ওর সাথে ওর বন্ধুর বাসায় একটানা চার রাত কাটিয়েছি, কিন্তু এখন সে আমাকে চায় না

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানিয়েছেন নিজের সমস্যার কথা।

“আমার বয়স ২০ বছর। আমি ঢাকায় থাকি। আমার যখন ২ বছর ছিলো তখন আমার বাবা মারা যায়। আমার বাবা মারা যাওয়ার পর আমার মা, আমার ছোট বোনকে নিয়ে নানুর বাসায় চলে যায়। আমাকে রেখে যায়। আমাকে আমার দাদী, ফুপি, ফুপা বড় করেছেন। আমি এখনও দাদীর সাথেই থাকি। মা তেমন যোগাযোগ করেন না।

আমি যখন স্কুলে পড়তাম তখন আমাকে দাদীমা নিয়ে যেত। আমার ফ্রেন্ডরা ওদের মা বাবার সাথে আসতো। আমার দেখে কষ্ট লাগত, মন খারাপ করতাম। কষ্ট লাগত আমার কেন মা বাবা নেই। আমার পরিবার আমাকে অনেক আদর করে, অনেক ভালোবাসে কিন্তু এরপরও একটাই আফসোস যে হয়তো আমার মা বাবা থাকলে আরো ভালো থাকতে পারতাম। আমি দেখতে সুন্দর, তো আমি কোথাও গেলে অনেক ছেলেই আমাকে প্রেমের প্রস্তাব করত। কিন্তু আমি রাজী হতাম না। যখন আমি ক্লাস টেনে পড়তাম তখন আমাদের এলাকার একটি ছেলে আমাকে প্রপোজ করে। আমি রাজী হইনি। আমার এক ফ্রেন্ড আমাকে বলে যে ছেলেটা অনেক ভালো। ওর মা বাবা নাই, ভাইদের কাছে থাকে। আমার শুনে কষ্ট লাগে। আমি ভাবি যে আমার কষ্টটা ছেলেটা বুঝবে। আর ছেলেটাও রোজ আমার আমার কোচিং-এ দাঁড়িয়ে থাকতো। আমি ভাবি যেহেতু আমাদের দুজনেরই মা বাবা নাই ও আমাকে কষ্ট দিবেনা, তাই রিলেশন করি। না বলা কথা

কিন্তু কিছুদিন পর বুঝতে পারি সে অনেক বদলে গেছে। একটা সময় সে আমাকে জানায় সে অন্য কারো প্রেমে পড়েছে। রিলেশন রাখতে পারবেনা। তখন আমার এসএসসি পরীক্ষা চলে আসে। আমি অনেক ভেঙ্গে পড়ি তাই পরীক্ষার প্রস্তুতিও ভালো করে নিতে পারিনি। যাইহোক, আমি আস্তে আস্তে বিষয়টা ভুলে যাই। বুঝতে পারি সেটা আমার ভালোবাসা ছিলোনা, ভালোলাগা ছিলো।

২০১০ সালে আমি কলেজে ভর্তি হই এবং নিজে নিজে প্রতিজ্ঞা করি যে কোন সম্পর্কে জড়াবোনা। দিন ভালোই যেতে থাকে। তখন, আমার একটা ফ্রেন্ডকে আমার একটা ক্লাসমেট পছন্দ করে কিন্তু ছেলেটা বলতে পারেনা। তখন ছেলেটার ফ্রেন্ড আমাকে কথাটা বলে। তারপর আমি আর ঐ ছেলেরটার ফ্রেন্ড মিলে ওদের সম্পর্কের জন্য চেষ্টা করি। এভাবে ঐ ছেলের সাথে আমার সম্পর্ক হয়।

আমি বুঝতে পারি আমি প্রেমে পড়েছি। ছেলেটার ব্যবহারে বোঝা যেত যে সে আমাকে ভালোবাসে কিন্তু সে মুখে বলতোনা। আমি প্ল্যান করলাম যে ও যদি জেলাস ফিল করে তাহলে আমি নিশ্চিত হয়ে যাবো যে সে আমাকে ভালোবাসে। তাই আমি আমার স্কুল ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলতাম ওকে দেখিয়ে। দেখলাম যে ও জেলাস ফিল করে। তারপর আমি ভাবি আমার অনুভূতির কথা ওকে জানাবো। যেদিন বলতে যাই সেদিনই সে আমাকে দেখিয়ে অন্য মেয়েকে প্রপোজ করে। আমি অনেক কষ্ট পাই। কারণ আমি জানতাম সে আমাকে খ্যাপানোর জন্য এমন করেছে। আমি অনেক সহজে রেগে যাই। তারপর আমি বাসায় চলে আসি, অনেক কান্নাকাটি করি। তারপর আমার সেই ফ্রেন্ড যাকে নিয়ে আমি ওকে খেপাতাম, তাকে কল দেই। তাকে দেখা করতে বলি। আমার ফ্রেন্ড এলে আমি বলি আমি আর বাসায় থাকবোনা। অনেক জোর করি। তারপর আমি আমার আত্মীয়র বাড়ি চলে যাই। সেখান থেকে আমার দাদা দাদী আমাকে বাসায় নিয়ে আসে।

