এসপি স্ত্রী হত্যায় ৫০ সেকেন্ডের কিলিং মিশন!

এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে আজ রোববার সকালে তাদের চট্টগ্রামের বাসা থেকে ৫০ গজ দূরে জিইসি মোড়ে ছুরিকাঘাত ও গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।

সকাল সাড়ে ৬টার দিকে মহানগরীর জিইসি মোড় এলাকায় এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে।

এসপি বাবুল ও মাহমুদা খানম মিতু দম্পতির ছেলে আক্তার মাহমুদ মাহির (৭) এ ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী স্বাক্ষী।

ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরা থেকে একটি ভিডিও ফুটেজ পাওয়া। যেখানে দেখা গেছে, মোটসাইকেলে করে আসা তিন যুব এ কিলিং মিশনে অংশগ্রহন করেছে। চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) পরিতোষ ঘোষ গণমাধ্যমকে এ কথা জানিয়েছেন।

তিনি আজ দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গের সামনে বলেন, হত্যার ধরন দেখে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তারা আগে থেকেই ঘটনাস্থল রেকি করেছিলেন। ঘটনাস্থল থেকে ১০০ গজ দূরে বাসা থেকে বের হয়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে কখন আসবেন, তা নিশ্চয় দুর্বৃত্তরা আগে থেকে খোঁজখবর রাখছিল। পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী তাঁর ছেলে মাহমুদ আকতার মাহিরকে নিয়ে জিইসি মোড় পৌঁছার আগেই ওয়েল ফুড নামক দোকানের সামনে মোটরসাইকেলে করে তিন আরোহী আসে। যে গাড়ি চালাচ্ছিল, তার মাথায় হেলমেট ছিল। বয়স আনুমানিক ৩০ থেকে ৩৫। তার পেছনে দুজন বসা ছিল। মাঝখানে বসা যুবকের হাতে ছুরি ছিল। পেছনে বসা তৃতীয়জনের হাতে একটি পিস্তল ছিল।

তিনি আরও বলেন, মোটরসাইকেলে থাকা তিন যুবক প্রথমে মাহমুদা খানমকে মোটরসাইকেল দিয়ে ধাক্কা দেয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাঝখানে থাকা যুবক প্রথমে তাঁর বুকে, হাতে ও পিঠে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। তৃতীয়জন তার হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে খুব কাছ থেকে গুলি করে। প্রথম ফায়ারটি মিস হয়। দ্বিতীয় ফায়ারে বাবুল আক্তারের স্ত্রীর কপালের বাঁ পাশে গিয়ে লাগে। সবকিছু করতে ৪০ থেকে ৫০ সেকেন্ড লাগে।

পরিতোষ ঘোষ জানান, ভিডিও ফুটেজ থেকে পাওয়া তিন যুবকের চেহারা স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে না। প্রথমজনের মাথায় হেলমেট থাকায় চেহারা বোঝা যাচ্ছে না। তারপরও তাদের খোঁজা হচ্ছে।

বাবুল আক্তার দম্পতির ছেলে আক্তার মাহমুদ মাহির বলে, ‘ওই যে গুণ্ডা, আম্মুকে মারসে। ওরা হোন্ডা করে ওখানে দাঁড়ায়সিল। ওখানে তিনজন ছিল।’

‘তারপর একজন দৌড়ায়ে আইসা আম্মুকে নিচে ফালাই দিয়ে চাকু ঢুকাই দিসিল। আরেকজন গুলি মেরে মেরে ফেলসে। তারপর আম্মুর মুখের থেকে রক্ত বের হচ্ছিল।’

মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে প্রতিবেশী মধ্যবয়সী এক পুরুষ বলেন, ‘আমি নিচে নামসি, আমার বাচ্চা নিয়া। দেখতেসি উনার বাচ্চা কান্না করতেসে গেটে। তার আগে ইন্টারকমে আমাকে দারোয়ান ফোন দিল, স্যার বাবুল আক্তারকে (বাবুল আক্তারের স্ত্রী) মেরে ফেলসে।’ ‘তো, নিচে নেমে দেখতেসি, বাচ্চা কান্না করতেসে। দৌড়ে আসলাম, দেখি ডেড বডি।এতটুকু দেখলাম।’

প্রতিবেশী এক নারী বলেন, ‘আমরা দুজনই ছিলাম। বাচ্চা চলে গেসে। আমরা দেখি উনি (মাহমুদা খানম মিতু) একা পড়ে আছে। আর কিসু দেখি নাই। তখন ৬টা ৪০।’

মিতু যে বাসায় থাকতেন সে বাসার দারোয়ান বলেন, ‘লোকে দৌড়াদৌড়ি করতেসে। তা আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কী হইসে। কয় একটা মহিলারে মাইরা গেসেগা। তকন আমি দেহি বাবুল সাহেবের ছেলেডা (কান্নাজড়িত কণ্ঠে)।’

‘তকন আমি দিসি দৌড়। দৌড় দিয়া গিয়া কোল লইসি। কয় আমার আব্বুরে মাইরালাইসে। তকন ওইডারে বুহ (বুকে) রাইখা দেখলাম সাইডে দুইডা গুলি পইড়া রইসে। এর পরে ছেলেডারে লইয়া আইসি আমি।’

ওই দারোয়ান আরো বলেন, ‘এক লোহে (লোক) কইল যে, হোন্ডা দিয়া তিনডা লোক ওই দিকতে আইসা, কয় আগে নাকি চাকু মারসে। চাকু মাইরা তিনটা গুলি করসে।’



মন্তব্য চালু নেই