কর্ণফুলী ক্যাপিটাল ড্রেজিং নিয়ে অনিশ্চয়তা

কর্ণফুলী নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পের শেষ ভাগের কাজ সম্পন্ন হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না। প্রকল্পের প্রায় ৭৯ ভাগ কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হলেও ঠিকাদার সংক্রান্ত জটিলতার কারনে আটকে আছে বাকি ২১ শতাংশ কাজ।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আগামী এক বছরের মধ্যে ক্যাপিটাল ড্রেজিং-এর কাজ শতভাগ শেষ হবে জানালেও নানা জটিলতার কথাও অস্বীকার করেননি। বর্তমানে এই প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। কবে নাগাদ নতুন করে বাকি ২১ শতাংশ কাজ শুরু হবে তা নিশ্চিত করতে পারেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ।

শুক্রবার দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম বন্দরের ১২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ শেষ হতে আরো এক বছর সময় লাগবে। কারণ, চুক্তি লঙ্ঘন করে মালয়েশিয়ান কোম্পানি দেশীয় একটি সংস্থাকে কাজ দেওয়ায় ড্রেজিং কাজ পিছিয়ে পড়েছে। আমরা ঠিকাদারি সংস্থার সাথে চুক্তি বাতিল করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগের জন্য মন্ত্রনালয়ে চিঠি দিয়েছি।’

জানা যায়, কর্ণফুলী নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারনে এই প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভেস্তে গেছে বলে ইতিমধ্যে জানিয়েছে এই সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি। নানা দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করে কমিটি ইতোমধ্যে সংসদীয় কমিটির কাছে তাদের প্রতিবেদন দাখিল করেছে।

প্রতিবেদনে কমিটির পক্ষ থেকে ড্রেজিং প্রকল্পের উদ্দেশ্য সফল হয়নি বলে মন্তব্য করা হয়। কমিটি তাদের রিপোর্টে এই প্রকল্পের দুর্নীতির সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ৮ দফা সুপারিশ করেছে। এতে বলা হয়, অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া ও পরে সরকারের পক্ষে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণে এ প্রকল্পের এখন করুণ অবস্থা।

৮ দফা সুপারিশের মধ্যে চুক্তি মোতাবেক প্যানাল্টি আদায়, প্রকল্প এলাকা থেকে কোম্পানির মালামাল জব্দ, হাতিয়ে নেওয়া অতিরিক্ত টাকা আদায়, অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার সাথে জড়িত এবং অনিয়মের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ ছিলো অন্যতম। এছাড়া প্রতিবেদনে মালয়েশিয়ান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করারও সুপারিশ করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ জানান, নানা কারণে প্রকল্পটি আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে। ২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল ব্যাংক প্রটেকশন ও জেটি ফ্যাসিলিটিজসহ কর্ণফুলী নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্প বাস্তবায়নে মালয়েশিয়ান মেরিটাইম অ্যান্ড ড্রেজিং করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি হয়।

চুক্তি মোতাবেক ২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি কাজ শেষ হওয়ার কথা। গত বছরের ১১ আগস্ট চুক্তি বাতিলের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দেয়া হলে বাকি কাজ চলতি বছরের এপ্রিল মাসেই শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সময়সূচি দাখিল করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি।

এরই প্রেক্ষিতে সময় বাড়ানোর পরও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ হয়েছে ৭৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এ কারণে লিকুইডিটি ড্যামেজ আরোপ করা হলেও কোনো সুফল মেলেনি। ফলে নতুন ঠিকাদার নিয়োগের অনুমোদন চেয়ে মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠানো হয়েছে। নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করে আগামী এক বছরের মধ্যে এই প্রকল্পের শতভাগ কাজ সম্পন্ন করা হবে বলে জানান বন্দর চেয়ারম্যান।



মন্তব্য চালু নেই