এখানে আরেকটা সমস্যা হয়। তা হল আমাকে ফ্রেন্ডটা আমাকে প্রপোজ করে। আমি কিছু না ভেবে রাজী হয়ে যাই। এরপর আমি কলেজে গেলে আমার পচন্দের ছেলেটি আমাকে স্যরি বলে এবং তার অনুভূতির কথা জানায়। তখন আমি ওকে জানাই যে আমি অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছি। কিন্তু সত্যি বলি, আমি ওকেই ভালোবাসতাম। আমি ফ্রেন্ডকে বলে দেই যে আমার সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। সম্পর্ক ভেঙে ফেলি। আমি আর আমার ভালোবাসার মানুষটি অনেক ভাল সময় কাটাতে থাকি। আমি ওকে বলি ওর পরিবারকে আমাদের কথা জানাতে। সে জানায়। কিন্তু তার পরিবার না করে দেয়। তারা আমাকে পছন্দ করতোনা। কিন্তু কেন তা জানিনা। এরপরও আমরা সম্পর্ক চালিয়ে নিতে থাকি। আমার পরিবার আগে থেকে জানত যে ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড তাই আমার বাসায় কোন সমস্যা হতো না। ও আমাদের বাসায় প্রায় আসা যাওয়া করত। ওকে আমার পরিবার পছন্দ করত একটা ছেলেবন্ধু হিসেবে। আমার স্বামী হিসেবে নয়। সে তখন অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে। আর একটা এড ফার্মে ম্যানেজার হিসেবে আছে আর তার একটি দোকান ও আছে। কিন্তু ২ লাখ টাকা লোন আছে যার কারনে সে অনেক চিন্তিত।

এখন আসল সমস্যার কথা বলি। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর আমাদের সম্পর্কটা আরো দৃঢ হয়ে গিয়েছিলো। হঠাৎ করে দেখলাম সে আমাকে সময় দেয়না। কোন কল দেয়না, দেখা করতে চাইলে দেখা করতে চায়না আর করলেও অনেক ঝগড়া করে। আমাকে ও বৌ ডাকত তাই আমাকে বৌ এর মতই শাসন করত। তো ওর জব চলে যায় আর লোন ছিলো। তাই সে আমার উপর সব জেদ তুলত। সে এমন করতো যে আমি ওর জীবন থেকে চলে গেলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে আর আমার বাসায় আমার জন্য পাত্র দেখা হচ্ছিলো। আমার অনেক জেদ হয়। মনে হল, ও যখন এমন করে, আমিই তো ওর সমস্যা, আমি সরে যাই, ও ভালো থাকুক। তাই আমি বিয়ের জন্য রাজী হই।

কিন্তু বিয়েটা আমি একা কাজী অফিসে গিয়ে করি। তারপর আমার স্বামী আমাকে তার বন্ধুর বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে আমি ৪দিন থাকি কিন্তু আমাকে মাঝে কোন শারিরিক সম্পর্ক হয়না। আমি কেবল জেদের বসে ওকে বিয়ে করি। তারপর আমি আমার বাসায় আসি। আমার বিয়ের আগে প্রেমিককে ফেসবুকে ম্যাসেজ দেই কিন্তু সে বিয়ের দিন রাতে ম্যাসেজটা পায়। তারপর সে আমাকে পাগলের মত খোঁজে। আমি নম্বর বদলে ফেলায় আমাকে কল দিয়েও পায়না। এদিকে স্বামীর পরিবার অনেক যৌতুক দাবী করে। অনেক খারাপ ব্যবহার করে। তাই আমি স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছি। আমি আমার ফুপিকে নিয়ে কাজী অফিসে যাই, আমার প্রেমিকও সেখানে ছিলো। ওর সামনেই আমি ডিভোর্স দেই। এখনা আমার প্রেমিকের সাথে আমার কথা হয়। আমি তাকে অনেক ভালোবাসি। সেও করে কিন্তু কিছু বলেনা। আমাকে গ্রহণ করবে কিনা তাও বলেনা।

কিছুদিন যাবত আমার ফেসবুকে একটি ছেলে বন্ধু হয়। সে দুবাই থাকে। আমি তাকে আমার পুরো অতীত বলি। সে আমাকে বিয়ে করতে চায়। বলেছে আগামী বছর দেশে এসে পরিবারকে নিয়ে এসে আমাকে বিয়ে করবে। কিন্তু তার জন্য আমার কোন অনুভূতি নাই। আমি আমার প্রেমিককেই ভালোবাসি। আমি এখন কী করবো। দয়া করে একটা সমাধান দিন।”

