কনটেইনার নামাতে বাধা, ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরা

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তহীনতা ও নানা অজুহাতে হানজিনের লোগোযুক্ত কনটেইনারে আমদানি করা পণ্য জাহাজ থেকে নামানো যাচ্ছে না। কর্তৃপক্ষ অনুমতি না দেওয়ায় ইতিমধ্যে বন্দর থেকে ফেরত গেছে দুটি পণ্যবাহী জাহাজ। পাওনা টাকা আদায়ের অনিশ্চয়তার কথা বলে বন্দর কর্তৃপক্ষ হানজিনের লোগোযুক্ত কোনো কনটেইনার বন্দরে নামাতে দিচ্ছে না। ফলে বিপাকে পড়েছে দেশের একাধিক শিল্পগ্রুপ ও স্বনামধন্য ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। এতে মোটা অংকের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠানে পণ্য উৎপাদনও মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের উদীয়মান অর্থনীতিতে।খবর রাইজিংবিডি’র।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিচালনা) জাফর আলম জানান, বর্তমানে দেউলিয়ার মুখে রয়েছে হানজিন। এই প্রতিষ্ঠানের কাছে চট্টগ্রাম বন্দরের বিপুল অংকের টাকা পাওনা রয়েছে। বর্তমানে বন্দরে থাকা হানজিনের কনটেইনারের ভাড়া বাবদ প্রতি সপ্তাহে অন্তত এক কোটি টাকার বেশি বকেয়া যুক্ত হচ্ছে। এই বকেয়া আদায়ে পুরোপুরি অনিশ্চয়তা থাকায় চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন করে হানজিনের কোনো কনটেইনার নামাতে দেওয়া হচ্ছে না।

জাফর আলম বলেন, আমরা পুরো বিষয়টি যাচাই করতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছি। কমিটির রিপোর্ট পেলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কবে নাগাদ রিপোর্ট পাওয়া যাবে এবং হানজিনের পণ্য কতদিন বন্দরে আটকে থাকবে এ ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি।

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে হানজিনের কনটেইনার নামাতে না দেওয়ায় এবং পণ্য খালাস করতে না দেওয়ায় বিপাকে পড়েছে দেশের বিভিন্ন নামি-দামি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীমহল। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে হানজিনের কনটেইনারে পরিবাহিত প্রায় শতাধিক পণ্যভর্তি কনটেইনার জাহাজেই আটকা পড়ে আছে। এর আগে গত সপ্তাহে হানজিনের কনটেইনার বন্দরে নামাতে না দেওয়ায় দুটি জাহাজ পণ্য নিয়ে ফেরত চলে গেছে। আরও দুটি জাহাজ শনিবার ফেরত যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

দেশের বৃহত্তম ইলেক্ট্রিক ও ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য উৎপাদনকারী একটি প্রতিষ্ঠানের লজিস্টিকস বিভাগের কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রায় দেড় মাস আগে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে হানজিনের কনটেইনারে কাঁচামাল আমাদানি করে তারা। এসব কনটেইনার থেকে পণ্য খালাসের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের নিয়ম অনুযায়ী মাশুলও পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ এখনও পণ্য খালাসের অনুমতি দেয়নি। যে কারণে তারা মোটা অংকের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

তিনি বলেন, দেড়মাস ধরে বন্দরে জাহাজে এসব পণ্য আটকে থাকায় উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা বারবার ধর্ণা দিয়েও কোনো সুরাহা পাচ্ছি না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রায় ২০টি প্রতিষ্ঠান ও শিল্পগ্রুপের পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে হানজিনের কনটেইনারে আটকা পড়ে আছে। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সহসভাপতি ও আরামিট সিমেন্টের চেয়ারম্যান সৈয়দ জামাল আহাম্মেদ এ প্রসঙ্গে জানান, হানজিনের কনটেইনার বিষয়ক জটিলতা দ্রুত সমাধান করা জরুরি। চট্টগ্রাম বন্দরে বাংলাদেশি আমদানিকারকদের কোটি কোটি টাকার পণ্য হানজিনের কনটেইনারে আটকে আছে। এই বিষয়টি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

উল্লেখ্য, গত ২০ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, দেউলিয়া হয়ে যাওয়ায় এবং বন্দরের পাওনা বাকি থাকায় হানজিনের লোগোযুক্ত কোনো জাহাজ থেকে কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দরে ওঠা-নামা করা যাবে না। বন্দরে জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানোয় নিয়োজিত সাতটি প্রতিষ্ঠানকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।



মন্তব্য চালু নেই