ওসি এসআই নিয়োগে নতুন নীতিমালা

আঞ্চলিক ও রাজনৈতিক পরিচয় এবং নানা তদবিরে মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন থানায় এতদিন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বা উপপরিদর্শক (এসআই) পদায়ন করা হলেও এবার সে সুযোগ শেষ হয়ে যাচ্ছে। সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকেই মহানগরের থানাগুলোতে পুলিশের এসব পদে পদায়ন হবে। আর্থিক অনিয়ম, নৈতিক স্খলন বা চাকরিজীবনে বিভাগীয় শাস্তি পাওয়া পুলিশ কর্মকর্তারা থানার ওসি, পরিদর্শক বা উপপরিদর্শক হতে পারবেন না। পাশাপাশি ওই সব পদে ভালো ব্যবহার, বিনয়ী, গণমুখী, সেবাধর্মী মানসিকতাসম্পন্ন কর্মকর্তারাই নিয়োগ পাবেন। সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জারি করা হয়েছে এ-সংক্রান্ত নীতিমালা।

থানাগুলোতে পরিদর্শক ও উপপরিদর্শক পদায়নে করা হয়েছে উচ্চ পর্যায়ের পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি। বিভিন্ন থানায় এখন ওসিসহ তিনজন পরিদর্শকের পদ রয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, এর আগে গত বছর দেশের বিভিন্ন জেলার আওতাভুক্ত থানাগুলোতে ওসি নিয়োগে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছিল।

এবার মেট্রোপলিটন এলাকার থানাগুলোতেও পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তা এবং এসআই পদায়নে নতুন নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। মেট্রোপলিটন এলাকার কোনো থানায় পরিদর্শক বা উপপরিদর্শক নিয়োগে বলা হয়েছে আটটি নীতিমালার কথা।

পরিদর্শকদের পদায়নের নীতিমালায় বলা হয়েছে, পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে দুই বা তার বেশি এবং চাকরিজীবনে তিন বা এর বেশি বিভাগীয় গুরুদণ্ড পেলে কোনো পরিদর্শক থানায় পদায়নযোগ্য হবেন না। একইভাবে উপপরিদর্শকদের বেলাতেও চাকরিজীবনে দুই বা তার বেশি দণ্ডপ্রাপ্ত হলে ওই উপপরিদর্শক থানায় পদায়নের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। অবশ্য অবসর নেওয়ার সুবিধার্থে চাকরির শেষ বছর উভয় পদেই কর্তৃপক্ষ এ শর্ত শিথিল করতে পারবে। তবে আর্থিক অনিয়ম বা নৈতিক স্খলনজনিত কারণে একটিমাত্র বিভাগীয় গুরুদণ্ড থাকলেও পরিদর্শক বা উপপরিদর্শক পদে ওই কর্মকর্তা থানায় পদায়নের অযোগ্য বিবেচিত হবেন। শুধু তা-ই নয়, আর্থিক অনিয়ম বা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন এমন জনশ্রুতি থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে মেট্রোপলিটনের কোনো থানায় পদায়ন করা যাবে না বলে নীতিমালায় বলা হয়েছে। জনতার সঙ্গে অপেশাদারি আচরণ বা দুর্ব্যবহারের প্রবণতা রয়েছে, এমন কর্মকর্তারাও পদায়নের ক্ষেত্রে বিবেচনায় আসবেন না।

মেট্রোপলিটন থানায় পদায়নের অন্যান্য যোগ্যতার সঙ্গে নীতিমালায় আরও বেশ কিছু শর্ত যোগ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, মহানগরীর থানায় পদায়ন পেতে কর্মকর্তাকে কমপক্ষে এইচএসসি পাস হতে হবে। সুন্দর ব্যবহারকারী, বিনয়ী, গণমুখী ও সেবাধর্মী পুলিশিং কার্যক্রমে উৎসাহী এবং কর্মক্ষম কর্মকর্তাকে পদায়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। নীতিমালায় একই কর্মকর্তাকে বারবার একই মেট্রোপলিটন পুলিশে বদলিকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। পাশাপাশি ৫৪ বছর উত্তীর্ণ এমন কোনো পরিদর্শক বা উপপরিদর্শককে মেট্রোপলিটন থানায় পদায়নে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, মেট্রোপলিটন পুলিশে পদায়নের জন্য পরিদর্শক ও উপপরিদর্শক বাছাইয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজিকে (প্রশাসন) প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। ওই কমিটিতে অতিরিক্ত ডিআইজি (সংস্থাপন), এআইজি (সংস্থাপন), এআইজি (পিআইও) এবং মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনারকে (সদর দপ্তর ও প্রশাসন) সদস্য করা হয়েছে। এ কমিটি নীতিমালার অধীনে মেট্রোপলিটন থানাগুলোতে পরিদর্শক ও উপপরিদর্শক পদে পদায়নে প্যানেল প্রস্তুতি ও সুপারিশ করবে।



মন্তব্য চালু নেই