ওদের তদবিরে অতিষ্ঠ সরকারি দপ্তর

ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ প্রভৃতি সংগঠনের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের উৎপাত তো আছেই; সচিবালয়সহ সরকারি দপ্তরগুলোতে নতুন উপদ্রব হিসেবে দেখা দিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন উপকমিটির সহসম্পাদক পদধারী নেতারা। সিটি করপোরেশন, জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তর- কোনো দপ্তরই বাদ পড়ছে না। তাঁদের ‘জ্বালায়’ অতিষ্ঠ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মতে, টানা দুই দফায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর উৎপাতের মাত্রা বেড়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মেশিনারিজ সাপ্লাই, ছোট-বড় টেন্ডার থেকে শুরু করে নিয়োগ, বদলি, পদায়ন, বরাদ্দ প্রভৃতি তদবিরের কাজ নিয়ে সংশ্লিষ্ট ভবনে ঘোরাফেরা করেন ওই নেতারা।
নাম গোপন রাখার শর্তে আওয়ামী লীগের সহসম্পাদকদের উৎপাতের কথা জানান সরকারি কর্মকর্তারা। জানাজানি হয়ে গেলে নাজেহাল হতে পারেন- এ ভয়ে তাঁরা স্বনামে মুখ খুলতে রাজি নন। জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট শীর্ষস্থানীয় কর্তারা কর্মঘণ্টার বেশির ভাগ ব্যয় করেন নেতাদের তদবির-সংশ্লিষ্ট কাজে।
দুজন যুগ্ম সচিব বলেন, ‘প্রতিদিন যে হারে আওয়ামী লীগের তদবিরবাজরা সচিবালয়ে আসে, তাতে সব পাস শেষ হয়ে যায় শুধু তাদের জন্য। আমাদের কাছে নির্দিষ্টসংখ্যক প্রবেশ-পাস থাকে। ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের নামে ইস্যু করতেই সব শেষ হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ জরুরি কাজে সচিবালয়ে এলে বা বন্ধু ও সাবেক কর্মকর্তারা কোনো কাজে এলে তাঁদের পাস দিতে পারি না।’
এদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা সহসম্পাদকদের প্রসঙ্গে কিছু জানতে চাইলেই নাক সিটকান। তাঁদের মতে, গুরুত্বপূর্ণ এ পদগুলো যাচাই-বাছাই না করেই যাকে-তাকে দেওয়া হয়েছে। ফলে এ দুরবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপকমিটির সহসম্পাদক কত তার নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। দলের সভাপতি সহসম্পাদক বানানোর দায়িত্ব যে নেতাকে দিয়েছেন তিনি তাঁর পকেটের লোককে নেতা বানিয়ে নিজের পক্ষ ভারী করেছেন। যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও মেধা বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। ফলে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। যাকে-তাকে সহসম্পাদক করায় দলের ও সরকারের জন্য একটা কাজই হয়েছে- বদনাম কেনা হচ্ছে।
সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য সহসম্পাদকদের বিষয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘তাঁদের কাজ কেন্দ্রীয় নেতা পরিচয় দিয়ে মাতবরি, চাঁদাবাজি, বেয়াদবি ও সরকারকে কলুষিত করা। আমার জানা মতে, সহসম্পাদকরা নিজেদের কেন্দ্রীয় নেতা বলেও অনেক জায়গায় দাবি করেন।’ উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘একবার অর্থ প্রতিমন্ত্রী এক জায়গায় অনুষ্ঠানে যান। সেখানে এক সহসম্পাদক তাঁর সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান এবং নিজেকে কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দাবি করে বলেন, আপনি তো (অর্থ প্রতিমন্ত্রী) একজন সদস্য মাত্র।’
তিনজন মন্ত্রীর একান্ত সহকারী সচিব (এপিএস) নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সহসম্পাদকদের উৎপাতে তাঁরা অতিষ্ঠ। দলীয় লোক হলেও মাঝেমধ্যে তাঁদের উৎপাতে মন্ত্রীরাও বিরক্ত হয়ে পড়েন। এ নেতারা নিয়োগ, বদলি, পদায়ন, বরাদ্দ- নানা বিষয়ে তদবিরের কাজ নিয়ে ঘোরাফেরা করেন।
এ সম্পর্কে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর বেপারী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একজন সহসম্পাদক সরকারি ভবনে গেলে, কার্ড দিলে অপরাধ কোথায় আমি জানি না। এটাকে অপরাধ হিসেবে দেখেন কেন আপনারা?’
