এবার তিস্তা চুক্তি নিয়ে প্রণবের উদ্যোগ

ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি তিস্তা চুক্তি নিয়ে উদ্যোগ নিতে যাচ্ছেন এবং আগামী ৭ থেকে ১০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশটি সফরকালে এ চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশের যে দীর্ঘ প্রতীক্ষা রয়েছে তার অবসান হতে পারে বলে আশা করছেন দু’দেশের কূটনৈতিক মহল।

ঢাকা ও দিল্লির বিভিন্ন কূটনৈতিক সূত্র বলছে এ বছরের শেষে প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি তার রাষ্ট্রপতির মেয়াদকাল শেষ করতে যাচ্ছেন। তার আগেই তিনি তিস্তা চুক্তি নিয়ে দুটি দেশের মধ্যে মতপার্থক্য কমিয়ে আনতে চান। কূটনৈতিকদের একটি সূত্র বলছে, শুধু প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা নয়, বরং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে সহায়তা করছেন। এ ধরনের উদ্যোগের উদ্দেশ্যই হচ্ছে বাংলাদেশের সঙ্গে পানির হিস্যা নিয়ে সমঝোতায় এবং তিস্তা চুক্তি নিয়ে একটি উপসংহারে পৌঁছানো। উদ্যোগের অংশ হিসেবে প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন ভারতের ৫ রাজ্যে যথা আসাম, ত্রিপুরা, মিজোরাম, মেঘালয় ও পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রীদের রাষ্ট্রপতি ভবনে এক সভায় আমন্ত্রণ জানাতে যাচ্ছেন। ওই সভায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তারা সংলাপে অংশ নেবেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জির আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে রাষ্ট্রপতি ভবনে উঠবেন। চারদিনের এই সফরে প্রথমবারের মত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এই বিরল আতিথ্য গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কয়েক দফা বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। এসব বৈঠকে গঙ্গা ব্যারেজ নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে। এ ধরনের ব্যারেজ বাংলাদেশ নির্মাণের মধ্যে দিয়ে বর্ষা মৌসুমে পানি সংরক্ষণের পর শুকনো মৌসুমে তা ভারতে রফতানির সুযোগ পেলে অভিন্ন নদীর পানি বন্টন নিয়ে নতুন এক ব্যবস্থাপনা শুরু করা সম্ভব হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, উত্তর প্রদেশ ও উত্তরাখন্দে বিজেপি যে বিপুল নির্বাচনী বিজয় পেয়েছে এবং গোয়া ও মনিপুরে বিজেপি সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক প্রভাব ও শক্তিকে যেমন বৃদ্ধি করেছে একই সঙ্গে এধরনের বিজয়ে মমতা বন্দোপাধ্যায় কিছুটা শঙ্কিত হয়েছেন। পশ্চিমবাংলায় কংগ্রেস ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল মোদির বিজয়ে বেশ কিছুটা চিন্তিত। এর পাশাপাশি পশ্চিমবাংলায় বিজেপির শক্তি বৃদ্ধির সম্ভাবনা ও মোদির ইচ্ছা অনুযায়ি সারদা-নারদা কেলেঙ্কারী মামলা রুজুর বিষয়টি মমতার ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এদিক থেকে মমতা তিস্তা চুক্তিতে আগের মত আর অনমনীয় নাও হতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। সারদা-নারদা কেলেঙ্কারী মামলাটি এখন ভারতের সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের হাতে রয়েছে। এ মামলার সঙ্গে মমতার দলের অনেকেই জড়িত।

এর আগে বিভিন্ন সূত্র জানায়, নরেন্দ্র মোদি তিস্তা চুক্তি করার ব্যাপারে কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন যাতে মমতা এব্যাপারে উদার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসেন। শুধু তিস্তা নয় অন্যান্য অভিন্ন নদী নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে গ্রহণযোগ্য চুক্তি করতে মোদির সদিচ্ছায় কোনো ঘাটতি নেই।

দিল্লির উচ্চপর্যায়ের একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি করার বিষয়টি ভারতের তরফ থেকে দেওয়া একটি সার্বভৌম প্রতিশ্রুতি। সেদিক থেকে তিস্তা চুক্তি করার ব্যাপারে মমতা উদার হয়ে একটি সুযোগ নিতে পারেন। মমতা তা না করলে রাজনৈতিকভাবে একঘরে হয়ে পড়বেন এমন আশঙ্কাও রয়েছে।

গত ২৩ মার্চ এবিপি আনন্দ টেলিভিশনে মমতা বন্দোপাধ্যায় এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, শুনেছি তিস্তা চুক্তি হতে পারে, তবে এ নিয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি, পশ্চিমবাংলার স্বার্থ হানি করে তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে আমি কখনই রাজি হব না। তবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গোপাল বাগলে পরের দিন এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, তিস্তা নিয়ে মমতার বক্তব্যে কোনো মন্তব্য না করলেও এটুকু বলতে পারি কেন্দ্রীয় সরকার এব্যাপারে বেশ সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ নিয়ে আগাতে চাচ্ছে।

শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে তিস্তা চুক্তি না হলেও কয়েক মাসের মধ্যে মোদি সরকার তিস্তা চুক্তি করার ব্যাপারে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে পারে। দিল্লির কূটনৈতিকরা মোদির ওপর আস্থা রেখেই বলছেন, শেষ মুহুর্তেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী এব্যাপারে নাটকীয় কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে পারেন এবং তিনি তা করতে ভালবাসেন। পশ্চিমবাংলায় বিজেপি’র সাবেক সভাপতি ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী তথাগত রায় দিন কয়েক আগে বলেন, তিস্তা চুক্তি বাংলাদেশের অধিকার এবং ভাটির দেশকে এব্যাপারে সন্মান দেখানো উচিত। কূটনৈতিক সূত্রগুলো এমনও বলছে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত কুমার দোভাল বাংলাদেশের সঙ্গে পানির হিস্যায় নমনীয় হতে দেশটির শীর্ষ রাজনীতিক ও আমলাদের কাছে অনুরোধ রাখছেন। ডেইলি স্টার থেকে অনুবাদ ও কিছুটা পরিবর্তিত



মন্তব্য চালু নেই