এবার বিএনপির কাউন্সিলে ইউপি নির্বাচনের বাগড়া!

আবারও ব্যাঘাত ঘটতে যাচ্ছে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠান পরিকল্পনায়। এবার কাউন্সিলে বাগড়া দিচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন।

নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনা আছে, আগামী মার্চ থেকে ধাপে ধাপে দেশের সব ইউপির নির্বাচন সম্পন্ন করবে তারা।

এদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি পরিকল্পনা করছে মার্চ-এপ্রিলে দলের জাতীয় কাউন্সিল করার। এর আগে কাউন্সিল করার উদ্দেশ্যে দলের সব সাংগঠনিক জেলার কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছিল। কিন্তু মাঝখানে উপজেলা নির্বাচনের কারণে সেটি থেমে যায়।

আবার যখন কমিটি পুনর্গঠনের কাজে নামতে যাচ্ছে দলটি, তখন সামনে চলে আসছে ইউপি নির্বাচন, যেটি দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হবে।

কাউন্সিল অনুষ্ঠানের এই পরিকল্পনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হওয়ার পেছনে সরকারের ‘ষড়যন্ত্র’ দেখছে হামলা-মামলায় বিপর্যস্ত বিএনপি।

দলটির দীর্ঘদিনের অভিযোগ, যখনই তারা দল গোছানো বা আন্দোলনে নামার পরিকল্পনায় এগিয়ে যেতে থাকে, তখনই সরকার পাল্টা ‘গেম’ খেলে। দলে নতুন নেতৃত্ব আনার চিন্তা থেকে দলে যখন সপ্তম কাউন্সিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন সরকার সামনে নিয়ে আসছে ইউপি নির্বাচন। বিএনপির অভিযোগ, কাউন্সিলকে বাধাগ্রস্ত করতে সরকারের পরিকল্পনায় নির্বাচন কমিশন আগামী মার্চ থেকে কয়েক ধাপে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছে।

তবে নির্বাচন কমিশন বলছে, আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে তারা আগামী মার্চ থেকে ইউপি নির্বাচন শুরু করবে। সম্প্রতি গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিব সিরাজুল ইসলাম।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ মনে করেন, সরকার চায় না বিএনপি কাউন্সিল করে সাংগঠনিকভাবে শক্তি অর্জন করুক। তিনি বলেন, “এ কারণে যখনই আমরা কাউন্সিল করার পরিকল্পনা করি তখনই তারা নতুন নতুন ইস্যূ সামনে নিয়ে আসে। এবারও আমরা কাউন্সিল করার পরিকল্পনা করছি, আর সরকার নির্বাচন কমিশনকে মার্চ থেকে ইউপি নির্বাচন শুরুর নির্দেশনা দিচ্ছেন।”

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের মার্চে শুরু হয়ে জুনের মধ্যে ৪ হাজার ৫০১টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯-এ বলা আছে, পরিষদ গঠনের জন্য কোনো সাধারণ নির্বাচন ওই পরিষদের জন্য অনুষ্ঠিত পূর্ববর্তী সাধারণ নির্বাচনের তারিখ থেকে ৫ বছর পূর্ণ হওয়ার ১৮০ দিনের (৬ মাস আগে) মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। সে ক্ষেত্রে এসব ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন করতে হলে মার্চ থেকে জুন মাসের মধ্যে চার হাজারের মতো ইউনিয়নে নির্বাচন করার চিন্তা করছে ইসি।

নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেছেন, সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন পরিষদের ভোট ধাপে ধাপে করা হবে। মার্চ মাসের শেষ দিকে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিয়ন পরিষদের ভোট।

শাহনেওয়াজ জানান, মার্চের শেষ দিকে ইউপি নির্বাচন করতে হবে। পরে ধাপে ধাপে হবে। এ লক্ষ্যে যথাসময়ে তফসিল (ফেব্রুয়ারিতে) দিতে হবে। নির্বাচনী বিধি ও আচরণবিধি চূড়ান্ত করে তফসিলের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এবারই প্রথমবারের মতো পৌরসভার আদলে দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। চেয়ারম্যান পদে রাজনৈতিক দলের প্রতীকে এবং সদস্য পদে স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন প্রার্থীরা।

ফলে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য ইউপি নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন থেকে প্রচারণা্- সব দিকে ব্যস্ত থাকতে হবে দলগুলোকে। ফলে এ সময় দলীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানো সম্ভব হবে না।

বিএনপি যে মার্চ-এপ্রিলে জাতীয় কাউন্সিল করার চিন্তা করছে, তাতে ইউপি নির্বাচন বাগড়া দিচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। অথচ কাউন্সিল করা দলটির সাংগঠনিক সচলতা ফিরিয়ে আনার জন্য জরুরি।

২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর সবশেষ কাউন্সিল করার পর আর কাউন্সিলের চিন্তা করে কুলিয়ে উঠতে পারেনি দলটি। ওই কাউন্সিলের পর বিভিন্ন কমিটিতে নির্বাচিত অনেকে এখন নিষ্ক্রিয়। কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছেন। দলের শূন্য মহাসচিবের পদে দীর্ঘ দিন ধরে ভারপ্রাপ্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এ ছাড়া দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় কাউন্সিলে তিন বছরের জন্য দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটি নির্বাচিত হবে। সে হিসাবে গত ছয় বছরে দুটি কাউন্সিল হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হয়নি একটিও।

অবশ্য ২০১২ সালে কাউন্সিল হবে বলে গুঞ্জন উঠেছিল। পরে আবার ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ওই বছরের মার্চে কাউন্সিল অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি।

এই পরিস্থিতিতে এবার যেভা্বে হোক কমিটিগুলো পুনর্গঠনের জন্য উদ্যোগী হচ্ছে বিএনপি। শোনা যাচ্ছে, দলের জন্য নিবেদিত, আস্থা রাখা যায়, আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন, নেতাকর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্য এমন নেতাদের কাউন্সিলের মাধ্যমে সামনের সারিতে আনা হবে। নেতৃত্ব হবে নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে।

কিন্তু সরকারবিরোধী আন্দোলনে ‘মার খাওয়া’ দলটির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নানা কারণে। বারবার উদ্যোগ নিয়েও কাউন্সিল করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য সরকারকে দায়ী করছেন দলটির শীর্ষ নেতাদের। তাদের অভিযোগ, কাউন্সিলের পরিকল্পনা নিলেই শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

আ স ম হান্নান শাহ বলেন, “দলকে গতিশীল করতে কাউন্সিলের চিন্তা অনেক আগে থাকলেও নানা সমস্যার কারণে করা হয়নি। আগামী মার্চ-এপ্রিলের দিকে দলের জাতীয় কাউন্সিল করার কথা চিন্তা-ভাবনা চলছে। কিন্তু সরকার এখানেও ষড়যন্ত্র করছে। কারণ মার্চ থেকে ধাপে ধাপে ইউপি নির্বাচন করবে বলে ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।”

তাহলে কি আবার কাউন্সিল পিছিয়ে যেতে পারে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “এমনটা হলে না পিছিয়ে তো উপায় থাকবে না।”

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান বলেন, “অতীতের মতো এবারও বাধার সৃষ্টি করতে কাউন্সিল করার পরিকল্পনার সময় ইউপি নির্বাচন দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। শেষ পর‌্যন্ত সিদ্ধান্তে অটল থাকলে আমাদের হয়তো নতুন করে ভাবতে হতে পারে।”-ঢাকাটাইমস



মন্তব্য চালু নেই