এরশাদ আমলকেও হার মানানো ইউপি নির্বাচন

প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে রেকর্ড গড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ছয় ধাপে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে ২১২ ইউপিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীরা।

অন্যদিকে নির্বাচনী সহিংসতায় ১২১ জন নিহত হয়েছেন; এই সংখ্যা আগের যেকোন নির্বাচনের চেয়ে বেশি।

এদিকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার এ সংখ্যা ১৯৮৮ সালের নির্বাচনের সংখ্যার দ্বিগুণেরও বেশি। জাতীয় পার্টির শাসনামলের আলোচিত ওই ইউপি ভোটে ১০০ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিলেন। আর ওই নির্বাচনে নিহত হয়েছিলেন ৯০ জন। এই বছরের ইউপি নির্বাচনের আগে নিহতের ওই সংখ্যাকেই রেকর্ড হিসেবে ধরা হতো।

এসবের মধ্যে অনেক ইউপিতে বিএনপি প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা ও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ রয়েছে।

দলভিত্তিক তৃণমূলের এ নির্বাচনে অনিয়ম, সহিংসতা ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ব্যাপকতায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা, রাজনৈতিক দলসহ সব মহলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনকে (ইসি)।

ইসির জনসংযোগ শাখার কর্মকর্তারা জানান, প্রথম ধাপে ৫৪ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৩৪ জন, তৃতীয় ধাপে ২৯ জন, চতুর্থ ধাপে ৩৫ জন, পঞ্চম ধাপে ৪২ জন ও শেষ ধাপ ষষ্ঠ পর্বে ১৮ জন নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সব মিলিয়ে চেয়ারম্যান পদে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ২১২ জন।

বিনা ভোটের আগের রেকর্ড
এর আগে বাংলাদেশে ১৯৭৩, ১৯৭৭, ১৯৮৩, ১৯৮৮, ১৯৯২, ১৯৯৭, ২০০৩ এবং ২০১১ সালে মোট ৮টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রতি নবম ইউপির ভোট হল।

ইসির উপ-সচিব ও ঢাকা বিভাগীয় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোর্শেদ জানান, ১৯৮৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ১০০ ও ওয়ার্ড সদস্য পদে ৬০০ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

এরপর ১৯৯২ সালের ইউপি নির্বাচনে চারটিতে চেয়ারম্যান প্রার্থী ও সব সদস্যপ্রার্থীর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড রয়েছে।

১৯৯৭ সালের ইউপি ভোটে ৩৭ জন চেয়ারম্যান, ১০৯৬ জন সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য ও ৫৯২ সংরক্ষিত সদস্য বিনা ভোটে নির্বাচিত হন।

২০০৩ সালে ৩৪ জন চেয়ারম্যান, ৬৫১ জন সাধারণ সদস্য ও ৪৫২ জন সংরক্ষিত সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

আর ২০১১ সালের ইউপি নির্বাচনে বিনা ভোটে জয়ের তেমন কোনো রেকর্ড নেই বললেই চলে।

ইসির উপ-সচিব মিহির সারওয়ার মোর্শেদ জানান, এর অগে এতো মানুষ নিহত হয়নি, শুধু এরশাদের সময় মানুষ মারা গেছে। তবে এতো না। ওই নির্বাচনে নিহতের সংখ্যা ছিল ৯০ জন, দেড় হাজার কেন্দ্র ভোটের দিন বন্ধ করে দেয়া হয়। এরশাদের পতনের পর ১৯৯২ সালের ইউপি ভোটের পরিবেশ ছিল সবচেয়ে ভালো।

১৯৮৮ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিহতের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়ারও ঘোষণা দেয় তৎকালীন সরকার।

১৯৯৭ সালের ইউপি ভোট ঘিরে নিহত হন ৩১ জন ও আহত হন ৪৭৭ জন। ওই নির্বাচন কেন্দ্র করে ২৯০টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এরপর ২০০৩ সালে তিন মাসব্যাপী ইউপি ভোটে নির্বাচনপূর্ব ৪৫টি, নির্বাচন চলাকালীন ২০টি ও নির্বাচনোত্তর ৩৪টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা গণমাধ্যমে আসে।



মন্তব্য চালু নেই