পরামর্শ:
নিজের জীবনটাকে আপনি হিন্দি সিরিয়াল বানিয়ে ফেলেছেন আপু। অতিরিক্ত আবেগ প্রদর্শন করতে গিয়ে এমন অবস্থা করেছেন জীবনটির যে এখন এই অবস্থা থেকে ফিরে আসা কঠিন। এমন আচরণ কেউ জীবনের সাথে করে? একের পর এক ভুল আপনি করে চলেছেন, এবং এখনো ভুলই করছেন। খুব দ্রুত এই সমস্যা থেকে যদি বের না হতে পারেন, তাহলে আপনার জন্য জীবনে কঠিন পরিণতি অপেক্ষা করছেন। না বলা কথা , সুবন্ধু সমীপেষু ,জীবনের গল্প

একটি জিনিস আমি বুঝতে পারছি না, আপনাকে বাসায় কেউ শাসন করে না? আমার মনে হচ্ছে বাড়ির সবার অতিরিক্ত আদরও আপনার এই ভুলগুলোর পেছনে অনেকটা দায়ী। একেবারে অল্প বয়স থেকেই প্রেম, হুটহাট সম্পর্কে জড়ানো, অকারণে বাড়ি থেকে চলে যাওয়া, হুট করে বিয়ে, আবার হুট করেই ডিভোর্স ইত্যাদি সবই প্রমাণ করে যে আপনি খুবই অস্থির স্বভাবের। একটা বিষয়ে মাথা ঠাণ্ডা করে চিন্তা করার আগেই আপনি একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। এবং সেই সিদ্ধান্ত সর্বদা ভুল হয়। এখন পর্যন্ত আমি কোন ঠিক সিদ্ধান্ত দেখতে পাচ্ছি না।

আরেকটি জিনিস লক্ষ্য করছি, আপনি একজনের সাথে সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি হলেই আরেকজনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যান। মাত্র ডিভোর্স হয়েছে, এখনো প্রাক্তন প্রেমিকের সাথে যোগাযোগ আছে, এর মাঝেই ফেসবুকে আপনি আরেকজনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে গেছেন। আবার প্রেমিকের সাথে দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলে আরেকজনকে বিয়ে করে ফেলেছেন। যেহেতু কাজী অফিসে বিয়ে করেছেন, বুঝতেই পারছি যে সেই বিয়েটিও নিজেই সম্পর্ক করে করেছিলেন। একটি ছেলে যদি আপনাকে ভালো না বাসে, পালিয়ে বিয়ে করে নিয়ে যাবার কথা না। আবার বিয়ের পর অ্যাডজাস্ট করার একটু চেষ্টা করার বদলে হুট করে ডিভোর্স… আপু, এই অভ্যাস ছাড়তে না পারলে তো কখনোই সুখী হতে পারবেন না। সম্পর্কে সমস্যা হবেই। কিন্তু তার মানে তো এটা না যে দৌড়ে আরেকজনের কাছে চলে যেতে হবে।

যাই হোক, যা হয়েছে তা হয়েছে। আমার মনে হয় না আপনার প্রাক্তন প্রেমিক আপনাকে বিয়ে করবে। আগেই তার বাড়ি থেকে মানা করে দিয়েছিল আর এখন তো আপনি ডিভোর্সি। সে কোন কথা বলছে না মানে তার কিছু বলার নেই। তারপরও তাঁকে সরাসরি জিজ্ঞেস করতে পারেন। সে যদি মানা করে দেয়, তাহলে আপনার নতুন করে জীবন শুরু করাটাই ভালো হবে। তবে এখনোই নয়। ২/৩ বছর সময় নিন। লেখাপড়া শেষ করে নিজের পায়ে দাঁড়ান। তারপর দেখেশুনে বিয়ে করা যাবে। তাড়াহুড়া করতে গিয়ে এই অল্প বয়সে জীবনটা সিনেমা বানিয়ে ফেলবেন না প্লিজ। কষ্ট আর কেউ পাবে না, পেটে কিন্তু হবে আপনার একারই।

আপনার বয়স খুবই কম আপু। তাই বলছি, প্লিজ নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করুন। আর প্লিজ বিয়ে করার চিন্তা আপাতত মাথা থেকে বাদ দিন। নিজের পায়ে না দাঁড়িয়ে বিয়ে করবেন না। নিজেকে সময় দিন। অবশ্যই খুব ভালো একজন মানুষ আপনার জীবনে আসবে।



মন্তব্য চালু নেই