উল্লেখ্য, তিনিও একজন সহসম্পাদক। সচিবালয়ে তাঁকেও দেখা যায়।
অনুসন্ধানে যেসব সহসম্পাদকের উৎপাতের কথা উঠে এসেছে তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বরিশালের বাউফলের জোবায়দুল হক রাসেল। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে প্রথমে তাঁকে ঘোরাফেরা করতে দেখা যেত। কিছুদিন পর দেখা গেল তাঁর বড় বড় ছবি দিয়ে ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার- দলীয় কার্যালয় ও রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের দেয়ালে সাঁটানো। এর পরই কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হন তিনি। বাগিয়ে নেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপকমিটির সহসম্পাদক পদ। নগর ভবন (ডিসিসি) ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সব কাজ তিনি করেন। এসব ভবনে কাজ বাগিয়ে নেওয়ার ওস্তাদ হিসেবে পরিচিত তিনি। জানা গেছে, তিনি নিজে কাজ করেন না। পার্সেন্টেজ নিয়ে তদবিরের কাজ বিক্রি করে দেন।
এ প্রসঙ্গে জোবায়দুল হক রাসেল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের যা আছে তাতে সহসম্পাদক পদ বেইচ্যা চলা লাগে না। আমি যদি কোনো কাজ করি, সেটা ব্যক্তিগত পরিচয়েই করি। আমাদের পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড আছে। বিবিএস কেব্লে চাকরি করি। দুই-আড়াই লাখ টাকা বেতন পাই। বাবার যা আছে তা দিয়েই চলে যায়। অন্য কিছু করতে হয় না। সহসম্পাদক পরিচয় দিয়ে এখন আলুপুরিও পাওয়া যায় না, যেভাবে সহসম্পাদক করা হয়েছে!’
সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি লিয়াকত সিকদারের কথা উল্লেখ করে রাসেল বলেন, ‘লিয়াকতও সহসম্পাদক; তাঁর কর্মীর কর্মীও এখন সহসম্পাদক।’ তবে অনেকেই কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, এ কথা স্বীকার করেন তিনি।
যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশনে তাঁর যাতায়াত সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যোগাযোগমন্ত্রীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক আছে, মন্ত্রণালয়ের ইঞ্জিনিয়ার, কর্মকর্তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ আছে। তবে মন্ত্রণালয়ে আমি কোনো কাজ করি না।’
লালবাগের বাসিন্দা হাসিবুর রহমান মানিক। ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবুর শিষ্য মানিক লালবাগ থানা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। সহসম্পাদক হয়ে সচিবালয়ে তদবির করে বেড়াচ্ছেন তিনি। সচিবালয়ের অতি পরিচিত মুখ মানিক। শুধু সচিবালয়ে নয়, মানিকের দাপট লালবাগের সর্বত্র। মিটফোর্ড, মেটারনিটিসহ ওই এলাকার সরকারি ভবনে ছোট-বড় সব কাজের নিয়ন্ত্রক তিনি। তাঁর সঙ্গে স্থানীয় একটি সিন্ডিকেটও আছে। মানিক এলাকায় হাজি সেলিমকে বস মেনে চলেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মানিক সব মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেন।
ডা. মানবেন্দ্র রায় পেশায় চিকিৎসক। এখন তাঁর বড় পরিচয় রাজনীতিক। সম্প্রতি সহসম্পাদকের পদ বাগিয়েছেন। পদ পেয়েই ভিজিটিং কার্ড বানান। এখন তিনি ঘুরে বেড়ান সচিবালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে। এমন কোনো দপ্তর নেই, যেখানে তাঁর কার্ড নেই। এমন কোনো তদবির নেই, যা তাঁর সাধ্যে নেই। তাঁর বড় পরিচয়, তিনি দিনাজপুরের বিরল থানা ছাত্রলীগের সাবেক অর্থবিষয়ক সম্পাদক।
জানতে চাইলে ডা. মানবেন্দ্র রায় বলেন, ‘সবাই এক রকম নয়। পদটা সম্মানজনক, তাই সম্মান ধরে রাখতে চাই।’ সচিবালয়ে বা অন্য জায়গায় যান স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘কোথাও ব্যক্তিগত কাজে যাই না। বাবা (সতীশ চন্দ্র রায়) রাজনীতি করেন। তাঁর কাছে অনেকেই আসেন তদবির নিয়ে। সেগুলোর জন্য সরকারি ভবনে যাওয়া-আসা হয়।’
গোলাম সরোয়ার কবির ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি। এখন আওয়ামী লীগের সহসম্পাদক। ‘বস’ হিসেবে শিষ্যদের কাছে পরিচিত। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। ‘বস’ কবিরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আরো দুটি দপ্তর- সিটি করপোরেশন ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। রাজউকেও তাঁর ব্যাপক প্রভাব। তাঁর অনেক শিষ্যও টেন্ডারবাজিতে জড়িত। তাঁর শিষ্য আবদুর রহিম নিয়ন্ত্রণ করেন বিদ্যুৎ ভবনের টেন্ডার।
জানতে চাইলে গোলাম সরোয়ার কবির বলেন, ‘আমি দেড়-দুই বছর হলো সহসম্পাদক হয়েছি। আমি ঠিকাদারি করি না। কেউ প্রমাণ করতে পারলে আদালতে বিচার হবে। আমি কোনো ভবনে যাই না।’ সহসম্পাদকদের দায়িত্ব কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। তবে যে কাজ করতে চায়, সে করতে পারে।’
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক ছিলেন আবদুল্লাহ আল হারুন রাসেল। এখন তিনি আওয়ামী লীগের সহসম্পাদক। মৎস্য ভবনের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণের সুবাদে ‘মৎস্য রাসেল’ উপাধি পেয়েছেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সহসম্পাদক রুহুল আমিন রিজভী একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের হল শাখার কর্মী ছিলেন। সহসম্পাদক হওয়ার পর তদবির আর টেন্ডারবাজিই তাঁর পেশা। মাসখানেক আগে টেন্ডারবাজি করতে গিয়ে গণপূর্ত ভবনে দলের নেতা-কর্মীদের হাতে ধোলাই খেয়েছেন তিনি।
ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন তোফাজ্জল হোসেন মামুন। আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপের ফুট-ফরমাশ খাটতেন। এই করে বাগিয়েছেন আওয়ামী লীগের সহসম্পাদকের পদ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা হতে পারেননি ওমর ফারুক। এখন তিনি আওয়ামী লীগের সহসম্পাদক। নিয়ন্ত্রণ করেন খাদ্য ভবন ও সিটি করপোরেশনের কিছু টেন্ডার।
আনোয়ার হোসেন ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। তিনিও আওয়ামী লীগের সহসম্পাদক। শরীফ উদ্দিন অনিম ছিলেন মিরপুর কলেজ ছাত্রলীগের নেতা; এখন সহসম্পাদক। আনোয়ার ও অনিম দিনের পুরোটা সময় সচিবালয়ে তদবির করে বেড়ান।
ব্যারিস্টার জাকির হোসেনও সহসম্পাদক। আইনজীবী হলেও ওকালতি করেন না। তেমন শক্তিশালী রাজনৈতিক অবস্থান ও পরিচয় নেই। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে নিজের ছবি দিয়ে ব্যানার-ফেস্টুন করে রাজনৈতিক মহলে কিছুটা পরিচিতি পেয়েছেন। অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালক হয়ে ব্যবসায়ীদের লোন পাস করিয়ে দেওয়ার বহু ঘটনা আছে তাঁর। বিনিময়ে পার্সেন্টেজ বাগিয়ে নেন। বিদেশে লোক পাঠান। এসবই সহসম্পাদকের পদের জোরে করেন- এমন অভিযোগ আছে। সেগুনবাগিচায় আলিশান ফ্ল্যাটে তাঁর বসবাস। সহসম্পাদক পরিচয় দিয়ে তাঁরও রয়েছে বিভিন্ন সরকারি ভবনে যাতায়াত।
মহিউদ্দিন মহারাজ পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার তেলিখালী ইউনিয়নের হরিণপালা গ্রামের লোক। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর একজন সরকারি কর্মকর্তার মাধ্যমে তাঁর পরিচয় হয় তৎকালীন সমাজকল্যাণমন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদের সঙ্গে। হয়ে যান তাঁর একান্ত সহকারী সচিব। তাঁর ভাগ্য বদলে যায় রাতারাতি। পরে ওই প্রভাবে বাগিয়ে নেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক পদটি।
একসময় গুলিস্তানে কাপড়ের ব্যবসা করার কারণে তাঁর পরিচয় দাঁড়ায় দর্জি মনির। এই মনির এখন আওয়ামী লীগের সহসম্পাদক। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মনির খান কামরাঙ্গীরচরের সুলতানগঞ্জ ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ডের নেতা ছিলেন। আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপের আস্থাভাজন তিনি। তাঁর সঙ্গে সখ্য গড়ে সহসম্পাদকের পদ পেয়েছেন মনির। এখন গোলাপের হয়ে এ পদ বিক্রি করছেন তিনি। তাঁর কাছে আড়াই লাখ টাকা জমা দিলে সহসম্পাদকের পদ পাওয়া যায় বলে জানা গেছে।
