছে। কর্তব্যের পরিধি পারিবারিক, সামাজিক, ধর্মীয়, রাষ্ট্রীয় বা আন্তর্জাতিকও হতে পারে। প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করলে সমাজ তথা মানবসভ্যতা সুন্দর ও সুশৃঙ্খল হয় না। একজন মানুষের সার্বিক জীবনবোধের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো দায়িত্ববোধ ও কর্তব্যপরায়ণতা। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল; প্রত্যেককেই তার দায়িত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ কেউ তার দায়িত্বে-কর্তব্যে অবহেলা করা সামাজিকভাবে যেমন ঘৃণিত তেমনি ইসলামেও এটা অপছন্দনীয়।

ইসলামে আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বয়োজ্যেষ্ঠ ও বয়োকনিষ্ঠ সবার প্রতি পারস্পরিক দায়িত্ববোধকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। জীবনের সর্বক্ষেত্রে সব সময় পিতামাতার আদেশ-নিষেধ মান্য করা এবং তাদের সঙ্গে সৌজন্যময় আচরণ করা মানুষের একান্ত কর্তব্য। পিতামাতা, সন্তান-পরিজনের প্রতি বিশেষ কিছু কর্তব্য রয়েছে।

আত্মীয়স্বজনের প্রতি দায়িত্ব পালনের বিশেষ দিকনির্দেশনাও ইসলামে রয়েছে। পাড়া-প্রতিবেশীর বিপদে-আপদে সাহায্য-সহযোগিতা করা এবং প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়া একান্ত কর্তব্য। সহকর্মী, বন্ধুবান্ধব ও সহপাঠীদের সঙ্গে কোনোধরনের অপ্রীতিকর কর্মকা- ও দ্বন্দ্ব-কলহ করা যাবে না। এমনকি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকাও ইসলাম নির্দেশিত কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।

ধনীরা দরিদ্র অসহায়দের সাহায্য করবে এবং গরিবেরা ধনীদের সহযোগিতা করবে-এটাই ইসলামের বিধান। কর্মজীবনে মালিকপক্ষ কর্তব্যরত শ্রমিকদের সঙ্গে অবশ্যই উত্তম ব্যবহার করবে। আর শ্রমিক-কর্মচারীরা প্রতিষ্ঠানের মালিকের কাজকর্মে কোনো রকম ফাঁকি দেবে না। কর্মচারীরা মন-প্রাণ দিয়ে কাজকর্ম সম্পাদন করতে থাকবে আর মালিকপক্ষ শ্রমিকদের নির্ধারিত পারিশ্রমিক ঠিকমতো দিয়ে দেবে। শ্রমিক ও মজুরের ওপর কোনো ধরনের জুলুম, নির্যাতন ও শোষণ করা যাবে না।

দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলার পরিণাম খুবই ভয়াবহ। কর্তব্যে অবহেলা, অমনোযোগিতা প্রভৃতি নানা ধরনের বিপদ, ব্যর্থতা ও বিপর্যয় ডেকে আনে। কর্তব্যপরায়ণতা একটি আমানত। এই আমানতে খেয়ানত করলে স্রষ্টার কাছে জবাবদিহিতা করতে হবে।

সবাই নিজ নিজ কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করলে সমাজ উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে চলতে থাকে এবং দেশ ও জাতি সমৃদ্ধিশালী হয়। আর কর্তব্যে অবহেলার কারণে পিছিয়ে যায় দেশ ও জাতি। যে জাতি যত উন্নত সে জাতি তত বেশি কর্তব্যপরায়ণ। আমরা জাতি হিসেবে আরো বেশি এগিয়ে যেতে পারতাম যদি আমাদের মধ্যে যথার্থভাবে কর্তব্যপরায়ণতা থাকতো। ব্যক্তিগত এবং দেশ ও জাতির স্বার্থে প্রত্যেকের মধ্যে কর্তব্যবোধ জাগরুক থাকা জরুরি।



মন্তব্য চালু নেই