এরপর কী ঘটবে সিরিয়ায়

আলেপ্পো দখলের লড়াই শেষ হয়ে যেতে পারে। তবে সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে। এমনকি এটা আরও অরাজক ও রক্তাক্ত হতে পারে। বিদ্রোহীদের ঘাঁটি পূর্ব আলেপ্পো দখল প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সরকারের জন্য একটি বড় প্রপাগান্ডা বিজয় হতে পারে। তারাই এখন কার্যত দেশের প্রধান জনবহুল শহরগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে। তবে গৃহযুদ্ধ শুরুর আগে দেশটির সবচেয়ে জনবহুল শহর ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র দখল সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় পুরস্কার।

আলেপ্পো দখল শুধু আসাদের জন্য বিজয় নয়, এটি তার ইরানি ও রুশ সমর্থকদের জন্যও শুভ সংবাদ। আলেপ্পো হয়তো মস্কোর কৌশলগত দাবার বোর্ডে বড় বিষয় নয়। তবে এখানে বিদ্রোহীদের পরাজয় আসাদের ভাগ্য খুলে দেয়ার ক্ষেত্রে অসাধারণ ঘটনা।
আসাদকে রক্ষায় রাশিয়ার হস্তক্ষেপের আগে তার সামরিক শক্তির অবস্থা ছিল সংকটাপন্ন। বিদেশী শক্তিগুলো তাদের নিজেদের কৌশলগত অভিলাস পূরণে আসাদ সরকারকে সমর্থন দিয়েছে। এ অভিলাসই সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

আসাদ সরকার যদি আলেপ্পো দখল বজায় রাখতে পারে তবে সিরিয়ার অত্যাবশ্যকীয় পশ্চিমাংশ, এর প্রধান শহরগুলো এবং ভূমধ্যসাগরের উপকূলও তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। তবে আসাদের বাহিনীর এ সাফল্যের মধ্যেই পালমিরা আবার ইসলামিক স্টেট দখল করে নিয়েছে। ফলে আসাদ বহু এলাকা দখল করতে পারলেও সেখানে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। আসাদের নিয়মিত সেনাবাহিনীর বড় অংশই ভেঙে বহু মিলিশিয়া বাহিনী গড়ে উঠেছে। অনেক বিদ্রোহী যোদ্ধা পালিয়ে ইদলিব প্রদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ফলে পরবর্তী রণক্ষেত্র হতে পারে এ অঞ্চলটি।

মস্কো কী চায়, তাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তারা কি এ অঞ্চলে অনাদিকাল যুদ্ধ চাইবে? নাকি যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রশাসনের সঙ্গে দফারফা করে আলেপ্পো দখলের পরই যুদ্ধের সমাপ্তি চাইবে? ডোনাল্ড ট্রাম্প যাদের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা পদে বসিয়েছেন তারা ইরানবিরোধী। আবার ট্রাম্প ইরানের মিত্র রাশিয়ার দিকে ঝুঁকছেন।

আলেপ্পো পতনের ফলে ওয়াশিংটনের বিকল্প সীমিত হয়ে পড়েছে। সিরিয়ার মধ্যপন্থী বিরোধীদের সহায়তার জন্য ওবামা প্রশাসন যে কৌশলগত প্রকল্প নিয়েছিল সেই কফিনে শেষ পেরেক মারা হয়ে গেছে। এখন সরকারবিরোধীরা সরকারি বাহিনীর আরও বড় চাপের মুখে থাকবে। আসাদবিরোধী শক্তির জন্য এটা কঠিন সময়। তারা যুদ্ধে হেরে গেছেন, এটা এখনও বলা যায় না। তবে তারা জিততেও পারেননি। আলেপ্পার পতনের ফলে সিরিয়ার দেশী ও বিদেশী খেলোয়াড়রা তাদের কৌশলে ফের পরিবর্তন আনবেন। বিবিসি।



মন্তব্য চালু নেই