এমপিদের ফ্ল্যাটে বহিরাগতরা, কতটা নিরাপদ সংসদ?

সাম্প্রতিক জঙ্গি হমলার পর সংসদের নিরাপত্তায় তেমন ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে না। এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা- কর্মচারীরা। সংসদ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, সংসদ ভবনসংলগ্ন ন্যামভবন ও নাখালপাড়ার সংসদ সদস্য ভবনে ২৮২ সাংসদের নামে ফ্ল্যাট বরাদ্দ রয়েছে। এসব সাংসদের মধ্যে ৬২ জন বরাদ্দকৃত ফ্ল্যাটে থাকেন না। বরাদ্দ প্রাপ্তির পর এসব ফ্ল্যাটে ব্যক্তিগত সহকারী, পরিবারের লোকজন এবং আত্মীয়স্বজন বসবাস করছেন। আবার কেউ ভাড়া দিয়েছেন কাছের অত্মীদের। ফলে বহিরাগতদের অবাধ যাতায়াত রয়েছে। খবর বিডি২৪লাইভের।

এতে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছে ন্যাম ভবনসহ পুরো সংসদ এলাকা। নিরাপত্তার শঙ্কা প্রকাশ করছেন বসবাসরত অনেক সংসদ সদস্য। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সংসদ কমিটির করা তদন্তে ওই ৬২ সাংসদের বিরুদ্ধে শোকজ নোটিশ প্রস্তুত করা হয়েছে। শিগগিরই এটি দেওয়া হবে। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হলে তাদের ফ্ল্যাট বাতিলের সিদ্ধান্তও আসতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, ৬২ সংসদ সদস্য ফ্ল্যাট বরাদ্দ নিয়ে একদিনও থাকেননি। হাতেগোনা কয়েকজন অবশ্য মাঝে মধ্যে এসে ফ্ল্যাটে ঢুঁ মেরে যান। এসব ফ্ল্যাটে থাকছেন সংসদ সদস্যদের ব্যক্তিগত সহকারী, গানম্যানসহ স্বজন ও নেতাকর্মীরা।

সংসদ কমিটির তদন্তে এমন ৬২ সংসদ সদস্যের নাম উঠে এসেছে। শিগগিরই তাদের একটি নোটিশ দিতে যাচ্ছে সংসদীয় কমিটি।

এতে বলা হয়, সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, আপনার নামে বরাদ্দকৃত ফ্ল্যাটে আপনি নিজে বসবাস করেন না এবং আপনার ব্যক্তিগত সহকারী/লোকজন বসবাস করছে, যা বরাদ্দপত্রে উল্লিখিত শর্তের পরিপন্থি। এছাড়া নিরাপত্তার দৃষ্টিতে বিষয়টি হুমকিস্বরূপ বলে প্রতীয়মান হয়।

সংসদ সদস্যদের নিরাপত্তা বিধানে বর্তমান সরকার খুবই আন্তরিক এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। কিন্তু জাতীয় পর্যায়ে বিপথগামী কিছু দুষ্কৃতকারী জঙ্গি সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সংসদ-সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা ও এ প্রেক্ষাপটে সংসদ সদস্য ভবনগুলোর নিরাপত্তা বিধান একান্ত অপরিহার্য, যা ইতোপূর্বে বিভিন্ন সভা, পত্রপত্রিকার মাধ্যমে আলোচিত হয়েছে।

এ ব্যাপারে অনেকবার সতর্ক করে পত্র দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় সংসদ সদস্য ভবনগুলোয় বসবাসরত অন্য সংসদ-সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে আপনার নামে বরাদ্দকৃত ফ্ল্যাটে আপনাকে বসবাস এবং আপনার ব্যক্তিগত সহকারী সরিয়ে নেওয়ার জন্য আপনার আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি। অন্যথায় আপনার নামে বরাদ্দকৃত ফ্ল্যাটের বরাদ্দ বাতিল করা হবে।

মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে সংসদ সদস্য ভবন-১-এ ফ্ল্যাট বরাদ্দের পর বসবাস করছেন না নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের এমপি নজরুল ইসলাম। বরাদ্দ ১নং ভবনের ৪০১ নম্বর ফ্ল্যাটে থাকছেন ব্যক্তিগত সহকারী; শেরপুর-৩ একেএম ফজলুল হক, ৪০২ নম্বর ফ্ল্যাট, থাকেন ব্যক্তিগত সহকারী; হবিগঞ্জ-৪ মো. মাহাবুব আলী, ৪০৩ নম্বর ফ্ল্যাটে থাকেন তার ভাই; ফরিদপুর-১ মো. আবদুর রহমান, ৪০৪ নম্বর ফ্ল্যাটে থাকেন তার ভাই; ব্যক্তিগত সহকারীরা ব্যবহার করছেন ঝিনাইদহ-৪-এর আনোয়ারুল আজিম আনারের ৫০২ নম্বর ফ্ল্যাট, মো. ইউনুস আলী সরকারের (গাইবান্ধা-৩) ৬০৪ নম্বর, কাজী কেরামত আলীর (রাজবাড়ী-১) ৭০২ নম্বর, মো. আলী আজগরের (চুয়াডাঙ্গা-২) ৭০৩ নম্বর, ইয়াহ ইয়া চৌধুরীর (সিলেট-২) ৮০১ নম্বর, তাহজীব আলম ছিদ্দিকীর (ঝিনাইদহ-২) ৮০২ নম্বর, সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর (চট্টগ্রাম-২) ৮০৪ নম্বর, আব্দুল ওয়াদুদের (রাজশাহী-৫) ৯০২ নম্বর ফ্ল্যাটটি। মো. আসলামুল হকের (ঢাকা-১৪) ৯০৪ নম্বর ফ্ল্যাটটি ব্যবহার করছেন তার ভাই।

সংসদ সদস্য ভবন-২-এ ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের (নেত্রকোনা-৫) ১০২ নম্বর, দিদারুল আলমের (চট্টগ্রাম-৪) ১০৪ নম্বর, শেখ আফিল উদ্দিনের (যশোর-১) ৩০১ নম্বর, মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের (সুনামগঞ্জ-১) ৩০২ নম্বর, লুৎফা তাহেরের (মহিলা আসন ৪০) ৬০১ নম্বর, আবু সালেহ মোহাম্মদ সাঈদ দুলালের (লালমনিরহাট-৩) ৭০১ নম্বর, আমির হোসেনের (কুমিল্লা-২) ৭০৩ নম্বর ব্যক্তিগত সহকারীরা ব্যবহার করছেন।

সংসদ সদস্য ভবন-৩-এর দুটি ফ্ল্যাট ব্যবহার করেন বহিরাগতরা। এগুলো হলো মেরিনা রহমানের (মহিলা আসন ৪৬) ৬০৪ নম্বর ও লায়লা আরজুমান বানুর (মহিলা আসন-৮) ৮০৩ নম্বর ফ্ল্যাট।

সংসদ সদস্য ভবন-৪-এর ১০১ নম্বর ফ্ল্যাট রাষ্ট্রপতিপুত্র রেজওয়ান আহমেদ তৌফিকের (কিশোরগঞ্জ-৪) নামে। তিনি ফ্ল্যাটে থাকেন না। তবে মাঝেমধ্যে আসেন। মো. ছায়েদুল হকের (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১) ১০২ নম্বর, প্রমোদ মানকিনের (ময়মনসিংহ-১) ৩০১ নম্বর এবং নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের (মাদারীপুর-২) ৪০৪ নম্বর ফ্ল্যাট খালিই পড়ে থাকে। মো. আবদুল্লাহর (লক্ষ্মীপুর-৪) ৪০৩ নম্বর ফ্ল্যাট ব্যবহার করেন তার ব্যক্তিগত লোকজন।

সংসদ সদস্য ভবন-৫-এর আমানুর রহমান খানের (টাঙ্গাইল-৩) ১০১ নম্বর ফ্ল্যাট খালিই পড়ে আছে। মো. একাব্বর হোসেনের (টাঙ্গাইল-৭) ২০১ নম্বর ও ওমর ফারুক চৌধুরীর (রাজশাহী-১) ২০৪ নম্বর ফ্ল্যাটটি ব্যবহার করছেন তাদের ব্যক্তিগত সহকারী ও গানম্যান।

