দিল্লিতে ওবামা

ওবামার ভারত সফর প্রভাব ফেলবে কি বাংলাদেশে?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা দিল্লি পৌঁছেছেন। ভারতের স্থানীয় সময় রোববার সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে তার বহনকারী এয়ারফোর্স ওয়ান বিমানটি দিল্লি ইন্দ্রিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ওবামার সঙ্গে ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামাও রয়েছেন।

তাদের স্বাগত জানাতে দিল্লির ওই বিমানবন্দরে হাজির হয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আগে থেকে ভারতের কেন্দ্রীয় কয়লা, শক্তি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিমন্ত্রী পীযূষ গোয়ালসহ সরকারের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বিমানবন্দরে অবস্থান করেন। তার আগমন উপলক্ষে দিল্লিজুড়ে নেওয়া হয়েছে অভূতপূর্ব নিরাপত্তা।

জিনিউজের খবরে বলা হয়েছে, হায়দরাবাদ হাউস গার্ডেনে এক যৌথ বিবৃতির পর ওবামা ও মোদি একসঙ্গে কিছুক্ষণ সেখানে পায়চারি করবেন। এরপর রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির ভবনে যাবেন ওবামা।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে এসেছেন সস্ত্রীক ওবামা। আগামীকাল সোমবার ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ওবামা। কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই প্রথম ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে অতিথি হচ্ছেন।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আকবরউদ্দিন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ভারত সফরকে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এ সফরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শক্তি, বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। আমি নিশ্চিত করতে পারি যে, এই সফরের ফলাফল ঐতিহাসিক হবে।’

এর আগে হোয়াইট হাউস জানায়,গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে (বাংলাদেশ সময়) যুক্তরাষ্ট্রের এন্ড্রুজ এয়ারফোর্স ঘাঁটি থেকে রওনা হয়েছেন ওবামা। জ্বালানি নিতে জার্মানির রামস্টেইনে সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতি করে প্রেসিডেন্ট ওবামাকে বহনকারী এয়ারফোর্স ওয়ান আজ স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির পালামের এয়ারফোর্স স্টেশনে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

ওবামার ভারত সফর প্রভাব ফেলবে কি বাংলাদেশে?
তিন দিনের সফরে রোববার সস্ত্রীক ভারত এসে পৌঁছলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে স্ত্রী মিশেল ওবামাকে সঙ্গে নিয়ে বিমান থেকে নেমে আসেন। সৌজন্য বিনিময় করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। ওবামার সফরকে ঘিরে বাংলাদেশের দৃষ্টিও এখন নয়া দিল্লির দিকে। ভারত কী পাচ্ছে ওয়াশিংটন থেকে বা ওয়াশিংটন দিল্লি থেকে কী নিয়ে যাচ্ছে এমন চুলচেরা বিশ্লেষণের মধ্যে বাড়ছে বাংলাদেশের প্রত্যাশাও। মোদি-ওবামার বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা থাকায় ওবামা চলে গেলে নয়া দিল্লি ঢাকার প্রতি কী মনোভাব দেখায় সেটিও ভাবার বিষয়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা এর আগে ২০১০ সালে ভারত সফর করেছিলেন। আর এ সফরের মধ্য দিয়ে তিনি হতে যাচ্ছেন প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন দু’বার ভারত সফর করবেন। ফলে ভারতের জন্য এ ধরনের ঘটনা ঐতিহাসিক হতে চলায় সর্বত্র খুশির বন্যা বয়ে গেলেও প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে চলছে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সহিংসতা। অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির কর্মসূচিকে ঘিরে দেশের কোথাও না কোথাও সহিংসতা চলমান রয়েছে।

সূত্রমতে, দেশের মানুষ বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নানামুখী দুশ্চিন্তায় থাকলেও বিশ্লেষক এবং বিশেষজ্ঞরা চোখ রাখছেন নয়া দিল্লির দিকে। তারা বলছেন, দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসীন হওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা দ্বিতীয়বার দিল্লি সফর করছেন যা এশিয়ার রাজনীতির জন্য নতুন বার্তা আনতে যাচ্ছে।

আমেরিকায় দায়িত্বপালন করা ঢাকার সাবেক এক কূটনীতিক বলেন, চীন নতুন করে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে। চীনা প্রেসিডেন্ট ভারত সফরের পাশাপাশি মালদ্বীপ এবং শ্রীলঙ্কাও সফর করেছেন। তার পাকিস্তান যাওয়ারও কথা ছিল। পাকিস্তানি রাজনীতি তখন এলোমেলো ছিল বিধায় তিনি পাকিস্তান সফরে যাননি। কিন্তু চীন পাকিস্তান বন্ধুত্ব নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও চীন সফর করে এসেছেন। ব্রিকস ব্যাংক নিয়ে বাংলাদেশেরও আগ্রহ রয়েছে। কারণ বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ নিয়ে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতাও কম নয়। এছাড়াও চীন মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশে বিনিয়োগে প্রচণ্ড আগ্রহী। ফলে ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক সার্বিক বিষয়ের ওপর নির্ভর করে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই শক্তিধর আমেরিকা ও ভারতের মধ্যে ‘দূরত্ব’ কমে এলে এর দ্বারা উপকৃত হবে দক্ষিণ এশিয়া। মার্কিন সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে উঠলে বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারতের মনোভাবেও পরিবর্তন আসতে পারে বলে ধারণা তাদের।

তথ্যসূত্র : জিনিউজ ও ইন্টারনেট।



মন্তব্য চালু নেই