কমিশন গঠনে খালেদা জিয়ার প্রস্তাবে পাত্তাই দিল না আওয়ামী লীগ

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রস্তাবে আওয়ামী লীগ প্রায় হেসেই উড়িয়ে দিল। ইসি পুনর্গঠনের প্রস্তাবনায় নতুন করে আলোচনায় বসার ইঙ্গিত জানিয়েছিলেন খালেদা জিয়া, আলোচনার কোনো সুযোগ সৃষ্টি না করে আওয়ামী লীগ খালেদার জিয়ার বক্তব্যকে অকেজো, অর্থহীন, অন্তঃসারশূন্য বলে প্রমাণ করল।

গত শুক্রবার বিকেলে খালেদার জিয়ার বক্তব্য শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, খালেদার প্রস্তাবে নতুন কিছু নেই। তার প্রস্তাবে এমন কিছু উঠে এসেছে যা ইতিমধ্যে আমাদের সংবিধান ও নির্বাচন আইনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। অন্তঃসারশূন্য বক্তব্যে প্রমাণিত হয়েছে জনগণের ওপর তার কোনো আস্থা নেই।

অবশ্য ওবায়দুল কাদেরের তাৎক্ষণিক এ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগের এধরনের প্রতিক্রিয়া আগে থেকেই তৈরি করাই ছিল।

খালেদা জিয়া তার প্রস্তাবনায় বলেছিলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে (২০১৭) বর্তমান বিতর্কিত নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি নিরপেক্ষ, সৎ, সাহসী, দক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করার কোনো বিকল্প নেই।

জনগণের ন্যায্য ও সাংবিধানিক আকাংখা পূরণের লক্ষ্যে বিএনপি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন, নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালীকরণ এবং নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতির উদ্দেশ্যে কতিপয় সুপারিশ উপস্থাপন করছে:

সকল রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।

প্রাথমিকভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি নিরূপণের জন্য সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল এবং অথবা, স্বাধীনতার পর প্রথম জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে এমন সকল রাজনৈতিক দলের মহাসচিব অথবা সাধারণ সম্পাদক কিংবা মনোনীত প্রতিনিধির সঙ্গে পৃথক পৃথক বৈঠক করবেন।

তবে দেশে যেহেতু এই মুহূর্তে ২ টি প্রধান রাজনৈতিক জোট (বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট) বিদ্যমান সেহেতু এই দুই জোটের পক্ষ থেকে একজন করে মূল প্রতিনিধি এবং তাঁকে সহায়তাদানকারী আরও দুইজন প্রতিনিধি উপস্থিত থাকতে পারবেন।

রাষ্ট্রপতি নাগরিক সমাজের মধ্য হতে সৎ, যোগ্য ও দল নিরপেক্ষ প্রতিনিধিদেরকেও আলোচনায় যুক্ত করতে পারেন।

মহামান্য রাষ্ট্রপতি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহ এবং অথবা স্বাধীনতার পর প্রথম জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে এমন সকল রাজনৈতিক দলের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে একটি বাছাই কমিটি গঠন করবেন।

কয়েকটি বিশেষ পয়েন্ট উল্লেখ করে খালেদা জিয়া তার প্রস্তাবনা উল্লেখ করেছিলেন। আরো কয়েকটি বিশেষ প্রস্তাবনা ছিল এরকম : রাষ্ট্রপতি সর্বজন শ্রদ্ধেয় সৎ, নিরপেক্ষ, অভিজ্ঞ, প্রাজ্ঞ, এবং নৈতিকতা ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি বাছাই কমিটি গঠন করবেন।

খালেদা জিয়া নতুন কমিশন গঠনের বিশাল এক তালিকা পেশ করেন। প্রস্তাবনায় ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আঠারো বছর বয়সী সব নাগরিককে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

সেই সঙ্গে প্রবাসীদেরও এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেন তিনি।

আওয়ামী লীগ এর কিছুই আমলে নেয়নি। পুরো প্রস্তাবনাটিই হেসে উড়িয়ে দিয়েছে। ওবায়দুল কাদের তার বক্তব্যে বলেছেন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন সম্পূর্ণ রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার। এক্ষেত্রে সংবিধান মেনেই সার্চ কমিটি গঠন করা হবে। অথচ নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বিএনপি ও খালেদা জিয়া বিতর্ক সৃষ্টি করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। খালেদা জিয়ার ফর্মুলা অন্তঃসারশূন্য। তিনি জাতির সঙ্গে তামাশা করেছেন। তাঁর সংলাপের আহ্বান হাস্যকর।

ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের যে প্রক্রিয়া দেখিয়ে গেছেন, সেখান থেকে আওয়ামী লীগ বিচ্যুত হবে না, হওয়ার কোনো সুযোগও নেই।

রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের আহ্বান জানিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। প্রস্তাব গৃহিত না হলেও তা দুপক্ষের পক্ষে নতুন এক আলোচনার সূত্রপাত করতে পারতো। সেই ইঙ্গিত খালেদার জিয়ার বক্তব্যে ছিল। কিন্তু সে সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে আওয়ামী লীগ বিএনপিকে রাজনীতির মাঠ থেকে বিচ্ছিন্নই করে রাখল।

অথচ দেশের এই দুটি বড় রাজনৈতিক দল স্বৈরাচার এরশাদের শাসনামলে টানা ৯ বছর এক সঙ্গে আন্দোলন করেছে। সংসদীয় গণতন্ত্রে সেই এরশাদ এখন সরকারি দল আওয়ামী লীগের অংশীদার। বিরোধীদল হিসেবে জাপা সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা পেলেও প্রধান বিরোধীদল হিসেবে বিএনপির প্রস্তাবনায় আওয়ামী লীগে কোনো সাড়া না দেওয়ায় রাজনীতিতে সমঝোতার পথ আরো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আগামীতে নির্বাচন কমিশন গঠন বিএনপির কাছে গ্রহণযোগ্য না হলে নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হবার আশঙ্কা রয়েছে। এই আশঙ্কা বা দুরাশার পথ আওয়ামী লীগে চিরতরে বন্ধ করে দেয়ার একটি সুযোগ নিতে পারত। এবং তা হচ্ছে খালেদা জিয়ার প্রস্তাব পর্যালোচনা করেই সরকারি দলের প্রতিক্রিয়া জানানো অপরিহার্য ছিল।



মন্তব্য চালু নেই