সংসদ সদস্য ভবন-৬-এর ৯০৩ নম্বর ফ্ল্যাট অবৈধভাবে ব্যবহার করছেন বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রীর ভাই। ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের (ঢাকা-১০) নামে বরাদ্দ এটি। এ ছাড়া মৃণাল কান্তি দাসের (মুন্সীগঞ্জ-৩) ২০১ নম্বর, আলী আজমের (ভোলা-২) ২০৩ নম্বর, নুরুন্নবী চৌধুরী (ভোলা-৩) ৫০৩ নম্বর, ফখরুল ইমামের (ময়মনসিংহ-৮) ৪০৪ নম্বর এবং আফসারুল আমীনের (চট্টগ্রাম-১০) ৬০৩ নম্বর ফ্ল্যাট ব্যবহার করছেন তাদের ব্যক্তিগত সহকারী ও এলাকার লোকজন।

নাখালপাড়ার সংসদ সদস্যদের ১নং ভবনটির ৬টি ফ্ল্যাট ব্যবহার করছেন এমপির ব্যক্তিগত সহকারীরা। এর মধ্যে সিরাজুল ইসলাম মোল্লার (নরসিংদী-৩) ২০৪ নম্বর, মাহজাবীন মোর্শেদের (মহিলা আসন-৪৫) ৪০৩ নম্বর, সালমা ইসলামের (ঢাকা-১) ৪০৪ নম্বর, হাবিবে মিল্লাতের (সিরাজগঞ্জ-২) ৫০১ নম্বর, মমতাজ বেগমের (মানিকগঞ্জ-২) ৫০২ নম্বর এবং টিপু মুন্সীর (রংপুর-৪) ৩০২ নম্বর ফ্ল্যাট রয়েছে। ২নং ভবনে আব্দুল মান্নানের (বগুড়া-১) ৫০১ নম্বর ফ্ল্যাট ব্যবহার করছেন তার ভাই। মজিবুর রহমান নিক্সনের (ফরিদপুর-৪) ২০২ নম্বর, নাহিম রাজ্জাকের (শরীয়তপুর-৩) ৪০২ নম্বর, মোর্শেদ আলমের (নোয়াখালী-২) ৫০৩ নম্বর, তানভীর ইমামের (সিরাজগঞ্জ-৪) ৫০২ নম্বর ও ড. হাছান মাহমুদের (চট্টগ্রাম-৭) ১০২ নম্বর ফ্ল্যাট তাদের ব্যক্তিগত সহকারী, ইফতিখার উদ্দিন তালুকদারের (নেত্রকোনো-৩) ৩০৪ নম্বর ফ্ল্যাটটি তার ছোটভাই এবং কামাল আহমেদ মজুমদারের (ঢাকা-১৫) ৪০১ নম্বর ফ্ল্যাটটি ব্যবহার করছেন তার ঝিয়ারী জামাই। ৩নং ভবনে ইমরান আহমেদের (সিলেট-৪) ১০৩ নম্বর, ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লার (ঢাকা-১৬) ২০৩ নম্বর, তাজুল ইসলাম চৌধুরীর (কুমিল্লা-৯) ২০৪ নম্বর, সামসুল হক ভূঁইয়ার ৪০১ নম্বর ফ্ল্যাট ব্যবহার করছেন তাদের আত্মীয়স্বজন।

৪নং ভবনে আবু সাঈদ মাহমুদ আল স্বপনের (জয়পুরহাট-২) ১০১ নম্বর, তাজুল ইসলাম চৌধুরীর (কুড়িগ্রাম-২) ২০৩ নম্বর, কাজী ফিরোজ রশীদের (ঢাকা-৬) ২০৪ নম্বর, নুরুল ইসলাম তালুকদারের (বগুড়া-৩) ৩০২ নম্বর, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর (চট্টগ্রাম-১৩) ৩০৩ নম্বর, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের (চাঁদপুর-১) ৫০৪ নম্বর এবং ৭নং ভবনের আমিনা আহমেদের (মহিলা আসন-৩৪) ৩০১ নম্বর ফ্ল্যাট তাদের ব্যক্তিগত সহকারীরা ব্যবহার করছেন।



মন্তব্য চালু নেই