এসপির স্ত্রী হত্যাঃ সেই শাড়িটা জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন মিতুর বোন শায়লা

বড় বোন মাহমুদা খানম মিতুর জন্য প্রথমবারের মতো ঈদের শাড়ি কিনেছিলেন শায়লা। কিন্তু সেই শাড়িটা আর দেয়া হলো না মিতুকে। দুর্বৃত্তরা তার প্রাণ কেড়ে নিল।

গত রোববার সকালে নির্মমভাবে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে। সেই শাড়িটি জড়িয়ে ধরে বারবার চিৎকার করে কাঁদছিলেন ছোট বোন শায়লা।

সোমবার রাজধানীর খিলগাঁও মেরাদিয়া ভূইয়াপাড়ার বাসায় বসে শায়লা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার তো ভাই নেই। কিন্তু ভাই ও বোনের অভাবটা কখনো বুঝতে দেননি আপু।

এবারের ঈদে প্রথমবারের মতো উপহার হিসেবে আপুর জন্য শাড়ি ও দুই ভাগ্না-ভাগ্নির জন্য জামা কিনেছিলাম। অদৃষ্টের কি নির্মম পরিহাস; আমার এ বাসনা পূরণ হলো না। আর কোনোদিন হবার নয়। কাকে আমি শাড়িটা দেব।

এ সময় বারবার চোখ মুছছিলেন শায়লা। শায়লা টঙ্গি ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস-এর শেষবর্ষের ছাত্রী।

শায়লা বলেন, সবার প্রতি যত্নবান ছিলেন আপু। নিয়মিত পরিবারের সবার খোঁজ নিতেন। অনায়াসে যে কাউকে আপন করে নিতে পারতেন তিনি।

আব্বু ছিলেন পুলিশের ওসি। একবার সরকারি কোয়ার্টারের বাসায় থাকতে দুর্ঘটনা ঘটেছিল। বাসার ছাদের সিঁড়ি ছিল দুর্বল। আমি, আম্মু ও আপু সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এসময় সেটা ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হতেই আমি ও আম্মু দৌড় দেই। ফিরে তাকিয়ে দেখি আপু নিচে পড়ে গেছে।
আমরা হাসাহাসি করতে করতে আপুকে বললাম, তুমি আসলে না কেন আপু? আপু বললেন, আরে তোরা তো ছিলি। আমি ভাবলাম তোদের নিয়েই ফিরবো। তাই তোদের খুঁজছিলাম।

শায়লা বলেন, গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর আমার বিবাহ অনুষ্ঠানে আপু এসেছিলেন। কত আনন্দ করেছেন! আমরা জড়িয়ে ধরে ছবি তুলেছি। এরপর আর আমাদের সাক্ষাৎ হয়নি।

রমজানের মাঝামাঝি আপুর আসার কথা ছিল। কিন্তু আগেই চলে আসলো লাশ হয়ে। আপু আর কথা বলে না, হাসে না। আমাকে জড়িয়েও ধরে না। এভাবেই কথাগুলো বললেন শায়লা।

শায়লা বলেন, পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী হলেও গাড়ি ব্যবহার করতেন না তিনি। স্কুলে বাচ্চাদের নিয়ে যাওয়া-আসা করতেন রিকশা কিংবা বাসে। নিজে কখনো আগ বাড়িয়ে বলতেন না তিনি পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী।



মন্তব্য চালু নেই