এবার হরতাল সালাহ উদ্দিন ইস্যুতে

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে টানা দুই মাসের বেশি সময় ধরে অবরোধ ও পরে হরতাল চালিয়ে আসা ২০ দলীয় জোট তাদের সর্বশেষ ৭২ ঘণ্টার হরতাল আরো ৪৮ ঘণ্টা বাড়িয়েছে। ফলে শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত চলবে হরতাল।

৬ জানুয়ারি থেকে অবরোধ শুরুর পর ওই মাসের শেষ দিক থেকে শুক্র ও শনিবার বাদে সপ্তাহের প্রতিটি দিনই হরতাল দিয়েছে ২০ দলীয় জোট। এ কারণ চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। প্রায় ১৫ লাখ শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে হরতাল প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হলেও তাতে সাড়া দেয়নি বিএনপি।

মঙ্গলবার বিকেলে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে হরতাল বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।

বিবৃতিতে বুলু বলেছেন, সালাহ উদ্দিনকে তার পরিবারের কাছে ফেরত দেয়ার দাবিতে আমরা ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে আগামীকাল বুধবার ভোর ৬টা থেকে শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত দেশব্যাপী অবরোধের পাশাপাশি ৪৮ ঘণ্টার হরতাল আহ্বান করছি।

একইসঙ্গে বৃহস্পতিবার সারা দেশে ২০ দলীয় জোটের উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল হবে বলেও জানানো হয়েছে বিবৃতিতে। এছাড়া শুক্রবার সারা দেশে সালাহ উদ্দিনের জন্য সকল মসজিদে দোয়া এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রার্থনা করার জন্যও অনুরোধ জানিয়েছেন বুলু।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, বিএনপির অন্যতম যুগ্ম-মহাসচিব, সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমেদকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার পর ৭ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো পর্যন্ত তাকে মুক্তি দেয়া কিংবা আদালতে হাজির করা হয়নি। অতি সম্প্রতি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকনসহ দেশব্যাপী আরো অনেক নেতা-কর্মীর ক্ষেত্রেও একই ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সালাহ উদ্দিনকে গ্রেপ্তারের কথা অস্বীকার করে সরকারের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে সাজানো গল্প ফাঁদা হয়েছে এবং শীর্ষ পর্যায় থেকে উৎকট ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করা হয়েছে। এতে তার পরিবারের এবং আমাদের উৎকণ্ঠা তীব্র হচ্ছে। সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে উপস্থাপন করার কথা আমরা বলেছি। কিন্তু তার মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাকে উধাও করে ফেলার মতো ধৃষ্টতাকে কোনো ক্রমেই মেনে নেয়া যায় না। এটা সকলের জন্য অনিরাপদ এক অসভ্য পরিবেশেই কেবল সম্ভব।

গত ১১ মার্চ রাত পৌনে ১১টার দিকে সালাহ উদ্দিনের পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সালাহ উদ্দিন আহমেদকে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি দল আটক করে নিয়ে গেছে। মঙ্গলবার রাত ১০টায় রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে তাকে আটক করা হয় বলে তারা দাবি করেন। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রথম থেকেই বলে আসছে, সালাহ উদ্দিনকে তারা আটক করেনি।

এরপরদিন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সালাহ উদ্দিনকে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট করেন হাসিনা আহমেদ। ওই রিটের শুনানি শেষে ১৫ মার্চের মধ্যে সালাহ উদ্দিনকে খুঁজে বের করে আদালতে কেন হাজির করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।

১৫ মার্চ পুলিশের ৫টি শাখার পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয় সালাহ উদ্দিনকে এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরপর সোমবার এ বিষয়ে শুনানি ৮ এপ্রিল পর্যন্ত মুলতবি করেন আদালত।

সালাহ উদ্দিন প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ১৪ মার্চ পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আন্ডার গ্রাউন্ডে থেকে বিবৃতি দিচ্ছিলেন, সবাই জানে তিনি ওখান (গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়) থেকেই বিবৃতি দিয়েছেন। আমরা সালাহ উদ্দিনকে খুঁজছি। পুলিশ তাকে পেলেই গ্রেপ্তার করবে।’



মন্তব্য চালু নেই