এবার সুপ্রিম কোর্টের নামে চলছে দুইটি ভুয়া ফেসবুক পেইজ

বাংলাদেশ অব সুপ্রিম কোর্ট নামে দুইটি ভুয়া ফেসবুক পেজ চালানো হচ্ছে। একটি পেজে লেখা রয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ, সুপ্রিম কোর্ট ল্যান্ডমার্ক অ্যান্ড হিসটরিক্যাল প্যালেস। অপরটি পেজে শুধু সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ লেখা রয়েছে। দুইটি পেজেই মোবাইল নম্বর দেয়া রয়েছে। ফেসবুকে নকল পেজের ভিড়ে আসল পেজ খুঁজে পাওয়াই কঠিন হয়ে গেছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নামেও ভুয়া ফেসবুক পেজ চালানো হয়। ভুয়া পেজ আছে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতৃত্ব, গণমান্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামেও। এসব পেজ থেকে নানা সময় নানা বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হয়। নানা সময় অস্থিরতাও তৈরি হয়েছে এসব পেজের কারণে।খবর ঢাকাটাইমসের।

আসল ও নকল পেজ খুঁজে পাওয়া অনেক ক্ষেত্রেই দুষ্কর হয়ে উঠে। সুপ্রিম কোর্টের নামে দুইটি পেজেও এই রকম। এতে আদালতের বিভিন্ন ছবি, লোগো, মামলা, আইনের বিষয়ে বিভিন্ন পোস্ট দেয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইট দেয়া আছে পেজ দুইটিতে।

আদালত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবৈধ এই পেজ দুটির মাধ্যমে কোনো ভুল তথ্য যেতে পারে জনগণের কাছে। এগুলো পেজ দ্রুত বন্ধ করার দাবি করেছেন আইনজীবীরা।

সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সাব্বির ফয়েজ বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের অফিসিয়াল কোনো অয়েবসাইট নেই। সুপ্রিম কোর্টের নামে কে বা করা ফেসবুক চালান সেই বিষয়েও আমার জানা নেই।’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের নাম ব্যবহার করে ফেসবুক পেজ চালানো মোটেও উচিৎ নয়। বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রারকে দেখা উচিৎ।’

‘সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ, সুপ্রিম কোর্ট ল্যান্ডমার্ক অ্যান্ড হিসটরিক্যাল প্যালেস’ লেখা পেজে গিয়ে দেখা যায়, পেজটিতে ১০ হাজার ৯৭৬ জন লাইক করেছেন। পেজটি ভিজিট করেছেন ২৮ হাজার ৯১৭ জন।

শুধু সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ লেখা পেজে গিয়ে দেখা যায়, ছয় হাজার ২২০ জন পেজটি লাইক দিয়েছেন। পেজটিতে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেয়া ইতিহাস দেয়া হয়েছে। ১৯৭১ সালে শুরু সেটিও পেজটিতে দেয়া হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ, সুপ্রিম কোর্ট ল্যান্ডমার্ক অ্যান্ড হিসটরিক্যাল প্যালেস লেখা পেইজে দেয়া মোবাইল নম্বরে (০১৭১৮-০৫৯৩৩৭) যোগাযোগ করা হলে তার পরিচয়ের বিষয়ে জানান, তার নাম মহিউদ্দিন, পেশায় তিনি আইনজীবী। তিনি জানান, হাইকোর্টের ৩১৪ নম্বর কক্ষে তিনি বসেন। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

এই ফেসবুক পেজ চালানোর বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে মহিউদ্দিন বলেন, তিনি এই পেজটি ২০০৭ সাল থেকে চালিয়ে আসছেন। হাইকোর্টে অ্যানরোলম্যান্ট হওয়ার পর থেকেই তিনি এই পেজটি চালাচ্ছেন। তবে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে কোনো অনুমতি নেয়া নেই।

শুধু সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ নামে ফেসবুক পেজে দেয়া মোবাইল নম্বরে (০১৮১৯-০১০৬১৩) যোগাযোগ করে সুপ্রিম কোর্টের নামে কোনো ফেসবুক পরিচালনা করেন কি না জানতে চাইলে প্রথমে তিনি অস্বীকার করেন।পরে পেজে নম্বরটি দেয়া আছে উল্লেখ করা হলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেন। ফেসবুক পেজ চালানোর বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে অনুমতি নেওয়া আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জ্বি না।’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গোলাম সরওয়ার পায়েল বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট হচ্ছে রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান অঙ্গ। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির নাম ব্যবহার করা গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ। এই পেজে কোনো তথ্য প্রকাশের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে।’

এই আইনজীবী বলেন, ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন- ২০০৬ এর ৫৭ ধারা অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের নাম ব্যবহার করে ফেসবুকে পেজ ব্যবহার করার সঙ্গে জড়িতদের ছয় বছরের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে। এছাড়া প্যানাল কোর্ডের ৪২০ ধারা অনুযায়ী প্রতারণার জন্য সাত বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।’



মন্তব্য চালু নেই