কক্সবাজারকে আধুনিক পর্যটন নগরী করতে সংসদে বিল

পরিকল্পিত নগরায়নের মাধ্যমে কক্সবাজারকে আধুনিক পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ জন্য জাতীয় সংসদে ‘কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন- ২০১৫’ নামে একটি বিল উত্থাপন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বিলটি উত্থাপন করেন। উত্থাপনের পর বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পৃথিবীর দীর্ঘতম সুমুদ্র সৈকত ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যম-িত পর্যটন নগরী কক্সবাজার ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে বহুল পরিচিতি লাভ করেছে। একটি আধুনিক ও উন্নতমানের পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে কক্সবাজারের আবাসন, হোটেল, মোটেল, রাস্তাসহ অন্যান্য সকল নাগরিক ও পর্যটন সুবিধা পরিকল্পিতভাবে বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এ ছাড়া কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সংরক্ষণ ও কক্সবাজারকে একটি পরিকল্পিত শহর হিসেবে গড়ে তুলতে একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, উন্নয়ন কর্মকা- নিয়ন্ত্রণ এবং নাগরিক সুযোগ-সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে ‘কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ গঠন করা প্রয়োজন। এ জন্য বিলটি পাস করা প্রয়োজন।

বিলে আরো বলা হয়েছে, আইনটি কার্যকর হওয়ার পর ‘কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ নামে একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। এই কর্তৃপক্ষের সদস্য হবেন ১৫ জন। এদের চারজন হবেন পূর্ণকালীন, ১১ জন খ-কালীন। একজন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে পূর্ণকালীন সদস্যদের মধ্যে একজন প্রশাসন ও অর্থ, একজন প্রকৌশল এবং একজন পরিকল্পনা বিভাগ দেখবেন।

এ ছাড়া কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য হিসেবে ভূমি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, স্থাপত্য অধিদপ্তর, গণপূর্ত অধিদপ্তর, কক্সবাজার শিল্প ও বণিক সমিতির প্রতিনিধি থাকবেন। সদস্য হিসেবে আরো থাকবেন চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র। তিনজন বিশিষ্ট নাগরিকও কর্তৃপক্ষের খ-কালীন সদস্য হিসেবে থাকবেন। এদের মধ্যে একজন হবেন নারী।

বিলে বলা হয়েছে, একটি পরিকল্পিত পর্যটন নগরী গড়ে তোলার জন্য সমীক্ষা, জরিপ, মাস্টার প্ল্যান এবং নগর পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে এই কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে, মাস্টার প্ল্যান (মহাপরিকল্পনা) প্রণয়ন করাই হবে কর্তৃপক্ষের মূল কাজ।

কর্তৃপক্ষের ক্ষমতার বিষয়ে বিলে বলা হয়েছে, কেউ যাতে মাস্টার প্ল্যান পরিপন্থী কোনো কাজ না করে, সেজন্য কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারবে। এ আইন কার্যকর হওয়ার পর কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া কোনো ধরনের ইমারত, রাস্তাঘাট নির্মাণ, উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ বা বাস্তবায়ন করা যাবে না। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া পুকুর ও জলাধার খনন, পাহাড় বা টিলা কাটা যাবে না। এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষ দেখে-শুনে অনুমতি দেবে। অনুমতি দেওয়ার পর তারা অনুমতি বাতিলও করতে পারবে।

নির্মাণাধীন ভবন, জলাধার খনন, পাহাড় কাটা ইত্যাদি স্থগিত বা বন্ধ করার আদেশ দিতে পারবে কর্তৃপক্ষ। যদি কেউ এ আদেশ অমান্য করে, তাহলে সর্বোচ্চ এক বছর কারাদ- ও ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধানও রাখা রয়েছে এই বিলে।

এ ছাড়াও অন্য অপরাধগুলোর শাস্তি সেই আইন অনুযায়ী হবে। এ আইনের আওতায় সরকার বিধিমালা করতে পারবে। আর কর্তৃপক্ষ নিজেরা প্রবিধানমালা তৈরি করতে পারবে। এ আইনের আওতায় সংঘটিত অপরাধের বিচার প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক হবে। অপরাধগুলো হবে আমলযোগ্য। পুলিশ আমলে নিয়ে অপরাধীকে গ্রেফতর করতে পারবে এবং তা জামিনযোগ্য। এ ক্ষেত্রে মোবাইল কোর্টেরও এখতিয়ার রাখা হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই