এবার সামিউলের পরিবারের পাশে অর্থমন্ত্রী

চোর সন্দেহে অমানবিক নির্যাতনে নিহত শিশু সামিউল আলম রাজনের পরিবারের পাশে দাঁড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

অর্থমন্ত্রীর একান্ত ব্যক্তিগত সহকারী তানভির বাশার এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘স্যার শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর সামিউল আলম রাজনের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন। তিনি রাজনের বাবা-মাকে সমবেদনা জানাবেন।’

এক্ষেত্রে নিহত সামিউলের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে আর্থিক সহযোগিতার বিষয়টিও অর্থমন্ত্রীর বিবেচনায় রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তানভির বাশার।

সিলেটের আলোচিত সামিউল হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সারা দেশের মানুষ ফুঁসে উঠেছে।

গত বুধবার ফেসবুকে সামিউলের হত্যাকারী দানবদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছেন প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়।

বুধবার রাত সাড়ে ৮টার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ দাবি জানান তিনি। পাশাপাশি সামিউলের হত্যাকারী আসামিদের ধরতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও বলেন তিনি।

তার আগে গত বুধবার সামিউলের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা-মাকে সান্ত্বনা জানিয়েছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। এ সময় তিনি সামিউলের বাবা আজিজুর রহমানের হাতে এক লাখ টাকা অনুদান তুলে দেন।

প্রতিমন্ত্রী চুমকি সামিউলের ভাই সাজনের লেখাপড়ার খরচ বাবদ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাসে দুই হাজার টাকা করে দেওয়ার কথাও জানান। পরে প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সামিউল হত্যার বিচার দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হবে। এ ধরনের একটি বর্বরোচিত ঘটনায় সবাই হতবাক। সামিউল হত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।’ শিশু নির্যাতন ও হত্যার বিচারে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা চলছে বলেও জানান তিনি।

অন্যদিকে সামিউলের বাবা-মাকে সান্ত্বনা দিতে তার বাড়িতে আরো ছুটে যান সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়া। গত বুধবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে সামিউলের বাড়িতে তার বাবা-মাকে সান্ত্বনা জানিয়ে তার মাকে বলেন, ‘আজ থেকে আপনি আমার আপন বোন। আমি মনে করব, আমার আরেকটা বোন আছে। আর সেটা হচ্ছেন আপনি।’

সিলেটের কুমারগাঁওয়ে চোর অপবাদে শিশু সামিউলকে পিটিয়ে হত্যার ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার পর সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে নির্যাতনের সেই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করেন নির্যাতনকারীদেরই একজন, যা ওই ভিডিওর কথোপকথনে স্পষ্ট বুঝা যায়। নিষ্ঠুর এই বর্বরতার চিত্র দেখে সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে এবং দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি ওঠে।

গত ৮ জুলাই সকালে সামিউলকে হত্যার পর লাশ গুম করার চেষ্টা করা হয়। নিহত সামিউল সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের বাদেআলী গ্রামের মাইক্রোবাস চালক শেখ আজিজুর রহমানের ছেলে। স্থানীয় অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করা সামিউল সবজি বিক্রি করত।

কুমারগাঁও এলাকার একটি গ্যারেজ থেকে ভ্যান চুরির অভিযোগে গত ৮ জুলাই সামিউলকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর একটি মাইক্রোবাসে তুলে রাজনের লাশ নিয়ে যাওয়ার সময় মুহিত আলম (২২) নামের একজনকে ধরে পুলিশে দেন স্থানীয়রা। ওই ঘটনায় জালালাবাদ থানা পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। মামলার আসামিরা হলেন- মুহিত আলম (২২), তার ভাই কামরুল ইসলাম (২৪), তাদের সহযোগী আলী হায়দার ওরফে আলী (৩৪) ও স্থানীয় চৌকিদার ময়না মিয়া ওরফে বড় ময়না (৪৫)। ইতিমধ্যে সব আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই