ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ

আজ ১৭ এপ্রিল, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন। ৪৪ বছর আগে ১৯৭১ সালের এই দিনে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে এক অনাড়ম্বর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণ। সেদিন শপথ অনুষ্ঠানে পাঠ করা হয় স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। সেই ঘোষণাপত্র রচিত হয় ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তান বাহিনী বাঙালির ওপর আক্রমণ শুরু করলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার ভিত্তিতে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পর পাকিস্তান বাহিনী গ্রেফতার করে বঙ্গবন্ধুকে। ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি করে গঠন করা হয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।

এই সরকারের অন্য সদস্যরা হলেন- উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, এ এইচ এম কামরুজ্জামান, খন্দকার মোশতাক আহমেদ। ১৭ এপ্রিল সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং কর্নেল আতাউল গনি ওসমানীকে প্রধান সেনাপতি ঘোষণা করা হয়। শপথ অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে মন্ত্রিসভার সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। এই অনুষ্ঠানে মেহেরপুরের অপরিচিত গ্রাম বৈদ্যনাথতলার নামকরণ করা হয় মুজিবনগর।

মেহেরপুর প্রতিনিধি মাহবুবুল হক পোলেন জানান, ১৯৭১ এর ১৭ এপ্রিল ছিল শনিবার। গ্রীষ্মের তপ্ত হাওয়া বইছিল। এরই মধ্যে মঞ্জুরিত হলো স্বাধীনতার সুরভিত পুষ্প। তখন কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমা প্রশাসক (এসডিও) ছিলেন ড. তৌফিক-ই-এলাহী। তিনিই সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেছিলেন। শুরুতেই কোরআন পাঠ করেন যুবক বাকের আলী। তার পরনে ছিল চেক লুঙ্গি ও সাদা শার্ট, মাথায় টুপি। বাকের আলী এখন মুজিবনগর ডিগ্রি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক। জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ গিয়েছিলেন স্থানীয় মিশনারির শিল্পীরা, তাদের নেতৃত্ব দেন প্রভাষক আসাদুল ইসলাম (প্রয়াত)। ১২ জন আনসারের একটি দল অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রীদের গার্ড অব অনার দেয়। যারা শপথ নেন তাদের পরনে ছিল সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি। অনুষ্ঠানে নেতাদের জন্য পাশের গ্রাম থেকে হাতলবিহীন কতগুলো চেয়ার আনা হয়েছিল, এগুলো এখন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত।

অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আবদুল মান্নান এমএনএ (পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী)। মুক্তিযুদ্ধকালে আবদুল মান্নান ছিলেন তথ্য, প্রচার ও বেতারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান কর্মকর্তা। অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ আলী (পরে শিক্ষামন্ত্রী) স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। অনুষ্ঠানে কর্নেল (অব.) এম এ জি ওসমানীকে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ সেদিন মুজিবনগরের বৈদ্যনাথতলায় ৮ পৃষ্ঠার এক বিবৃতি পাঠ করেন। তিনি ঘোষণা করেন বৈদ্যনাথ তলার নাম রাখা হলো ‘মুজিবনগর’।

বিবৃতিতে তাজউদ্দীন বলেন, ইয়াহিয়া খান গণহত্যা চালিয়ে নিজেই পাকিস্তানের কবর খুঁড়েছেন। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি : মুজিবনগর দিবস পালনের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছেন মেহেরপুর জেলা প্রশাসন। ঝকঝকে করা হয়েছে স্মৃতিসৌধ। রং-তুলির কাজ হয়েছে শেখ হাসিনা মঞ্চ ও স্মৃতিসৌধকে ঘিরে।

এ ছাড়া র‌্যাব, পুলিশ, বিডিআর ও আনসারের সমন্বয়ে তিনস্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা বলয়ের ব্যবস্থাও করা হয়েছে বলে মেহেরপুর পুলিশ প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে। মুজিবনগরে যেখানে স্মৃতিসৌধ দাঁড়িয়ে আছে ঠিক তার মাঝামাঝি স্থানে শপথ গ্রহণমঞ্চ স্থাপন করা হয়েছিল। ওখানে একটি স্তম্ভে উত্তোলন করা হয়েছিল জাতীয় পতাকা। স্তম্ভটিকে রেখেই স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করা হয়েছে।

বাণী : মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। কর্মসূচি : আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শুক্রবার ভোর ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও কেন্দ্রীয় এবং সব জেলা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে রক্ষিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে শহীদ জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং রাজশাহীতে এ এইচ এম কামরুজ্জামানের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ।

মুজিবনগরে কর্মসূচি : ভোর ৬টায় মজিবনগরে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, ১০টায় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, সোয়া ১০টায় গার্ড অব অনার প্রদান, সাড়ে ১০টায় আলোচনা সভা। এতে মুজিবনগর দিবস উদযাপন কমিটি চেয়ারম্যান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ মন্ত্রী, এমপি ও স্থানীয় নেতারা বক্তৃতা করবেন।



মন্তব্য চালু নেই