ওরা শিক্ষার জন্য জীবন যুদ্ধে

চার পাশ পানি। মাঝখানে বসবাস। বের হলে নৌকা নিয়ে যেতে হবে। এ ছাড়া উপায় নেই।

এ স্থানটির নাম রউয়াইল গ্রাম। গ্রামটি হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ইউনিয়নে অবস্থিত। এখানে রয়েছে দেড় শতাধিক পরিবারের বসবাস। লোকসংখ্যা ৫ শতাধিক।

দূর থেকে এ স্থানটি দ্বীপের মত মনে হবে। যদিও এখানে স্বাস্থ্যসেবার জন্য তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে এখানের শিশুরা যাতে শিক্ষা বঞ্চিত না হয় এজন্য ২৩ শতক জমির ওপর ১৯৭৩ সালে রউয়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। বর্তমানে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা শতাধিক। শিক্ষক মাত্র একজন। আর রয়েছেন একজন পিয়ন। মাঝেমধ্যে তিনিও পাঠদানের দায়িত্ব নেন।

এ স্কুলের সবদিক পানিতে থৈ থৈ করছে। নৌকা দিয়ে শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে। এ অবস্থা দেখলে মনে হবে তারা যেন জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে পাঠশালায় এসে শিক্ষা গ্রহণ করছে।

একমাত্র শিক্ষক হাবিবুর রহমান জানান, প্রতিদিন শিক্ষার্থীরা নৌকা চালিয়ে স্কুলে আসছে। নানা সময়ে তারা নৌকা থেকে পড়ে গিয়ে আহতও হয়। তারপরও তারা পাঠ গ্রহণে অতি আগ্রহী। রেজাল্টও ভালো হচ্ছে।

পিয়ন শ্রীধাম সরকার জানান, দায়িত্বের বাইরেও শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছি।

শিক্ষার্থী সুপ্রিয়া বলেছে, প্রতিদিন নৌকা করে তারা স্কুলে এসে লেখাপড়া করছে। বিদ্যুৎবিহীন এ স্কুলটির ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তার সঙ্গে নেই পর্যাপ্ত আসবাবপত্র। নিরাপত্তা দেয়ালেও ধরেছে ফাটল। শত সমস্যার মধ্যেও শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে নিয়মিত স্কুলে আসছে।

উপজেলা শিক্ষা অফিস জানায়, এ ব্যাপারে উপরে লেখালেখি করা হয়েছে।

এ লেখার শেষ হচ্ছে না যেন। অবশেষে এ এলাকার বাসিন্দা শ্রীকান্ত সরকার হবিগঞ্জ-সিলেট জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নারী সাংসদ আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর কাছে স্কুলের এ অবস্থার সঙ্গে গ্রামের বেকার সমস্যার কথাও তুলে ধরেন। নিজ চোখে এ সব অবস্থা দেখতে তিনি গ্রাম ও স্কুলটি পরিদর্শন করেন।

এ সময় তাদেরকে তিনি বলেন, এসব সমস্যার সমাধান করার উপায় বের করে চেষ্টা করবেন। শিক্ষা গ্রহণ করতে ওরা জীবন যুদ্ধে নেমেছে। আমি মনে করি তারা একদিন উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হবে। বর্তমান সরকার শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করছে। তারাও এ অবস্থায় থাকবে না। তাদের উন্নত শিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা হবে বলে আমি আশাবাদী।

 

রাইজিং বিডির সৌজন‌্যে



মন্তব্য চালু নেই