নাজমুল আহসান ওরফে মিলন মাতবর ২০০০ সালে কামরাঙ্গীরচর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েছিলেন। পরে ভাগ্যান্বেষণে পাড়ি জমান বিদেশে। ২০০৩ থেকে টানা আট বছর বিদেশে থাকার পর ফিরে আসেন দেশে। গোলাপের সহযোগী মনিরের মাধ্যমে তিনিও বাগিয়ে নিয়েছেন সহসম্পাদকের পদ।
একজন যুগ্ম সচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সহসম্পাদক পরিচয়ের নেতাদের উৎপাতে কাজ করাই কঠিন হয়ে পড়ে। সকাল ১০টা থেকে দুপুরের আগ পর্যন্ত তাঁদের তদবির নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয় আমাদের। সময় না দিলে ঝামেলা পোহাতে হয় অনেক। সরকারি কাজ ফেলে রেখে তাঁদের কাজে অগ্রাধিকার দিতে হয়।’
একজন এপিএস বলেন, ‘সহসম্পাদক হওয়ার জন্য একসময় ধানমণ্ডির কার্যালয়ে যাওয়া-আসা করেছি, জীবনবৃত্তান্ত দিয়েছি। কিন্তু সহসম্পাদকের আধিক্য দেখে পিছু হটি।’
সহসম্পাদক কিন্তু টেন্ডারবাজি যাঁদের মূল পেশা : হাসিবুর রহমান মানিক আজিমপুর এলাকার বিভিন্ন কাজের ভাগবাটোয়ারা নিয়ন্ত্রণ করেন, রফিকুল আলম গাফফারী রাসেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রেজিস্ট্রার ভবন ও গণগ্রন্থাগার কেন্দ্রের কাজে হস্তক্ষেপ করেন, ফারহান আহমেদ চট্টগ্রামে বিভিন্ন কাজ করেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শাহজাদা মহিউদ্দিনের ছত্রচ্ছায়ায়। গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু ডিসিসি উত্তর, কৃষি ভবন, খামারবাড়ী ও মিরপুরের বিভিন্ন কাজ নিয়ন্ত্রণ করেন। সোহেল রানা মিঠু রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ‘বস’। মামুনুর রশিদ শুভ্রকে খিলগাঁও-সবুজবাগের কেউ চাঁদা না দিয়ে কাজ করতে পারে না।
গঠনতন্ত্র যা বলে : উপকমিটি নিয়ে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ২৫(চ) ধারায় বলা হয়েছে- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রত্যেক সম্পাদকীয় বিভাগের কার্যক্রম অধিকতর গতিশীল ও সমন্বিত করার লক্ষ্যে একটি করিয়া উপকমিটি গঠন করবে। এ উপকমিটি একজন চেয়ারম্যান, একজন সম্পাদক, অনূর্ধ্ব পাঁচজন সহসম্পাদক, প্রয়োজনীয়সংখ্যক বিশেষজ্ঞ সদস্য, সংশ্লিষ্ট সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং নির্দিষ্টসংখ্যক সদস্য নিয়ে গঠিত হবে। জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের সদস্যবৃন্দ, যাঁরা বিভিন্ন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, তাঁরা পদাধিকারবলে সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত উপকমিটির সদস্য হবেন। সংগঠনের সভাপতি কর্তৃক উপকমিটির সদস্যসংখ্যা নির্ধারিত হবে এবং তিনি উপকমিটিগুলো গঠন করে দেবেন। সভাপতি সংগঠনের সভাপতিমণ্ডলী, উপদেষ্টা পরিষদ এবং কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যদের মধ্য থেকে উপকমিটির চেয়ারম্যান মনোনীত করবেন। সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় সম্পাদক সংশ্লিষ্ট উপকমিটির সম্পাদক হবেন। উপকমিটিগুলো সংশ্লিষ্ট বিভাগের কার্যক্রম জোরদার করার কাজে সহায়তা করবে। প্রত্যেক বিভাগ এর কর্মকাণ্ড-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও পরিসংখ্যান সংগ্রহ, সরবরাহ ও সংরক্ষণ করবে এবং সময়ে সময়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করবে। প্রতি তিন মাসে অন্তত একবার উপকমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় স্ব-স্ব উপকমিটি তাদের কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন ও করণীয় নির্ধারণ করবে।
জানা গেছে, প্রায় এক বছর হলো আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটিগুলো হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত এগুলোর কোনো সভা হয়নি।

সুত্রঃ কালেরকন্ঠ।



মন্তব্য চালু নেই