কঠিন সময় সিরীয় রোজাদারদের

রমজান মাস সংযম আর আত্মশুদ্ধির মাস। তবে মুসলিম বিশ্বজুড়ে মাসটি মুসলমানরা সাধারণভাবে এক ধরনের উৎসবমুখর পরিবেশেই পালন করে থাকে। সেহরি আর ইফতার নিয়ে নানা আয়োজন থাকে সারা মাসে।
কিন্তু এই মাসটি সিরীয় মুসলমানদের জন্য খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন দেশে উদ্বাস্তু হিসেবে বসবাস করা সিরীয়দের জন্য। গৃহযুদ্ধে তছনছ হয়ে গেছে সিরিয়া। একসময় যারা স্বচ্ছল জীবনযাপন করতেন, তাদের অনেকে এখন হাত পাতছেন অন্যদের কাছে। কবে তাদের দুর্দশার অবসান হবে তা-ও তারা জানেন না।
এমনই এক ব্যক্তি জামাল হিলাল। তিনি তার পরিবার নিয়ে জর্দানের একটি উদ্বাস্তু শিবিরে থাকেন। সারা রাত কাটে কিভাবে পরিবার সদস্যদের নিয়ে সেহরি খাবেন। আর সারা দিন চিন্তা থাকে কী দিয়ে ইফতার করবেন।
এক বছর আগে জামাল এবং তার পরিবার জর্দানের আজরাক শিবিরে ঠাঁই গেরেছিলেন। কিন্তু ভয়ঙ্কর মরুভূমির রুক্ষ্মতা থেকে রেহাই পাননি। তারপর জর্দানের রাজধানী আম্মানের পূর্বদিকে এক গরিব এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন।
তিনি জানান, আজরাক ক্যাম্প থেকে সরে যাওয়ার কারণ হলো সেখানে বিদ্যুৎ নেই। পানিরও কোনো ব্যবস্থা নেই। অনেক দূর থেকে সামান্য কিছু পানি সংগ্রহ করা যায়।
কিন্তু সেখান থেকে সরে এখন যেখানে ওঠেছেন, সেই স্থানটিও কম ভয়াবহ নয়।

সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, এখানে জাতিসঙ্ঘ কোনা সহায়তা নেই। মেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে পারছেন না। নিজের ডায়াবেটিস রোগের ওষুধ পর্যন্ত সংগ্রহ করতে পারছেন না। তার স্ত্রী নওয়ালকে কাজের সন্ধানে বাইরে ছুটতেই হয়েছে।
নওয়াল জানান, একটু পানি আর মেয়েদের জন্য সামান্য খাবার কেনার জন্য তাকে কাজ করতে হয়।
তারা যে দুর্বিসহ পরিস্থিতিতে পড়েছেন, তাতে করে এখন তারা মনে করছেন, এর চেয়ে সিরিয়া গিয়ে মৃত্যুবরণ করাই ভালো।
রমজানে তাদের ভরসা প্রতিবেশীদের সামান্য সহায়তা। কোনো প্রতিবেশী যদি তাদের জন্য কিছুটা গোশতও ইফতারের জন্য পাঠান, সেদিন তারা মনে করেন, তারা বিশাল কিছু পেয়েছেন। তাদের মনে হয়, দুনিয়ার সেরা খাবার দিয়ে তারা ইফতার সারলেন।
পুরো পরিবার রান্নাঘরের চুলাটা জ্বালিয়ে রাখার জন্য সারা দিন কাজ করতে প্রস্তুত। কিন্তু কাজ কোথায় পাওয়া যায়।
জামাল বলেন, সিরিয়ার উদ্বাস্তুদের দিকে নজর দিতে আমরা বিশ্ববাসীর প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। সামান্য সাহায্য করুন। এত অসহায় লোক খুব বেশি নেই। আমরা একটু খাবার আর একটু পানি চাই।
(আল জাজিরা থেকে)



মন্তব্য চালু নেই