ওমরা শেষে দেশে ফেরা : প্রমাণ দেখাতে ব্যর্থ অধিকাংশ এজেন্সি

ওমরা হজ পালন শেষে নিজেদের লোক বাংলাদেশে ফিরে আসার দাবি করলেও অনলাইনে এ সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি অভিযুক্ত ৫২ হজ এজেন্সির অধিকাংশ। এসব এজেন্সির অনেকেই ইচ্ছা করে প্রকৃত ইউজার আইডি দিলেও ভুল পাসওয়ার্ড দিয়ে তদন্ত কমিটিকে বিভ্রান্ত করেছেন। যে কারণে অনলাইনে ঢুকে এজেন্সিগুলোর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

ওমরার নামে মানবপাচারের অভিযোগ তদন্তে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির প্রথম দফা জিজ্ঞাসাবাদে হজ এজেন্সিগুলো এমন সব অনিয়মের আশ্রয় নেয় বলে সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা যায়।

মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বায়তুল মোকাররমের ইসলামিক ফাউন্ডেশন কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় তদন্ত কমিটির প্রথম দফা জিজ্ঞাসাবাদ। কমিটির প্রধান ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রশাসন মো. শহিদুজ্জামান বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।

কমিটির প্রধান ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রশাসন মো. শহিদুজ্জামান বলেন, ‘প্রথম দফা তদন্তকাজ শেষ হয়েছে। প্রথম দফায় আমরা ৫২ এজেন্সিকে ডেকেছিলাম। তার মধ্যে ৫০ এজেন্সির প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।’

তিনি আরো বলেন, কয়েকটি এজেন্সি ছাড়া অধিকাংশ হজ এজেন্সির প্রতিনিধি অনলাইনে তাদের লোক ফেরত আসার তথ্য প্রমাণ দেখাতে পারেননি। আগামী ৩ সেপ্টেম্বর বাকি ৫২ এজেন্সির সঙ্গে কথা বলে খুব দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

সূত্র জানায়, প্রথম দফায় যে ৫২ হজ এজেন্সিকে ডাকা হয়েছে তাদের অধিকাংশ এজেন্সির মালিক হাজির হননি। এজেন্সির পক্ষে তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারি তদন্ত কমিটির শুনানিতে অংশ নেন। এ সময় তারা ওমরায় সৌদি আরবে পাঠানো লোকের নাম-ঠিকানা সম্বলিত লিখিত তথ্য জমা দেন। কিন্তু এজেন্সির মাধ্যমে অনলাইনের যে ইউজার আইডি দিয়ে লোক পাঠানো হয়, তা সামনা-সামনি চেক করা হলে অধিকাংশ এজেন্সির ইউজার আইডিতে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। অনেকের ভুল পাসওয়ার্ডের কারণে অনলাইনে কোনো তথ্য দেখার সুযোগ হয়নি। শুনানি শেষে যেসব এজেন্সির প্রতিনিধি অনলাইনে তাদের লোক ফেরত আসার তথ্য দেখাতে পারেননি, তাদের কাছ থেকে এ সংক্রান্ত স্বীকারোক্তিমূলক লিখিত বক্তব্য নেওয়া হয়। ভুল পাসওয়ার্ড দিয়ে তদন্ত কমিটিকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে, এমন কথা বেশ কিছু এজেন্সির প্রতিনিধিকে শুনানি শেষে বলাবলি করতে দেখা গেছে। তবে হজ মৌসুমের কারণে তদন্তকাজের শুনানিতে মালিকরা অংশ নিতে পারেননি বলেও জানিয়েছেন অনেক এজেন্সির প্রতিনিধি।

দেশের ১০৪টি হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে ওমরার নামে মানবপাচারের অভিযোগ উত্থাপন করে সৌদি আরবের হজ অফিস। এসব এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় তারা। দীর্ঘদিন গড়িমসি করার পর ধর্ম মন্ত্রণালয় গত ২৩ আগস্ট পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। প্রথম দফায় ৫২ এজেন্সিকে মঙ্গলবার বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কার্যালয়ে শুনানির জন্য নোটিশ দেয় কমিটি। বাকি ৫২ এজেন্সিকে ৩ সেপ্টেম্বর শুনানির জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার ৫২ এজেন্সির মধ্যে ৫০ এজেন্সি শুনানিতে অংশ নেয়। প্রথম দফায় যেসব এজেন্সি শুনানিতে অংশ নেয়, তা হলো রাজধানীর নয়াপল্টনের জেমিনি ট্রভেলস লিমিটেড, চট্টগ্রামের সবুজ বাংলা ইন্টারন্যাশনাল, ঢাকার মারুফ ট্রাভেলস, চট্টগ্রামের গোল্ডেন বেঙ্গল, সিলেটের অলরাইট ট্রাভেল, সিলেটের রাব্বানি ওভারসিস, চট্টগ্রামের কনকর্ড ইন্টারন্যাশনাল, ঢাকার পারাবাত ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, ঢাকার এমএমআর অ্যাভিয়েশন, ঢাকার রওশন ট্রাভেল ইন্টারন্যাশনাল, ঢাকার আল সোবহানি ইন্টারন্যাশনাল, ঢাকার ইউনাইটেড স্টার ট্রাভেলস, আফতাব ট্রাভেলস, চট্টগ্রামের থ্রি স্টার ট্রাভেলস, ঢাকার আল নুর ইন্টারন্যাশনাল, মাসুদ ট্রাভেলস, টপকন ওভারসিজ, সিলেটের সিটি ওভারসিস, চট্টগ্রামের হাশিম ওভারসিস, ঢাকার খাদেম এয়ার সার্ভিস, রয়েল এয়ার সার্ভিস, লর্র্ড ট্রাভেলস, মেসাস লাকি ওভারসিস, টাইমস এভিয়েশন, বেঙ্গল ট্রেড অ্যান্ড টুরিজম, আল আরাফাহ ওভারসিস, সুরেশ্বরী ট্রাভেলস, কুমিল্লা ট্রাভেলস, মেগাটপ ট্রাভেলস, সনজরি ট্রাভেলস, মল্লিকা ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল, এমপি ট্রাভেলস, এডমির এয়ার ট্রাভেলস, গালফ ট্রাভেলস, সিটি নিয়ন ট্রাভেলস, উইয়ংস ট্রাভেলস, আইসিও ইন্টারন্যাশনাল, এয়ার এক্সপ্রেস, এভারগ্রিন ট্রাভেলস।



মন্তব্য চালু নেই