এক স্ট্যাটাসেই স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন নির্মলেন্দু গুণ

সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য কবি নির্মলেন্দু গুণকে স্বাধীনতা পদক দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। রোববার দুপুরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

কিছুদিন আগে (১০ মার্চ) স্বাধীনতা পুরস্কার নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন নির্মলেন্দু গুণ। শুধু তাই-ই নয়, তার ‘সহপাঠিনী’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর ‘বিরক্তি’ও প্রকাশ করেন তিনি।

ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘আমার একদা সহপাঠিনী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচারব্যর্থতাদৃষ্টে আমি প্রথম কিছুকাল অবাক হয়েছিলাম— এখন খুবই বিরক্ত বোধ করছি। অসম্মানিত বোধ করছি।’

হাসিনার উদ্দেশে নির্মলেন্দু গুণ বলেন, ‘আমাকে উপেক্ষা করার বা সামান্য ভাবার বা তুচ্ছ জ্ঞান করার সাহস যার হয়, তাকে উপেক্ষা করার শক্তি আমার ভিতরে অনেক আগে থেকেই ছিল এবং আশা করি এখনও রয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রীকে তার ‘ভুল’ সংশোধন করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘পারলে আপনার ভুল এখনই সংশোধন করেন।’

ওই স্ট্যাটাসে একুশে পদক প্রবর্তনের ইতিহাস টেনে কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের প্রথম সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৯৭৬ সালে একুশে পদক প্রবর্তন করেন। বঙ্গভবনে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে প্রথমবারের মতো একুশে পদক প্রদান করা হয়। পরে কবি জসীম উদ্দীন ও বেগম সুফিয়া কামাল একুশে পদকে ভূষিত হন।

‘অজানা কারণে আমি ওই অনুষ্ঠানের আমন্ত্রিত অতিথি ছিলাম। কিন্তু তৎকালীন কেবিনেট সচিব শফিউল আজম একুশে পদকের মানপত্রটি ইংরেজিতে পাঠ করার প্রতিবাদ জানালে আমাকে বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে বের করে দেয়া হয়। তাই পুরো অনুষ্ঠানটি আমার দেখার সুযোগ হয়নি, যদিও আমার নিমন্ত্রণ পুরো অনুষ্ঠানের জন্যই বৈধ ছিল।’

তিনি বলেন, “সম্ভবত পরের বছর (১৯৭৭) স্বাধীনতাবিরোধীদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে জেনারেল জিয়া একুশে পদকের পাশাপাশি ‘স্বাধীনতা পদক’ চালু করেন।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রসঙ্গ টেনে নির্মলেন্দু গুণ বলেন, ‘জিয়ার সবই খারাপ বিবেচনায় জেনারেল জিয়ার বাকি সবকিছু পরিত্যাগ করলেও তাঁর প্রবর্তিত একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদক প্রদান প্রথাটি শেখ হাসিনা ত্যাগ করেননি। ফলে এক পর্যায়ে ২০০০ সালে শেখ হাসিনার সরকার আমাকে একুশে পদকের জন্য মনোনীত করে।

‘কিন্তু সেই পদক তিনি নিজহস্তে আমাকে প্রদান করে যেতে পারননি। ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন এবং ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে বেগম খালেদা জিয়া হাসিমুখে আমাকে ওই পদক প্রদান করেন।

‘তারপর ১৫ বছর কেটে গেছে। এর মধ্যে আট বছর কেটেছে শেখ হাসিনার সরকারের। শেখ হাসিনা স্বাধীনতা পদকের মুলোটি আমার নাকের ডগায় ঝুলিয়ে রেখেছেন। কিন্তু দিচ্ছেন না। উনার যোগ্য ব্যক্তির তালিকা ক্রমশ দীর্ঘ হতে হতে আকাশে পৌঁছেছে। কিন্তু সেইখানেও আমার স্থান হচ্ছে না।’

কবি নির্মলেন্দু গুণ একজন চিত্রশিল্পীও। কবিতার পাশাপাশি তিনি গদ্য ও ভ্রমণকাহিনী লিখেছেন। ১৯৭০ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’ প্রকাশিত হওয়ার পর বিপুল জনপ্রিয়তা পায়।

ওই গ্রন্থের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে লেখা ‘হুলিয়া’ কবিতাটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। পরবর্তীতে এর উপর ভিত্তি করে তানভীর মোকাম্মেল একটি পরীক্ষামূলক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন।



মন্তব্য চালু নেই